আজহার আলী ও সিরাজুল ইসলাম পেশায় দিনমজুর। বাড়ি লালমনিহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের তাজপুরে। দুজনেরই বয়স সত্তরোর্ধ্ব। তাঁরা এসেছেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনে।

রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর নিচে আজ সোমবার অবস্থান কর্মসূচির মূল পয়েন্ট। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে আজহার আলী ও সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা দুজন বললেন, তিস্তার ভাঙনে তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। নদীর ভাঙনে দুই বার বসতভিটা হারিয়েছেন। জমিজিরাত হারিয়ে এখন‌ দিনমজুর। অন্তত তিস্তার ভাঙন বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটাই তাঁদের দাবি।

আজহার ও সিরাজুলের মতো তিস্তাপারের হাজারো মানুষ দুই দিনব্যাপী অবস্থান‌ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। তিস্তার পানির নায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি আজ দুপুরে শুরু হয়েছে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যানারে তিস্তা নদীবেষ্টিত উত্তরের ৫ জেলায় নদীর ১১টি স্থানে একত্রে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে স্লোগানে আজ বেলা ৩টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংগীত ও থিম সংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিনের কর্মসূচিতে ঘুড়ি ওড়ানো, বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য, নাটক মঞ্চায়ন, ভাওয়াইয়া, পালাগান, জারিগানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

আজ বেলা ১১টার দিকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা সড়কসেতু ও রেলসেতুর মধ্যে বালুচরে মূল কর্মসূচি মঞ্চ করা হয়েছে। হেঁটে, ভ্যানে, রিকশায়, বাসে ও নৌকায় করে লোকজন অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসছেন। অবস্থান কর্মসূচি উপলক্ষে লালমনিরহাট সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য আলাদা আলাদা করে প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্রতিটি প্যান্ডেলের পাশে রান্নাবান্না চলছে। বিএনপি নেতা–কর্মীরা তিস্তা জাগো তিস্তা বাঁচাই স্লোগান দিচ্ছেন।

আজ বেলা ৩টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংগীত ও থিম সংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উপস্থিত ছিলেন।

সড়ক ও রেলসেতুর পশ্চিম পাশে কাউনিয়া পয়েন্টে ও প্যান্ডেল করে রাখা হয়েছে সেখানেও কাউনিয়াসহ আশেপাশের লোকজন উপস্থিত হয়েছেন।

রহমত আলী (৭০) এসেছেন লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ থেকে। তাঁর দাবি তিস্তার নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার। তিনি বলেন, ‘নদীর পারত থাকি। বর্ষাকালে ঘুম হয় না। কোন বেলা নদী ভাঙ্গি নিয়া যায়। হামাক নদীকোনা বান্দি দেও। হামাক কাজ দেও।’

তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু)। এ আন্দোলনে যোগ দিতে তিস্তাপাড়ে আসছেন বিএনপির শীর্ষ ১৪ নেতা। লালমনিরহাটের দুই পয়েন্টে থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উলিপুরের থেতরাই পয়েন্টে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজারহাটের সরিষাবাড়ি পয়েন্টে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, গঙ্গাচড়ার মহিপুর ব্রিজ পয়েন্টে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও মেজর (অব.

) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ (বুলু)।

আরও পড়ুনতিস্তা নদী ঘিরে বিএনপির কর্মসূচির আগে শুষ্ক মৌসুমেও বাড়ছে পানি ২০ ঘণ্টা আগেআগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিস্তা ব্রিজ থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত গণপদযাত্রা, তিস্তার পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও সংগীত পরিবেশন করা হবে। সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন।

এ ছাড়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন; ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু), উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল), যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) অন্য পয়েন্টগুলোয় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেবেন। আরও বক্তব্য দেবেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান (মান্না), গণসংহতির জোনায়েদ সাকি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক প্রমুখ।

আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিস্তা ব্রিজ থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত গণপদযাত্রা, তিস্তার পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও সংগীত পরিবেশন করা হবে। সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া তথ্যচিত্র ও সিনেমা প্রদর্শন করা হবে।

আরও পড়ুনপ্রধান দাবি, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও নদীভাঙন রোধ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তিস্তা নিয়ে সেমিনার

এদিকে অবস্থান কর্মসূচির মূল মঞ্চের পাশে তিস্তার প্লাবনভূমিতে আজ দুপুরে ‘তিস্তার পানি সংকটের কারণে সৃষ্ট বহুমাত্রিক দারিদ্র্য ও উচ্চ বেকারত্ব নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আসাদুল হাবিব। প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন।

আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তা নদীকে ঘিরে পাওয়ার চায়না একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। প্রস্তাবে বাস্তুসংস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না, এ অঞ্চলের মানুষের পেশা‌কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না, বিশেষ করে কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না, জেলেদের জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না প্রভৃতি বিষয় দেখা হচ্ছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হোটেল-মোটেল তৈরির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করবে, নাকি তিস্তাকে ঘিরে দেড় কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, এগুলো দেখার বিষয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় ব এনপ র উপস থ ত ল ইসল ম অন ষ ঠ কম ট র ব যবস ল লমন

এছাড়াও পড়ুন:

শালিসের কথা বলে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

ঝিনাইদহের মহেশপুরের জীবননগর পাড়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আবু জাফর (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শালিসের কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। 

নিহত আবু জাফর কাজীরবেড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী ও জীবননগর পাড়ার জাবেদ আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আলমগীর হোসেন ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার দুপুরে মহেশপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।

নিহতের ছেলে আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রামের মাঠে আমাদের এক বিঘা জমি ছিল। পাশেই আব্বাস আলীর মেহগনি বাগান ছিল। সেই জমি ১৬ বছর আগে মাপামাপি হলে একটি গাছ আমাদের ভাগে পড়ে। এই গাছ ওদের কেটে নিতে বলেছিল আমার বাবা। তারা সেই গাছ না কাটলে ফসলের ক্ষতির শঙ্কায় তখন আমার বাবা সেই গাছটি কেটে ফেলে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন পরিস্থিতি অশান্ত ছিল। আমার বাবা টাকা দিতেও চেয়েছিল অনেকবার। পরে গতরাতে গ্রামের একটি বিষয়ে শালিস হবে বলে দুইজন ব্যক্তি বাবাকে ডেকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী আমিরের বাড়িতে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একপর্যায়ে আব্বাস আলীর লোকজন মারপিট করলে আমার বাবা ঘটনাস্থলেই মারা যায়।  

ঘটনার বিষয়ে মহেশপুরের ভৈরবা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আনিসুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক কোনো বিরোধ ছিল না এটা। মূলত জমি নিয়ে ও গাছ কাটা নিয়ে বিরোধের জেরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। আমরা আসামি ধরতে অভিযান চালাচ্ছি।

এ ঘটনায় আবু জাফরের মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব বলেন, নিহতের শরীরের বাইরের অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এর বেশি বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না তদন্তের স্বার্থে।

এদিকে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে সামন্তা বাজারে মহেশপুর উপজেলা বিএনপি পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল। তারা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনা খুবই ‘গণতান্ত্রিক’, বললেন বিএনপি নেতা
  • টেঁটাবিদ্ধ করে মেছোবিড়াল হত্যা, অভিযুক্ত যুবক আটক
  • শালিসের কথা বলে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