প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে ঘিরে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে জাতির আবেগ এবং উৎসবের যে পরিবেশ তৈরি হয়, তা নিঃসন্দেহে আমাদের ভাষাপ্রেমের এক বিশেষ বহিঃপ্রকাশ। এই মাস আমাদের ইতিহাসে একটি গভীর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, আর সেটা হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে অকুতভয় তরুণেরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল। এই রক্তস্নাত সংগ্রাম শুধু ভাষার অধিকারের প্রশ্নই নয়, বরং আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রাথমিক সোপান হিসেবেও কাজ করেছিল। এই ভাষা আন্দোলন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভাষার জন্য পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগ কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি রচনার সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তিও। কিন্তু সময়ের আবর্তে একটি গভীর প্রশ্নও উঁকি মারে মনে, আমরা কি সত্যিই ভাষা আন্দোলনের চেতনার প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পেরেছি? এই প্রশ্নটি শুধু ভাষাশহীদদের স্মরণে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাষ্ট্রীয় অবস্থানে ভাষা আন্দোলনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য প্রতিফলনের আহ্বান জানায়।
ফেব্রুয়ারি এলে আমরা বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার যে প্রকাশ ঘটাই, তা কি কেবল আনুষ্ঠানিকতা ও স্মারক অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি এ ভালোবাসার প্রতিফলন আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণে দৃশ্যমান? দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর ভাষানীতি প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছি। এর ফলে বাংলা ভাষা আজও শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচারিক কার্যক্রম এবং প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোয় প্রাপ্য মর্যাদা লাভে সক্ষম হয়নি। জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষার অবস্থানকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর সংযোগ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। ভাষানীতির অনুপস্থিতি শুধু ভাষার ব্যবহারকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ করে রাখেনি, এটি আমাদের জাতীয় পরিচয় এবং স্বকীয়তার শিকড়েও আঘাত হেনেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বাংলার প্রয়োগ অত্যন্ত সীমিত, যা জ্ঞানের প্রসারে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। প্রশাসনিক ও বিচারিক কর্মকাণ্ডে বাংলা এখনো প্রান্তিক যা ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ভাষার এই উপেক্ষা শুধু একটি নীতিগত ব্যর্থতা নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় সত্তার ওপর গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে।
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা না দেওয়ার কারণ কী? স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম দশকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অগ্রগতি থমকে গেছে। একদিকে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও অপরদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের ফলে ইংরেজি ভাষার প্রতি প্রবল ঝোঁক দেখা দিয়েছে, যা বাংলা ভাষার অবস্থানকে ক্রমশ পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন এক মিশ্র ভাষার প্রবণতা যাকে অনেকেই ‘ডিজুস ভাষা’ এবং ‘বাংলিশ’ বলে থাকেন। এ সংমিশ্রণ একদিকে ভাষার সহজাত সৌন্দর্য এবং বিশুদ্ধতা ক্ষুণ্ন করছে, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক বিকৃতি তৈরি করছে। বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষার প্রাধান্য সুনিশ্চিত করার কথা বলা হলেও, এর বাস্তবায়ন আজও অপূর্ণ। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ইংরেজির অগ্রাধিকার এবং বাংলার প্রতি উদাসীনতা আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে। ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত গবেষণায় বাংলা ভাষার অনুপস্থিতি প্রমাণ করে যে আমরা এখনও ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আত্মবিশ্বাসী হতে পারিনি। এই সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাংস্কৃতিক ও মনোস্তাত্ত্বিক উপনিবেশবাদ। দুই শত বছরের মতো ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও চিন্তাভাবনায় এবং জীবনদর্শনে যে প্রভাব পড়েছিল, স্বাধীনতার পরও আমরা সেই প্রবণতা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। ইংরেজির প্রতি এই পক্ষপাতিত্ব ও নির্ভরশীলতা একটি মানসিক শৃঙ্খল হিসেবে কাজ করছে, যা বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের পথে প্রধান অন্তরায়।
জাতীয় ভাষানীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নিজেদের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তারা শুধু আইন প্রণয়নই করেনি, বরং সেগুলোর কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফ্রান্স তাদের মাতৃভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালে ‘টোবন আইন’ (টোবন ল) প্রণয়ন করে, যা সরকারি নথি, বিজ্ঞাপন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় ফরাসি ভাষার বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল তাদের ভাষার সুরক্ষা নয়, বরং জাতীয় পরিচয়, ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। আরও বিস্ময়কর উদাহরণ হলো হিব্রু ভাষার পুনর্জাগরণ। একসময়ের প্রায় মৃত ভাষা হিসেবে চিহ্নিত হিব্রু, ইহুদিদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটি সম্ভব হয়েছে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং হিব্রু ভাষাকে জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। মৃতপ্রায় হিব্রুর পুনর্জীবন প্রমাণ করে যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা একটি ভাষার ভাগ্যকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু আমরা, যারা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য রক্ত দিয়েছি, সেই গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরাধিকারী হয়ে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে সঠিকভাবে জাতীয় জীবনের কেন্দ্রে স্থাপন করতে পারিনি।
