৮০ বছরের ফিলিস্তিনিকে করা হলো ‘মানবঢাল’, পরে গুলিতে হত্যা
Published: 17th, February 2025 GMT
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ৮০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে মানবঢাল হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেছিল। তাঁর গলায় বিস্ফোরক বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কথামতো কাজ না করলে তাঁর মাথা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলি গণমাধ্যম ‘দ্য হটেস্ট প্লেস ইন হেল’-এর অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, গত বছরের মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গাজায় এই বৃদ্ধ ফিলিস্তিনির গলায় বিস্ফোরক বেঁধেছিলেন। এরপর তাঁকে ইসরায়েলি সেনাদের অগ্রভাগে থেকে গাজা এলাকার বাড়িতে বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আট ঘণ্টা যাবৎ এই ফিলিস্তিনিকে দিয়ে এ কাজ করানো হয়। এরপর ইসরায়েলি সেনারা তাঁকে তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গাজা সিটির জেইতুন এলাকার বাড়ি থেকে পালানোর নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইসরায়েলি সেনাদের তথ্যমতে, পালিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলের আরেকটি সেনা ব্যাটালিয়ন সড়কে এই বয়স্ক দম্পতিকে দেখতে পায়। তখন তাঁদের গুলি করা হয়। পরে তাঁরা ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে এই ফিলিস্তিনি দম্পতিকে গাজায় তাঁদের বাড়িতেই পান। তাঁরা আরবিভাষী ইসরায়েলি সেনাদের বলেছিলেন, তাঁদের চলাফেরায় সমস্যা আছে। এ কারণে তাঁরা বাড়ি থেকে পালিয়ে দক্ষিণ গাজায় যেতে পারছেন না।
এ অবস্থায় ইসরায়েলি সেনারা ৮০ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা পুরুষ ফিলিস্তিনিকে তাঁর বেতের লাঠির ওপর ভর দিয়ে তাঁদের সামনে সামনে হাঁটতে বাধ্য করেন। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়।
এক ইসরায়েলি সেনা বলেছেন, ইসরায়েলের দায়িত্বরত সেনা কমান্ডার এই ফিলিস্তিনি দম্পতিকে ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
প্রতিপক্ষের গুলি বা বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনারা এভাবে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করে থাকেন।
এক ইসরায়েলি সেনা বলেছেন, বয়স্ক ফিলিস্তিনি ব্যক্তি তাঁদের (ইসরায়েলি সেনা) আগে আগে প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, বাড়ির ভেতরে বিস্ফোরক বা কোনো যোদ্ধা থাকলে, যাতে ইসরায়েলি সেনারা হতাহত না হন। তাঁদের পরিবর্তে ফিলিস্তিনি ব্যক্তিই যাতে হতাহত হন।
ফিলিস্তিনি বৃদ্ধকে বলা হয়েছিল, তিনি যদি ঠিকঠাকভাবে কাজ না করেন কিংবা আদেশ না মানেন, তাহলে তাঁর গলায় বাঁধা বিস্ফোরকের রশি ধরে টান দেবেন পেছনে থাকা ইসরায়েলি সেনা। বিস্ফোরণে তাঁর মাথা উড়ে যাবে।
বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে আট ঘণ্টা ধরে মানবঢাল হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এরপর তাঁকে তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ গাজার কথিত মানবিক অঞ্চলের দিকে হেঁটে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুসারে, মানবঢাল হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়া এই ফিলিস্তিনি ও তাঁর স্ত্রীর সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়ক দিয়ে যাওয়ার তথ্য আশপাশে থাকা ইসরায়েলি সেনা ডিভিশনগুলোকে জানানো হয়নি।
এক ইসরায়েলি সেনা বলেছেন, প্রায় ১০০ মিটার পথ অতিক্রম করে এই দম্পতি ইসরায়েলের আরেকটি ব্যাটালিয়নের সামনে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তাঁদের গুলি করেন। এভাবেই তাঁরা সড়কে মারা যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ফ ল স ত ন ব ধ য কর ক জ করত ইসর য় ল ক জ কর হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিখোঁজ কিশোরের মরদেহ উদ্ধার, কোমরে বাঁধা ছিল বালুর বস্তা
রাজবাড়ীর কালুখালীতে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর নিরব শেখ (১৭) নামে এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার কোমরে শিকল দিয়ে একটি বালুর বস্তা বাঁধা ছিল।
রোববার সকালে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মাধবপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিরব ওই ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর জিয়ারুল শেখের ছেলে।
নিরবের পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিরব বাড়ির পাশে মাধবপুর বাজারে যায়। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁজ চেয়ে পোস্ট দেন তারা। এর কিছুক্ষণ পর নিরবের বাবার কাছে একটি নম্বর থেকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে নিরবকে হত্যার হুমকি দেয়। মুক্তিপণ দেওয়ার জন্য পাংশা উপজেলার একটি ব্রিজের কাছে যেতে বলা হয়। এরপর থেকেই সেই নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শনিবার নিরবের বাবা কালুখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রোববার সকালে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, রোববার সকালে ইকরাম নামে এক জেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে উপুড় হয়ে ভাসমান একটি মরদেহ দেখতে পান। এরপর এলাকাবাসী গিয়ে নিশ্চিত হয় এটি নিখোঁজ নিরবের মরদেহ। নিরবের কোমরে শিকল দিয়ে একটি বালুর বস্তা বাঁধা ছিল, যেন মরদেহ পানিতে ডুবে থাকে। তবে মরদেহটি ফুলে ফেঁপে পানির ওপরে ভেসে ওঠে।
নিরবের বাবা জিয়ারুল শেখ জানান, তার তিন ছেলে। তিন বছর আগে ছোট ছেলে জন্মের সময় তার স্ত্রী মারা যায়। অভাব অনটনের সংসারে নিরব নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছে। পরে সাভারের একটি কারখানায় কাজ করত। বেতন নিয়মিত না পাওয়ায় সে কিছুদিন আগে বাড়ি ফিরে আসে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাজারে গিয়ে আর ফেরেনি। এখন ছেলের লাশ দেখতে হলো। নিরব কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া-বিবাদে জড়িত ছিল না।
তিনি আরও জানান, ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর তার নম্বরে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। কারা কী উদ্দেশ্যে চেয়েছিল তা তিনি ধারণাও করতে পারছেন না।
কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান জানান, গত শনিবার নিরবের বাবা কালুখালী থানায় জিডি করেন। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে আজ নিরবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। খুব শিগগির অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।