চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ম্যাচ হবে মোট ১৫টি। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে। ২৩ ফেব্রুয়ারি দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া ম্যাচটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহও তুঙ্গে। দুই সপ্তাহ আগে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট ছাড়া হলে এক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় দফায় টিকিট ছাড়া হলে শেষ হয়ে যায় এক মিনিটের মধ্যে।

তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি নিয়ে বেশিই মাতামাতি (ওভারহাইপড) হচ্ছে বলে মনে করেন হরভজন সিং। ভারতের এই সাবেক ক্রিকেটারের মতে, দুই প্রতিবেশী দেশের মাঠের লড়াই হবে একতরফা। কারণ, পাকিস্তানের চেয়ে ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে ভারত ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে সিরিজ জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে। আর পাকিস্তান দল নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজে জিতেছে মাত্র ১ ম্যাচ। দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের উদাহরণ টেনে হরভজন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, ‘এবারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ওভারহাইপড। কারণ, এই ম্যাচে (লড়াইয়ের) কিছুই নেই। ভারত খুবই শক্তিশালী। আর পাকিস্তান ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে। পাকিস্তানের দলটি ধারাবাহিক নয়। আর আপনারা যদি ভারতের ব্যাটসম্যান ও বোলারদের সঙ্গে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান-বোলারদের পরিসংখ্যানের পার্থক্য দেখেন, তাহলেই পরিষ্কার ছবি পেয়ে যাবেন।’

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ যেকোনো সময়ই তুঙ্গে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়; টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়িতেই যা বোঝা গেছে। ভারতের হয়ে ১০ বছর আগে সর্বশেষ খেলা হরভজনের ধারণা, রোহিত শর্মা ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের লড়াইটা জমবে না, ‘(মানুষের আগ্রহের কারণে) টিকিটের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় না দর্শক যতটা প্রত্যাশা করছেন, ততটা লড়াই মাঠে দেখা যাবে। ২৩ ফেব্রুয়ারির ওভারহাইপড ম্যাচটি আমার তো মনে হয় একতরফা হবে।’

একতরফা ম্যাচের সপক্ষে কিছু যুক্তিও তুলে ধরেছেন হরভজন। এ ক্ষেত্রে দুই খেলোয়াড়ের নাম ধরে তিনি বলেন, ‘দুই দলের মধ্যে শক্তির পার্থক্য অনেক। বাবর আজম আর রিজওয়ানকে বাদ দিলে পাকিস্তান দুর্বল দল। এ দুজন বাদে অন্য কেউ হাল ধরার মতো নেই। তাদের বোলাররাও ছন্দে নেই।’

শুধু বলেই যাননি, পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন ভারতের সাবেক অফ স্পিনার, ‘পাকিস্তানের প্রধান ব্যাটসম্যান বাবর, ভারতের বিপক্ষে তার গড় ৩১। অথচ একজন শীর্ষ ব্যাটসম্যানের গড় হওয়ার কথা ৫০। ভারতের বিপক্ষে রিজওয়ানের গড় ২৫। ফখর জামান একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার গড় ৪৬। সে-ই ভারতের কাছ থেকে ম্যাচ বের করে নিতে পারে। কিন্তু এর বাইরে ওদের ব্যাটিং সাহস জোগায় না। ভারতের বিপক্ষে ফাহিম আশরাফের গড় সাড়ে ১২, সৌদ শাকিলের মাত্র ৬। আমি যখন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের দিকে তাকাই, এ দলটা ভারতের বিপক্ষে লড়াই করতে পারবে বলে মনে হয় না।’

পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের বিপরীতে ভারতীয়দের তুলনায় হরভজন বলেন, ‘ভারত খুবই শক্তিশালী। রোহিত কিছুদিন আগে রানে ফিরেছে, শুবমান গিলও রানে আছে। অক্ষর প্যাটেল ছন্দে আছে, বিরাট কোহলিও কিছুদিন আগে একটা ফিফটি করল; যদিও আমরা যেভাবে দেখতে অভ্যস্ত, সেই ছন্দে নেই। আমার বিশ্বাস, কোহলি ভালো করবে, কারণ বড় টুর্নামেন্টে সে সব সময়ই জ্বলে ওঠে।’

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হওয়ার আগে আলাদাভাবে একটি করে ম্যাচ খেলবে। ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারত খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে, আগের দিন করাচিতে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক পাকিস্তান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের ‘একতরফা’ শরণার্থীদের বহিষ্কারের নিন্দা আফগান প্রধান

