সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

খাদ্য এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ঈদুল ফিতরের সময় এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল উপহার দেয়া হবে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ঈদের সময় এক কোটি পরিবার ১০ কেজি করে চাল পাবে একদম ফ্রি (বিনামূল্যে)। এমন আরও কিছু কার্যক্রম রয়েছে। এসব চাল বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে বড় সহায়তা করবে। এসব বিতরণ কার্যক্রম বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ করবে। কিন্তু এর প্রধান তদারকি করবেন ডিসিরা।

উপদেষ্টা বলেন, আগামী মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাসে প্রায় সাত লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে দেড় লাখ টন করে দুই মাসে তিন লাখ টন চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বিতরণ করা হবে। ৫০ লাখ পরিবার প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে পাবে। টিসিবির মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ টন করে দুই মাসে এক লাখ টন চাল যাবে। ওএমএসের মাধ্যমে যাবে আরও এক লাখ টন।

দেশের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি ভালো নির্বাচন হয়েছে এবং যে কয়টি সমালোচিত নির্বাচন হয়েছে তা-ও প্রশাসন করেছে। তাদের যেভাবে ব্যবহার করা হয়, সেভাবেই হয়। আসন্ন নির্বাচনে প্রশাসনকে ভালোভাবেই ব্যবহার করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ দুই মন্ত্রণালয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এম জি

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট পর ব র ল খ টন

এছাড়াও পড়ুন:

যক্ষ্মার নতুন ঝুঁকিতে দেশ

যক্ষ্মা নির্মূলে গত দুই দশক ধরে অন্যান্য দাতা সংস্থার মতো বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা করেছে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বন্ধ হয়ে গেছে ইউএসএইডের অর্থায়ন। ফলে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বেসরকারিভাবে পরিচালিত রোগ শনাক্তকরণ, গবেষণা ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড। হাসপাতালে মিলছে না ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার সেবা। এতে যক্ষ্মার নতুন ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনও শনাক্তের বাইরে ১৭ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী। এ রোগীরা অজান্তেই যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত ছড়াতে সহায়তা করবে এবং যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বন্ধের কারণে নতুন রোগী শনাক্ত কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এতে যক্ষ্মা নিয়ে নতুন করে সংকটে পড়তে পারে দেশ। এ জন্য এখনই স্থগিত কার্যক্রম সচল করতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্য উৎস থেকে সহায়তা পেতে  নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। রোগটির ক্ষতিকর দিক, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। দিনটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়া’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত বছর বিশ্বে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে ১০ শতাংশই শিশু। ২০২৩ সালে যক্ষ্মায় বিশ্বের ৪৪ হাজার মানুষ মারা গেছে। এখনও ১৭ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে। ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শনাক্তের বাইরে থাকা রোগীদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। 

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রম স্থগিত
যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছয় মাস নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়মিত এবং পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ না খেলে যক্ষ্মার জীবাণু ওই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের অবহেলা ও অসচেতনতায় এই ওষুধ প্রতিরোধী  যক্ষ্মা বা এমডিআর টিবি বাড়ছে। যাদের একটা বড় অংশই মারা যান। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী কমাতে রাজধানীসহ দেশে সাত বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আলাদা চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হতো। এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন হতো ইউএসএইডের অর্থায়নে। 
২০২১ সালে ইউএসএইডের সহায়তায় রাজধানীর শ্যামলীতে দেশের প্রথম ওয়ানস্টপ যক্ষ্মা (টিবি) নামে এই সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। একজন চিকিৎসক দিয়ে এ সেবা নিশ্চিত করা হতো। গত জানুয়ারিতে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে ওই চিকিৎসককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান শ্যামলী টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে ওয়ানস্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার যক্ষ্মা রোগীদের জন্য সেবা চলমান আছে। রোগীদের সেবা চলমান রাখতে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। তারাই সার্বিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৫ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (এমডিআর টিবি) আক্রান্ত। 

‘জানাও’ অ্যাপ বন্ধ
যক্ষ্মা প্রতিরোধে ইউএসএইডের সহায়তায় ২০১৮ সালে ‘জানাও’ নামে একটি অ্যাপ প্রস্তুত করা হয়। সারাদেশে ৫০০ চিকিৎসক নিয়ে পাইলট আকারে অ্যাপটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সাফল্য দেখে এক পর্যায়ে এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অ্যাপে নিবন্ধিত যে কোনো চিকিৎসক যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান পেলে তাঁকে এ অ্যাপে নিবন্ধন করে দিতেন। এ পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিয়ে অন্তত ৭ হাজার রোগী যক্ষ্মা মুক্ত হয়েছেন। ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ছাঁটাই করা হয়েছে এতে নিয়োজিত কর্মীদেরও। 

আইসিডিডিআর,বির সাত প্রকল্প স্থগিত
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক বিজ্ঞানী জানান, ইউএসএইডের অর্থায়নে আইসিডিডিআর,বিতে সাত প্রকল্প চলমান ছিল। এগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এসব কাজে জড়িত প্রায় এক হাজার কর্মীকে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে যক্ষ্মার সক্রিয় রোগী সন্ধান, স্ক্রিনিং ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হতো। যেহেতু এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আগামী বছর যক্ষ্মার নতুন ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১৭ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম না থাকায় দ্রুতগতিতে যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হবে। 

ওই বিজ্ঞানী আরও জানান, আইসিডিডিআর,বিতে একই সঙ্গে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল ইউএসএইডের সহায়তায়। এগুলো স্থগিত হওয়ায় নতুন চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন থমকে গেছে। সংকট কাটিয়ে উঠতে এসব প্রকল্প চলমান রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বা অন্য কোনো দাতা সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে নতুন করে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে গত ৯ মাস স্বাস্থ্যের কোনো অপারেশন প্ল্যান নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সেবা। অপারেশন প্ল্যানের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিও ছিল। যদি অপারেশন প্ল্যান চালু থাকত, তাহলে এখান থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা নেওয়া সম্ভব হতো। সে পথও বন্ধ। 

ব্র্যাকের গবেষণা স্থগিত
ইউএসএইডের সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকেও যক্ষ্মা নিয়ে গবেষণা প্রকল্প ছিল। গত জানুয়ারিতে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। সংস্থাটির যক্ষ্মা কর্মসূচির লিড টেকনিক্যাল পারসন ডা. ফারহানা নিশাত সেহেলী বলেন, গত জানুয়ারি থেকে ইউএসএইডের অর্থায়নে চলমান গবেষণা প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। তবে দুই মাসে তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। এসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকলে প্রভাব পড়বেই।

যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতারও অভাব
দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছে আইসিডিডিআর,বি। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট সায়েরা বানু বলেন, ‘যক্ষ্মার চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায় এটা অনেকেই জানে না। মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। যক্ষ্মা মোকাবিলায় শুধু সরকার বা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে হঠাৎ করে ইউএসএইডের সহায়তা বন্ধে নতুন সংকট তৈরি করেছে। এই সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থার এগিয়ে আসতে হবে। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিশ্চিত করতে হবে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো।

যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমরা যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। এনটিপি মূলত চলে গ্লোবাল ফান্ডে। তাই ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধে সরকারি কোনো প্রকল্পে প্রভাব পড়বে না। তবে এ জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