সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য আর কাউকে সরাসরি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এনআইডি মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এনআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

মহাপরিচালক বলেন, আগে ব্যক্তির নাম ও জন্মতারিখ দেওয়ার পর চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এনআইডির তথ্যগুলো চলে যেত, এরপর তারা যাচাই করতেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তথ্য যাচাই অনলাইনের মাধ্যমে করে দেব। নাম ও জন্মতারিখ দেওয়ার পর ম্যাচ অথবা নো ম্যাচের মাধ্যমে তাদের এনআইডির তথ্য যাচাই করে দেব আমরা।

তিনি বলেন, তথ্য যাচাইয়ে আমাদের সিস্টেমে অনুরোধ পাঠাবে। এগুলোর মধ্যে আমরা কোনটি ভুল কোনটি সঠিক, তা বলে দেব। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারিশ অনুযায়ী আমরা ব্যক্তির ছবি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তির ছবিও দেখতে পাবেন। আমরা বলেছি, এটা দেওয়া সম্ভব।

এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশেষ অভিযোগের কারণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে আমরা এনআইডি সেবা চুক্তিটি বাতিল করেছি। পরে জানতে পারি অনলাইনে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি এনআইডি নিয়ে কাজ করে। আমাদের টেকনিক্যাল টিম এটি খুঁজতে শুরু করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনুমানের ভিত্তিতে আমাদের টিম যাওয়ার পর দেখতে পায়, সেখান থেকে তথ্য ফাঁস হচ্ছে। সেগুলো আমরা বন্ধ করেছি। এনআইডির তথ্য ফাঁস ঠেকাতে আমরা চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডেকেছি এবং তাদের মতামত গ্রহণ করে কীভাবে তথ্যগুলোকে আরও সুরক্ষিত রাখা যায় এ নিয়ে আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, তথ্য ফাঁস রোধে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা একটি টিম করে দেব। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও থাকবেন। ওনারা যে কোনো সময়, যে কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম চেক করতে পারবেন। যাতে ওই সিস্টেমের কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এনআইডির মহাপরিচালক আরও বলেন, যারাই এনআইডি সিস্টেম ব্যবহার করবে অথবা ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, ওই সব প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স আমরা নেব। এমনকি ওইসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালক এবং সিস্টেম পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও আমরা নেব। কোনো ভ্যান্ডর প্রতিষ্ঠান যেন দুর্বল সিস্টেম না চালায় এজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পরিষ্কার তথ্য আমাদের কাছে থাকবে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলে দেব কোন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সিস্টেমে থাকতে হবে।

 বিএইচ

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: এনআইড র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন মানুষ, কারণ কী

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখেন ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন; কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকেরা। অন্যদিকে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিক্রি হয়েছিল ৪১ হাজার ২৯০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। তার মানে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারেরা। তাঁরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না। সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না। এই আস্থাহীনতার কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন অনেক গ্রাহক। অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও স্থগিতের মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভেঙে ফেলার পরিমাণ বেশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙে মানুষ। তার মধ্যে অক্টোবরে ৯ হাজার ৮৩ কোটি, নভেম্বরে ৮ হাজার ১৫০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ৮ হাজার ৪৬১ কোটি অর্থাৎ তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন গ্রাহকেরা। এতে করে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে গেছে। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ার অর্থ হলো, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া কমছে। এতে সরকারকে সুদও কম গুনতে হবে। তবে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের জন্য সরকারকে এখনো বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে।

শুধু তা–ই নয়, সঞ্চয়কারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গত জানুয়ারিতে বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বেড়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। তার বিপরীতে গ্রাহকেরা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার। অর্থাৎ নিট বিক্রি ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কমেছে। তার মানে সরকার গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এক টাকাও পায়নি। নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৪ সালের জুন শেষে ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকায়।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রথম কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। মজুরি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে ব্যয় বাড়ছে। সে জন্য সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে মানুষকে। এ ছাড়া অনেক ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। সামগ্রিক ব্যাংক খাতে আস্থার ঘাটতির কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙার হার বাড়ছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যাংকে আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদহারের মধ্যে তফাৎ কমে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকে বিকল্প বিনিয়োগ পণ্যে অর্থ লগ্নি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। আবার সরকার পরিবর্তনের পর অনেক সম্পদশালীদের ব্যাংক হিসাব ও বিনিয়োগে নজরদারি বেড়েছে। সে কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সোনাসহ অন্যান্য বিকল্প পণ্যে বিনিয়োগ করছেন।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার প্রভাব কী জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার আর্থিক সংকটে আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ও আশানুরূপ হচ্ছে না। বৈদেশিক অর্থায়নও সেভাবে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে অর্থের জোগানের জন্য সঞ্চয়পত্র গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বাড়লে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থবছরের মাঝপথে এসে বাজেট কর্তন করতে হতে পারে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আরও কমতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন মানুষ, কারণ কী