পাকিস্তান সরকার গত ১ এপ্রিল থেকে ৮৫ হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তান সরকারের নেওয়া এই ‘একতরফ’ জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ।

রোববার (২০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য নিউজ আরব।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান আবাসিক অনুমতি বাতিল করেছে- এমন ৮ লাখেরও বেশি আফগানকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বহিষ্কার করার জন্য কঠোর অভিযান শুরু করেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন বা কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১

বিবিসির প্রতিবেদন
ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে

আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর মধ্যেই শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক দিনের সফরে কাবুলে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিসহ তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। 

বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আফগানিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করার পরিবর্তে, পাকিস্তানের একতরফা পদক্ষেপ সমস্যাটিকে তীব্রতর করছে এবং সমাধানের দিকে অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা একটি বিবৃতি অনুসারে, তিনি পাকিস্তান সরকারকে ‘আফগান শরণার্থীদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন সহজতর করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে, এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র জিয়া আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি ‘পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের পরিস্থিতি এবং জোরপূর্বক বহিষ্কারের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন।”

তিনি জানান, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তালেবান কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, আফগানদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার করা হবে না’।

‘কোনো ছাড় দেওয়া হবে না’

ইসলামাবাদ জানিয়েছে, প্রায় ৮৫ হাজার আফগান নাগরিককে ইতিমধ্যে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের মধ্যে যাদের শরণার্থী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি নেই, তাদেরকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছে দেশটির সরকার।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পাকিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাল্লাল চৌধুরী এক ঘোষণায় বলেছেন, “সময়সীমায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না এবং সময়সীমা বাড়ানো হবে না।”

তিনি অবৈধভাবে বসবাসরত আফগানদের সতর্ক করে বলেন, “আপনি যদি কোনো কাগজপত্র ছাড়া আসেন, তবে সেটি শুধু সন্দেহই বাড়ায়—আপনি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত কি না, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছেন কি না বা অন্য কোনো অপরাধ করছেন কি না।” 

নিউ আরবের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ফিরে আসার পর পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হামলা বেড়ে যাওয়ায় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক আরো খারাপ হয়েছে।

গত বছরটি পাকিস্তানে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল। ইসলামাবাদ কাবুলকে দায়ী করে বলেছে, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকেই হামলার পরিকল্পনা করছে। যদিও তালেবান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

দ্বিতীয় ধাপের বহিষ্কার

শুক্রবার পাকিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাল্লাল চৌধুরী জানিয়েছেন, তার সরকার এপ্রিলের শুরু থেকে প্রায় ৮৫ হাজার আফগান নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই অনিবন্ধিত।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, ফেরত যাওয়া এই আফগানদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু—যাদের এমন এক দেশে প্রবেশ করতে হচ্ছে, যেখানে মেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বহু খাতে নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) আফগান শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এএফপিকে জানান, ১ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্তের দুটি প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে প্রায় ৭১ হাজার আফগান প্রত্যাবর্তনকারীকে তালেবান কর্তৃপক্ষ নথিভুক্ত করেছে।

২০২৩ সালে প্রত্যাবর্তনের প্রথম পর্যায়ে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক লাখ অবৈধ আফগানকে পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।

মার্চ মাসে ঘোষিত দ্বিতীয় পর্যায়ে, পাকিস্তান সরকার ৮ লাখেরও বেশি আফগানের আবাসিক পারমিট বাতিল করে এবং এপ্রিলের মধ্যে তাদেরকে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে।

আফগানদের বহিষ্কারের পদক্ষেপকে পাকিস্তানিরা ব্যাপকভাবে সমর্থন করে।

শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডির এক বাসিন্দা আহমেদ ওয়ালিদ এএফপিকে বলেন, “তারা (আফগানরা) আমাদের দেশের প্রতি সম্পূর্ণ অসম্মানজনক। তারা আমাদের ওপর হামলায় মদদ দিচ্ছে, তারা আমাদের ব্যবহার করছে। যদি তারা পাকিস্তানকে সম্মান না করে তাহলে তাদের কেউ এদেশে থাকতে পারবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে চাওয়া দেশগুলোর প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি চীনের
  • চীনের ক্ষতি করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করলে তার বিরোধিতা করব, হুঁশিয়ারি চীনের 
  • পাকিস্তানের ‘একতরফা’ শরণার্থীদের বহিষ্কারের নিন্দা আফগান প্রধান
  • শুরুর ‘জট’ খুলছেই না