নারায়ণগঞ্জে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
Published: 17th, February 2025 GMT
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার এবং লে-অফ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউরো টেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে এই কর্মসূচি পালন করেন। এতে নগরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীসহ যাত্রীরা।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার নয়ামাটি এলাকায় রপ্তানিমুখী ইউরো টেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানায় প্রায় ৩ হাজার ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শ্রমিকেরা এক মাসের বকেয়া বেতন–ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। একপর্যায়ে কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কারখানার কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে চাকরিচ্যুত ২৭ শ্রমিককে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন। এর পর থেকে কারখানার শ্রমিকেরা মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গতকাল রোববার রাতে মালিকপক্ষ কারখানা শ্রম আইনে লে-অফ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা মামলা প্রত্যাহার, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ এবং লে-অফ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। বহিরাগত লোকজন কারখানা ভাঙচুর করেছেন। শ্রমিকদের হয়রানি করতে ২৭ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত ও তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অবিলম্বে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার ও কারখানা খুলে দিতে হবে।
অভিযোগের বিষয়ে কারখানার কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-৪ পরিদর্শক (গোয়েন্দা) সেলিম বাদশা বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কারখানার মালিকপক্ষ ২৭ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। আজ সকালে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা চাষাঢ়ায় সড়ক অবরোধ করেন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছির আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাকির কারামুক্ত, গাড়িবহর নিয়ে অনুসারীদের বরণ
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান সাজার মেয়াদ শেষে কারামুক্ত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে কারামুক্ত হন তিনি।
এদিকে জাকির খানকে বরণ করে নিতে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফোরকান ওয়াহিদ জানান, ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলার রায়ে জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করার পর উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষে আজ রোববার সকালে জাকির খানকে কারামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের মুক্তির খবরে আজ সকাল থেকে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকলে ও প্রাইভেট কারের বহর নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীরা ট্রাকে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মোটরসাইকেলের বহর বের করেন। জেলা কারাগারের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে বের হন জাকির খান। এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৪টি হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাকির খান আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শহরের দেওভোগ এলাকায় জাকির খান তাঁর বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন। দেওভোগ এলাকার সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে হত্যা করে শহরে ত্রাস সৃষ্টি করেন। ২০০৩ সালে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকার পর গোপনে দেশে ফিরে এসে রাজধানীর বসন্ধুরা আবাসিক এলাকায় পরিচয় গোপন করে সপরিবার বসবাস শুরু করেন। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ জাকির খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে জাকির খানসহ সব আসামি খালাস পান।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সাজা শেষে জাকির খান কারামুক্ত হয়েছেন। তিনি ২৬টি মামলায় খালাস পেয়েছেন। তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, সেই মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন।