শেয়ার কারসাজি, ২৮ বিওধারীকে ১.৮২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড
Published: 17th, February 2025 GMT
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীকে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা ২১টি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩টি বিও হিসাব এবং ৪ ব্যক্তির নামে ৫টি বিও হিসাব ব্যবহার করেছে।
২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়। ওই সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৮৭.
কারসাজিতে জড়িতরা ইমিনেন্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড এবং এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডে বিভিন্ন নামে একাধিক বিও হিসাব খুলে কোম্পানির শেয়ার সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন
পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট চান বিনিয়োগকারীরা
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকা ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের বিও হিসাবধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে-তোরামনসিরাত শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতিকে ২০ লাখ টাকা, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১৭ লাখ টাকা, মো. মাসুদুর রহমান শেখকে ১ লাখ টাকা, মহামায়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায়কে ১৬ লাখ টাকা, মহামায়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, মো. শাহজালাল আল সাফীকে ১ লাখ টাকা, চাঁদপুর শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, চাঁদপুর শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১৩ লাখ টাকা, শাহরাস্তি শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, দেব্রত সরকারকে ৩ লাখ টাকা, কচুয়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিকে ৯ লাখ টাকা, পাটোয়ারি বাজার শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, পাটোয়ারি বাজার শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ঋণদান সমবায়কে ৪ লাখ টাকা, ওয়্যারলেস বাজার শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিকে ১ লাখ টাকা, নয়াহাট শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১১ লাখ টাকা, ফরিদগঞ্জ শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ৪ লাখ টাকা, গৃদকালিন্দিয়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, মো. জসিম উদ্দিনকে ১ লাখ টাকা, জে. এস এন্টারপ্রাইসকে ১১ লাখ টাকা, এসবি আমাদের পণ্য আমাদের বাজার লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা, এসবিসিএল হাউজিং লিমিটেডকে ১৯ লাখ টাকা, শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ৫ লাখ লাখ টাকা, চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী কেন্দ্রীয় সমিতিকে ২৯ লাখ টাকা এবং চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
এদিকে এসব বিও হিসাবের মধ্যে বাগরা শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড, মো. মাসুদুর রহমান শেখ এবং কচুয়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নামে পৃথক ২টি করে বিও হিসাব রয়েছে।
শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
শেয়ার কারসাজিতে জড়িত মধ্যে মো. জসিম উদ্দিন চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান ও শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এছাড়া দেবব্রত সরকার চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমূখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আর মো. মাসুদুর রহমান শেখ ও মো. শাহজালাল আল সাফী চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির বেশ কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে বিও হিসাব খুলে কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে সহযোগিতা করা হয়। এর মধ্যে এসবিসিএল আমাদের পণ্য আমাদের বাজার লিমিটেড, এসবিসিএল হাউজিং লিমিটেড ও শিক্ষিত বেকার কো-অপারেটিভ লিমিটেড।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বিনিয়োগকারী মো. জসিম উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগিরা ২০২১ সালের ২৮ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ আড়াই মাসে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। তার আগে ওই বছরের অক্টোবরে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. জসিম উদ্দিনকে ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। তার আগে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজির অভিযোগে মো. জসিম উদ্দিনকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
মো. জসিম উদ্দিন, দেব্রত সরকার, মো. মাসুদুর রহমান শেখ, মো. শাহজালাল আল সাফী এবং তার সহযোগীদের একটি গোষ্ঠি ২৮টি বিও হিসাব ব্যবহার করে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিজেদের মধ্যে সিরিজ লেনদেন করে মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। কাসজাজিকারীরা ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত সময়ে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ১৫.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৯.১০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ারের দাম ১৩.৬০ টাকা বা ৮৭.৭৪ শতাংশ বাড়ে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত উল্লিখিত আইন ও তার অধীন জারিকৃত বিধি-বিধান পরিপালনে বিও হিসাবধারীদের ব্যর্থতা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেহেতু, কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে উল্লিখিত ব্যর্থতার জন্য, তথা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পাশাপাশি বাজারের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে জসীম উদ্দিন, দেবব্রত সরকার, মো. মাসুদুর রহমান শেখ, মো. শাহজালাল আল সাফী এবং তার সহযোহিদের জরিমানা করা প্রয়োজন ও সমীচীন। কমিশন উল্লিখিত যাবতীয় বিষয় বিবেচনাপূর্বক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) এবং ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘন করা জন্য সেকশন ২২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উক্ত বিও হিসাধারীদের জরিমানা ধার্য করলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এটা অনেক পুরোনো বিষয়। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে কোনো লেনদেন করা বা আইন লঙ্ঘন করিনি বলে বিএসইসিকে জানিয়েছি। কেন আমাকেই বারবার বিএসইসি জরিমানা করছে তা বুঝতে পারছি না। ওই সময় তো সবাই ব্যবসা করেছে। তাদেরকে তো বিএসইসি ধরছে না। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মো. শাহজালাল আল সাফী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। তাই কিছুই বলতে পারছি না।”
চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান শেখ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিএসইসির জরিমানা করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে পরে আপনার সঙ্গে কথা বলব।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স এসই ড এসই ম স দ র রহম ন শ খ ব এসইস র ত র সহয র পর চ আম দ র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালু করবে বিএসইসি
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সংবাদ নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি ‘সংবাদ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ সেবা’ বা ‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালুর পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে সংস্থাটি উপযুক্ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করেছে।
আন্তর্জাতিক সিকিউরিটিজ কমিশনের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) ‘এ’ ক্যাটাগরির সদস্য হিসেবে বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যমের সংবাদ পর্যবেক্ষণ করবে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্য মতে, কমিশন এমন একটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করেছে, যারা দেশের জাতীয় পর্যায়ের প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যম থেকে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ ও সরবরাহ করতে পারবে।
তথ্যগুলো নির্ধারিত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে ইমেইল ও একটি পোর্টাল ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে, এবং প্রয়োজনে ভিডিও ক্লিপও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
সংবাদগুলো সাধারণ এবং নেতিবাচক প্রতিবেদনে বিভক্ত থাকতে হবে, যেখানে নেতিবাচক প্রতিবেদনে আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে, যেমন অর্থপাচার প্রতিরোধ (এএমএল), সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি), সিকিউরিটিজ আইন বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নীতিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা ইত্যাদি।
বিএসইসি মনে করে, এই পর্যবেক্ষণ সেবাটি ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান বজায় রাখা সম্ভব হবে।
বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতিদিন গণমাধ্যমে বাজারসংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা বিনিয়োগকারী এবং সামগ্রিক বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া সংবাদ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। একটি ‘সংবাদ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ সেবা’ বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে এবং গণমাধ্যমে বাজার সংক্রান্ত গুজবের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে, যা তথ্যের প্রবাহকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।
সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে হবে।
ঢাকা/এনটি/ইভা