মাথাব্যথা মানেই কি দৃষ্টির সমস্যা
Published: 17th, February 2025 GMT
মাথাব্যথা হয় না, এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রাথমিক অবস্থায় মাথাব্যথার জন্য কেউ বিশ্রাম নেন বা একটু চা পানে নিরাময় খোঁজেন। আবার কেউ কেউ প্যারাসিটামল–জাতীয় বড়ি সেবন করেন। যদি এমন হয়, পড়তে বসলেই মাথাব্যথা, প্রতিদিন মাথাব্যথা অথবা মাথাব্যথা সহজে সারছে না অথবা মাথাব্যথার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ আছে—তবে চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে।
আমাদের দেশে যেহেতু রেফারেল সিস্টেম নেই, তাই সবাই চান প্রথমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে বলে তা নিয়ে একজন রোগী কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, এ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে মাথাব্যথার গতিপ্রকৃতি খেয়াল করলে অনেক সময় বোঝা যায় এর কারণ কী? সে ক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে, তা নির্ধারণ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
প্রথমেই মাইগ্রেনের কথায় আসি। মাইগ্রেনের মাথাব্যথায় বমির ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি থাকে। অনেকের মাথাব্যথার শুরুতে কানে একধরনের বোঁ বোঁ শব্দ অনুভূত হয়। মাথার এক পাশ বা দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। দুশ্চিন্তা, ক্ষুধা, ঘুমের ব্যত্যয়, বিশেষ কোনো খাবার, পরিবেশ (উৎকট গন্ধ, শব্দদূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন) ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মেয়েদের হরমোন পরিবর্তনের কারণেও এটি হতে পারে। কিছু কিছু বিষয় মাথাব্যথাকে উসকে দেয়। এটিকে বলা হয় ট্রিগারিং ফ্যাক্টর। নির্দিষ্ট সময় পর নিজ থেকে এই মাথাব্যথা সেরেও যায়।
সাইনাসজনিত মাথাব্যথা সাধারণত সাইনুসাইটিস বা সাইনাসের প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত কপালে ও চোখের পাশে একটু গভীরে অনুভূত হয় এবং মাথা নড়াচড়া করলে বা কাশি দিলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। সাধারণত এই ব্যথা সকালের দিকে বেশি অনুভূত হয় এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার তীব্রতা কমে যায়। এর সঙ্গে ঠান্ডাকাশি ও অ্যালার্জির সম্পর্ক থাকে।
নিউরোলজিক্যাল বা মস্তিষ্কে টিউমার হলে তীব্র মাথাব্যথা, সঙ্গে প্রায়ই বমি এবং এটি দিনে দিনে খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং অনেক সময় দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। এমনটি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
আরও পড়ুনমেয়েদের কেন বেশি মাথাব্যথা হয়০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪এটা ঠিক যে চোখের সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো আই স্ট্রেইন এবং দৃষ্টি সমস্যা। আই স্ট্রেইন হলো চোখের অতিব্যবহারজনিত একধরনের চোখের অবসাদ বা ক্লান্তি, যেখানে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। দৃষ্টি সমস্যার কারণে, সঠিক নিয়মে চশমা না পরলে, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে (মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি) থাকলে, পড়াশোনা, ড্রাইভিং ইত্যাদি কারণেও আই স্ট্রেইন হতে পারে। আই স্ট্রেইনের মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা খুব তীব্র হয় না। সাধারণত বিশ্রামে বা কর্মবিরতিতে কমে যায়। দিন শেষে বা সন্ধ্যার সময় আই স্ট্রেইনের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে অন্যান্য সাময়িক উপসর্গ, যেমন চোখ জ্বালাপোড়া, চোখে পানি পড়া, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, চোখে শুষ্কভাব, ঘাড়ব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্ক্রিনটাইম ও রাত জাগা কমিয়ে ফেলতে হবে। যাঁরা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি স্ক্রিনে অধিক সময় কাজ করেন, তাঁদের জন্য চোখে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। প্রয়োজনে দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা.
