১০ বছর পর সনদ পাচ্ছেন রাবি শিক্ষার্থী রফিকুল
Published: 17th, February 2025 GMT
শিবির সন্দেহ ও বিভাগের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে মাস্টার্সের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে এনে ছাত্রত্ব বাতিল করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের। ফলে প্রায় ১০ বছরেও প্রকাশ করা হয়নি রফিকুলের মাস্টার্সের ফলাফল।
গত বছর ৫ নভেম্বর শিবির সন্দেহে রফিকুল ইসলাম মাস্টার্সের সনদ না পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড.
ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও তার পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদার।
এদিকে, এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিভাগের তিন শিক্ষক ড. আব্দুল হক, ড. আলী আকবর ও ড. আশরাফুজ্জামান খানকে আগামী ৫ বছর পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে।
ছাত্রত্ব ফিরে পেয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন,“ শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আলী রায়হান, শাকিল, আহনাফদের রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ ১০ বছর ৬ মাস ধরে বয়ে বেড়ানো জুলুমের পাহাড় আজ বুক থেকে নেমে গেল, আলহামদুলিল্লাহ। এত দীর্ঘ সময় পর আমার ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ায় রাবি প্রশাসনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
তিনি বলেন, “যদিও আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো কখনোই ফিরে আসবে না, তবুও প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে মাস্টার্সের ফলাফল ফিরে পাওয়াটা আমার জন্য পরম আনন্দের। এ আনন্দের গভীরতা ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সত্যিই অসম্ভব। শিক্ষকদের দ্বন্দে আর কোন ছাত্রের জীবনে এমন অমানিশার অন্ধকার আর নেমে না আসুক, এ আমার প্রত্যশা।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক বলেন, “সংশ্লিষ্ট সবার মৌখিক ও লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এবং সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে রিভিউ তদন্তের কাজ শেষ করা হয়। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন খান বলেন, “রফিকুল বিভাগের ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট ছিলেন। শিক্ষক নিয়োগে যেন আবেদন করতে না পারেন, সেজন্য থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। যার কোন সত্যতাই ছিলো না।”
তিনি বলেন, “এ নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়মঅনুযায়ী রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।”
মাস্টার্সের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে এনে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬১তম সিন্ডিকেটের ১৩৭ নং সিদ্ধান্তে মাস্টার্সের রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের মাধ্যমে রফিকুলের ছাত্রত্ব বাতিল করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম র ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
আবু তালহার ইসলাম গ্রহণ
উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা.) একজন বুদ্ধিমতী নারী সাহাবি। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী আনসারদের মধ্যে অন্যতম এবং খ্যাতিমান সাহাবি আনাস ইবনে মালিকের (রা.) মা। আনাসের বাবা মালিক ছিলেন উম্মে সুলাইমের মুসলিম হওয়ার আগের স্বামী। উম্মে সুলাইম ও আনাস ইসলাম গ্রহণ করলে স্বামী ক্ষোভে স্ত্রী-পুত্র ত্যাগ করে চলে যান। বিধবা হয়ে পড়েন উম্মে সুলাইম (রা.)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘একবার স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করি। হঠাৎ আমার সামনে কারও জুতার আওয়াজ শুনতে পাই। আমি ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম, কে? তারা বললেন, আনাস ইবনে মালিকের মা উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫৬)
শিশু পুত্র আনাসকে নিয়ে কাটছিল তার দিন। উম্মে সুলাইম (রা.) ঠিক করলেন, আনাস বড় না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিয়ে করবেন না। আনাস যখন তার মায়ের বিয়েতে মত দেবে তখনই তিনি বিয়ে করবেন। একসময় আনাস উপযুক্ত বয়সে উপনীত হন।
আরও পড়ুনজীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)১৩ মার্চ ২০২৫সে সময় আবু তালহা আল আনসারি নামে এক লোক উম্মে সুলাইমকে পছন্দ করে এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আবু তালহা মুসলিম ছিলেন না। তাই তিনি বিয়েতে অমত করলেন। আবু তালহা বললেন, ‘তুমি অর্থকড়ি চাও? আমি তোমাকে মূল্যবান সবকিছুর বিনিময়ে বিয়ে করতে চাই।’ উন্মু সুলাইম (রা.) বললেন, ‘না, আমি তোমার মধ্যে ইসলাম চাই।’
অবশেষে আবু তালহা ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। উম্মে সুলাইমের (রা.)-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং বিয়ের মোহর হয় ‘আবু তালহার ইসলাম গ্রহণ’। সাবিত (রা.) বলেছেন, উম্মে সুলাইমের বিয়ের মোহরের চেয়ে উত্তম মোহরের কথা আমরা আর শুনিনি। আবু তালহার ইসলাম গ্রহণের যুগপৎ এই সিদ্ধান্ত ও তাঁদের বিয়ে আরবে সেসময় বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। বলা হয়, ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল বিয়েতে সবচেয়ে মূল্যবান মোহর।
উম্মে সুলাইম (রা.) যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শরিক হয়েছিলেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি আয়েশা (রা.) ও আমার মা উম্মে সুলাইমকে যুদ্ধের দিন মশক ভরে পানি এনে আহতদের পানি পান করাতে দেখেছি। মশক খালি হয়ে গেলে তারা আবার ভরে এনে পান করিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, ২/৫৮১)
আরও পড়ুন ধৈর্য কাকে বলে১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