প্রেসক্লাবে তালা দেওয়ার অভিযোগে সেই শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা
Published: 17th, February 2025 GMT
ফরিদপুরের সালথা প্রেসক্লাবে তালা দেওয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের ‘বিতর্কিত’ সেই নেতা মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে।
রোববার রাতে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন সালথা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম নাহিদ। রাতেই এহাজারটি মামলা হিসেবে রুজু করে নেওয়া হয়। মামলায় টুটু চৌধুরী ছাড়াও এফএম শাহজাহান নামে এক ‘ভুয়া’ সাংবাদিকসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রধান আসামি সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী সালথা প্রেসক্লাবের সদস্য থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময় মারধর ও হুমকি দিয়ে আসছিল। এমনকি সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেলিম মোল্যার ওপরও তিনি হামলা করেন। এছাড়া টুটু চৌধুরী ও শাহজাহানসহ অন্যান্য আসামিরা সালথা প্রেসক্লাবের সদস্যদের পেশাগত কাজে বাধা সৃষ্টি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে চাঁদাবাজি করায় ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর টুটু চৌধুরীর সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে তাকে বহিষ্কারর করা হয়।
এরই ধারবাহিকতায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টুটু চৌধুরী ও তার সহযোগিরা দেশীয় অস্ত্র রামদা, ছ্যান, লোহার রড ও হাতুড়ি নিয়ে বেআইনিভাবে সালথা প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে সহসভাপতি মনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সদস্য আবু নাসের হুসাইন, দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন ও সদস্য আজিজ হোসেনকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে প্রেসক্লাব থেকে জোর করে বের করে দেয়। এ সময় প্রেসক্লাবের আসবাবপত্র ও কম্পিউটার ভাঙচুর করে তারা। পরে প্রেসক্লাবের মেইন গেটে তালা মেরে দিয়ে চলে যায়।
মামলার বাদী সালথা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শ্রমিক লীগ নেতা টুটু চৌধুরীর একটা সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। যে কারণে আমরা অনেক সময় তার ভয়ে মুখ খুলি না। তবে প্রেসক্লাবে তালা দেওয়ার পর আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা আইনি সহযোগিতা নিতে মামলা করেছি। প্রেসক্লাব উদ্ধারে আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
মামলার পর থেকে সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হন সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন। এমন অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন ফন্দি-কৌশল করে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরী সালথা উপজেলা প্রেসক্লাব নামে নতুন একটি গঠন দাড় করিয়েছেন। ওই প্রেসক্লাবের সভাপতি হয়েছেন টুটু চৌধুরী নিজে এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম। স্থানীয়রা মনে করছেন টুটু চৌধুরী নতুন প্রেসক্লাবের সভাপতি হয়েছেন গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য।
অন্যদিকে গত রোববার দুপুরে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. শাহিন মাতুব্বরে ভাতিজা পিয়াল মাতুব্বরকে (২৫) কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জখম করে শ্রমিক লীগ নেতা মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীর ভাতিজা মাদকাসক্ত মো. বাহার চৌধুরী। পরে উত্তেজিত জনতা শ্রমিক লীগ নেতা টুটু চৌধুরী বাড়ি ও তার ভাই লুলু চৌধুরীর দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম উপজ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বকশীগঞ্জে বিএনপির সম্মেলনে যুবলীগ নেতার উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মাঠে যুবলীগ নেতা উপস্থিত থাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জনপরিসরে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ওই ঘটনাটি ঘটে। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে।
যুবলীগের ওই নেতার নাম নজরুল ইসলাম সওদাগর। তিনি বকশীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র। তিনি এক সময় যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
তবে সম্মেলনের মাঠে উপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর।
স্থানীয়রা জানায়, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম সওদাগর এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ২০১৫ সালের ১২ জুন উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি তৎকালীন স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরবর্তীতে পৌর যুবলীগের পদ পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপির সাবেক নেতা জানান, বেলা দুইটার দিকে বিএনপির সম্মেলন মাঠে প্রবেশ করেন যুবলীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর। সম্মেলনস্থলের একেবারে পশ্চিম পাশে পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে থেকে বক্তব্য শোনেন তিনি। বিএনপির সম্মেলনে যুবলীগ নেতার উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে, উপস্থিত লোকজনের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে সামিয়ানার বাইরে চলে যান নজরুল ইসলাম সওদাগর।
বিএনপির সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর বলেন, ঘরের সাথেই সম্মেলনের মাঠ। ঘর থেকে বের হলেই সব দেখা যায়। মাঠে গিয়ে সম্মেলনের বক্তব্য শোনার কি আছে। তাছাড়া বিএনপির নেতাকর্মী যারা আছেন তারা জানেন দুঃসময়ে আমি তাদের জন্য কি করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মানিক সওদাগর বলেন, নজরুল ইসলাম সওদাগর তার ছোট ভাই। বিএনপির সম্মেলনে তিনি আসেন নি। সম্মেলনের মাঠ আর আমার বাসা একসাথে। তিনি হয়তো বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, তবে আমি দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, নজরুল ইসলাম সওদাগর যুবদলের নেতা ছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা হামলা থেকে বাঁচাতে যুবলীগে গিয়েছিলেন। তিনি যুবলীগ করার কারণে বিগতে সময়ে বকশীগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। মেয়র থাকাকালীন বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশি লাভবান হয়েছেন। যখন বিএনপি মাঠে দাঁড়াতে পারেনি তখন নজরুল ইসলাম সওদাগর সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম সওদাগরের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় কোনো মামলা নেই। তদন্তে যদি তার নাম আসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।