মো. ছায়েদুল হক, অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, মার্কস মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
আগামীকাল পড়ুন: গর্ভধারণের আগে অতিরিক্ত ওজন কেন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত
আরও পড়ুনসব মাথাব্যথাই কি মাইগ্রেন, নাকি অন্য কিছু?১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ধ রণত অন ভ ত সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কেন হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা কী
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস একধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ভেতর স্নায়ুরজ্জুকে আক্রমণ করে। এতে ইমিউন সিস্টেম ভুলভাবে স্নায়ুতন্তুগুলোর প্রতিরক্ষামূলক আবরণকে আক্রমণ করে থাকে। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস তাই একধরনের অটোইমিউন ডিজিজ।
এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা, পেশিতে অসহ্য ব্যথা, মাথাব্যথা-মাইগ্রেন, খাদ্যনালি-মূত্রনালিতে সংক্রমণ, সঙ্গে হাত-পা অসাড় হয়ে যায়। কোনো কিছু চিন্তা করার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, অবসাদ, বিষণ্নতা, একাকিত্বে ভোগেন রোগী। নারীদের মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের থেকে কয়েক গুণ। ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এ স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পরিবেশ, জিন ও বংশগত কারণে এটি হতে পারে।
আরও পড়ুনমস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে এই ব্যায়ামগুলো করতে পারেন২৫ অক্টোবর ২০২২উপসর্গ
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে পেশির ওপর চাপ পড়ে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেশির দুর্বলতা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। পেশিতে ব্যথা হয়। হাত-পা নাড়ানো যায় না। পেশিতে টান, খিঁচুনি হতে পারে। একসময় অসাড় হতে থাকে হাত-পা। স্পর্শের অনুভূতি থাকে না। হাঁটাচলা, খাবার খাওয়া, কথা বলায় সমস্যা হয় অনেকের।
খাদ্যনালি, অন্ত্র, মূত্রনালি আক্রান্ত হয়। অবসাদ, উৎকণ্ঠা, হতাশা গ্রাস করে। বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়। অস্থিরতা দেখা দেয়, স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তায় সমস্যা হয়।
কারও কারও শ্রবণশক্তি চলে যায়। মাঝেমধ্যেই শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়।
রোগনির্ণয়
রোগনির্ণয়ে এমআরআই স্ক্যান করা হয়। অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি টেস্টে চোখের স্নায়ুর ছবি তোলা হয়। স্পাইনাল ট্যাপ পরীক্ষায় ধরা যায়, স্পাইনাল ফ্লুইডের কতটা ক্ষতি হয়েছে। রোগ কতটা ছড়িয়েছে, সেটাও নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী থেরাপি দেওয়া হয়। ইভোক পটেনশিয়াল টেস্টে ব্রেন ড্যামেজ হয়েছে কি না, ধরা যায়।
আরও পড়ুনরাতের এই অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্ক যেভাবে দ্রুত বুড়িয়ে যায়১১ নভেম্বর ২০২৪চিকিৎসা
শুরুতে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা, মেডিটেশনে রোগী সুস্থ হয়ে যান। কিছু থেরাপিও আছে, যাতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফিজিক্যাল থেরাপি, আকুপাংচার থেরাপিও কার্যকর। নানা রকম যোগ ও কাউন্সেলিং করানো হয় রোগীকে।
অনেক রকম ওষুধও আছে, যেমন ডিজিজ-মডিফাইং ওষুধ, প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ। স্টেরয়েড দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট ব্যবহার হয়। ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগও আছে।
এসব ছাড়াও শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও দিনে কিছুটা সময় মেডিটেশন করা উচিত।
ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনসালমান খান ভুগছেন সুইসাইড ডিজিজে, জেনে নিন এ রোগ সম্পর্কে২০ ঘণ্টা আগে