ভাষা একটি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং স্বকীয়তার ধারক ও বাহক। তাই যেকোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সুস্পষ্ট ভাষানীতি অপরিহার্য। ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি একটি জাতির চিন্তা-চেতনা, সৃজনশীলতা, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখায় মাতৃভাষার ব্যবহারের ওপর বারবার জোর দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘স্বভাষায় শিক্ষার মূলভিত্তি স্থাপন করিয়াই দেশের স্থায়ী উন্নতি’, এই সত্যকে প্রতিফলিত করে যে শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি কেবল জ্ঞান অর্জন করে না, বরং আত্মপরিচয়ের শিকড়কেও দৃঢ় করে। আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলোও দেখায় যে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা ব্যবহৃত হলে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনে অধিক সক্ষম হয়। তাই ইউনেসকো বহুবার উল্লেখ করেছে যে প্রাথমিক শিক্ষা মাতৃভাষায় দেওয়া হলে শিশুরা নিজেদের ভাষায় চিন্তা করতে শিখে, যা তাদের সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে। অথচ আমাদের ভাষার মর্যাদা এখনো জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী স্তরে অবহেলিত। এমনকি উচ্চশিক্ষা, প্রশাসন, বিচারিক কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলার স্থান নিশ্চিত করার ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এই তুলনাগুলো আমাদের জন্য এক গভীর আত্মসমীক্ষার আহ্বান। ফরাসি ও ইহুদিদের মতো জাতিগুলো তাদের ভাষাকে কেবল একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং জাতীয় চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। অথচ আমরা, যারা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি, কেন এখনো এ লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে আছি?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিশ্চিতে সুস্পষ্ট ভাষানীতি অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো বাংলা ভাষার প্রাধান্য সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলার সীমিত প্রয়োগ আমাদের জ্ঞানভান্ডারকে শুধু সংকুচিতই করছে না, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাও সৃষ্টি করছে। রবীন্দ্রনাথের তত্ত্ব আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—যে জাতি মাতৃভাষার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার নীতি গড়ে তুলতে পারে, সেই জাতিই কেবল টেকসই উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারে। তাই বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যমে এবং প্রশাসনিক স্তরে আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা আজ সময়ের দাবি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ ব্যবহার, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত, তা নিয়ে কিছু সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা এখানে তুলে ধরা হলো—
১.
শিক্ষা ও প্রশাসনের সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাংলার বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপটি হবে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। বিচার বিভাগে বাংলা ভাষার কার্যকর প্রয়োগ আরও জোরদার করতে হবে, যেন আইন ও বিচারব্যবস্থার সব দিক সাধারণ মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য ও সহজবোধ্য হয়।
২.
রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগে আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে, যা শিক্ষা, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচারিক কার্যক্রম এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলার প্রয়োগ বাধ্যতামূলক করবে। এই আইন শুধু নির্দেশনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তার কার্যকর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি পৃথক সংস্থাও গঠন করা যেতে পারে।
৩.
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাষাকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক পরিচয়ের পুনরুজ্জীবন করতে হবে। বাংলাদেশী জাতীয়তার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের পাশাপাশি বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের স্বকীয়তাকে পুনরুজ্জীবিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম, সাহিত্য, সংগীত, এবং চলচ্চিত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল পাটাতনে বাংলা ভাষার সৃজনশীল ব্যবহারে উৎসাহ দিতে নীতিগত সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।
৪.
গবেষণা ও প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতে হবে যাতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে ভাষার সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়। বাংলা ভাষার ব্যাপক ব্যবহার ও উন্নয়নে গবেষণা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাংলায় গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা জরুরি, যা শুধু জ্ঞানার্জন নয়, ভাষার গভীরতর প্রসারেও সহায়ক হবে। বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং যান্ত্রিক শিখন (মেশিন লার্নিং) প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর সেই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাষা ইনস্টিটিউটগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার একটি জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
বায়ান্নের একুশের ভাষা আন্দোলনের চেতনা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসের আবেগ এবং আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এটি আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির একটি সার্বজনীন এবং টেকসই ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা কেবল ভাষার অধিকারে সীমিত নয়; এটি আমাদের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা, সংস্কৃতি এবং জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তাই আমাদের রক্তঝরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস শুধু জাতীয় গৌরবগাথা নয়; এটি একটি বিশেষ দায়িত্বেরও ইঙ্গিতবহ। সেই দায়িত্ব হলো বাংলাকে শিক্ষা, প্রশাসন, প্রযুক্তি এবং প্রাত্যহিক সাংস্কৃতিক পরিসরে তার প্রকৃত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই গৌরবময় ইতিহাসকে শুধু স্মরণই না করে, বরং তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহারকে আরও সমৃদ্ধ ও প্রসারিত করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং এর যথাযথ সংরক্ষণ কেবল রাষ্ট্রের একার দায়িত্ব নয়; আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তা সম্ভব হবে। তাই আসুন, আমরা সকলে মিলে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিই, যেন বাংলা ভাষা কেবল আমাদের অতীতের অহংকার বা স্মৃতিকাতরতা না হয়ে রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে ভবিষ্যতের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও ঐক্যের ভিত্তি হয়ে ওঠে।
* লেকক: মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ষ র ব যবহ র র ষ ট র য় পর স ক ত ক পর য় পর য য় আম দ র জ আম দ র স পদক ষ প ব যবস থ ক র যকর প রজন ম র জন য ক জ কর র একট ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। জনগণের ভোটে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে পুনর্গঠন করা হবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিএনপিই একমাত্র দল যেটি নিজ দলের দোষী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না।
বিএইচ