স্পিনে সব ওভার, স্পিনে সব উইকেট: ক্রিকেটে নতুন বিশ্ব রেকর্ড
Published: 17th, February 2025 GMT
ওমানের রাজধানী মাসকাটের আল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এখানেই চলছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ লিগ ২-এর নবম রাউন্ড। সব ম্যাচ একই মাঠে হওয়ায় ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ব্যবহৃত পিচগুলোতেই খেলানো হচ্ছে। শুকনা–মন্থর পিচে স্পিনও ধরছে বেশ।
এ ধরনের পিচ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতেই হয়তো ওমান অধিনায়ক যতীন্দর সিং দুই প্রান্ত থেকেই স্পিনার ব্যবহার করেছেন। সতীর্থ স্পিনাররা যতীন্দরের আস্থার প্রতিদান দিয়ে এমন কাণ্ড করে ফেলেছেন, যা বিশ্ব রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে। তা–ও একটি নয়, দুটি!
ওয়ানডে ইতিহাসে টানা দুই ম্যাচে স্পিনার দিয়ে প্রতিপক্ষদের অলআউট করা একমাত্র দল ওমান। ওয়ানডে ম্যাচের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার পেসার বা ফাস্ট বোলার ব্যবহার না করার রেকর্ডটাও এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির।
মাসকাটে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ লিগ ২-এর নবম রাউন্ডে স্বাগতিক ওমানের সঙ্গে খেলছে যুক্তরাষ্ট্র ও নামিবিয়া। গত রোববার এই রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৭ উইকেটে এবং গতকাল পঞ্চম ম্যাচে নামিবিয়াকে ২ উইকেটে হারিয়ে দেয় ওমান। দুটি ম্যাচই ছিল লো–স্কোরিং।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সব কটি উইকেট নেন ওমানের চার স্পিনার। তাঁদের স্পিন আক্রমণও বেশ বৈচিত্র্যময়। বাঁহাতি স্পিনার শাকিল আহমেদ নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট। আরেক বাঁহাতি ওয়াসিম আলীর শিকার ১টি। অফ স্পিনার জয় ওদেররা ৩টি এবং লেগ স্পিনার সময় শ্রীবাস্তব নিয়েছেন ২টি উইকেট। ম্যাচটিতে ফাস্ট বোলার হাসনাইন শাহ ৩ ওভার ও মিডিয়াম পেসার সুফিয়ান মেহমুদ ৫ ওভার বল করলেও উইকেট পাননি।
তবে গতকাল নামিবিয়ার বিপক্ষে একবারের জন্যও পেসারদের বোলিংয়ে আনেননি ওমান অধিনায়ক যতীন্দর। দুই পাশ থেকে লাগাতার স্পিনারদের হাতে বল তুলে দিয়েছেন। তাঁদের দিয়ে নামিবিয়াকে অলআউট করতে ওমানের লেগেছে ৩৩.
ইনিংসজুড়ে বল করেছেন পাঁচ স্পিনার—বাঁহাতি শাকিল আহমেদ ও আমির কলিম, অফ স্পিনার জয় ওদেদরা ও সিদ্ধার্থ বুক্কাপত্তনম এবং লেগ স্পিনার সময় শ্রীবাস্তব। এই ৫ জন মিলেই নামিবিয়ার ১০ উইকেট নিয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে টানা দুই ম্যাচে স্পিনার দিয়ে প্রতিপক্ষদের অলআউট করার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ওমান। আবার নামিবিয়ার খেলা ৩৩.১ ওভার কোনো ওয়ানডে ম্যাচে পেস বোলিং ছাড়া দীর্ঘতম ইনিংস।
পেসাররা এক ওভারও বল করেননি—ছেলে ও মেয়েদের ওয়ানডে মিলিয়ে এমন ঘটনা ঘটল চতুর্থবার। ছেলেদের ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বার।
সর্বশেষ এমনটা দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কীর্তিপুরে নেপালের বিপক্ষে ৩৫ রানে অলআউট হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা ওয়ানডেতে যৌথভাবে দলীয় সর্বনিম্ন। এই ‘মামুলি’ রান তাড়া করতে নেমে নেপাল জিতে যায় ৫.২ ওভারেই। নেপাল এত দ্রুতই ম্যাচ শেষ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক সৌরভ নেত্রবালকার লেগ স্পিনার তিমিল প্যাটেল ও বাঁহাতি স্পিনার নোসতুশ কেনজিগের বাইরে অন্য কারও হাতে বলই তুলে দেননি।
মেয়েদের ওয়ানডেতে পুরো ইনিংস স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করানোর প্রথম ঘটনা ২০১৭ সালের। কলম্বোর পি. সারা ওভালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের হয়ে বোলিং করেন তিন স্পিনার—সানা মির, নাশরা সান্ধু ও সাদিয়া ইউসুফ। ভারতের লক্ষ্য ছিল মাত্র ৬৮ রানের, যা তারা ২২.৩ ওভারে পেরিয়ে যায়।
পরের ঘটনাটি মিরপুরে বাংলাদেশ–অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অ্যালিসা হিলির অস্ট্রেলিয়াকে ৯৮ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল নিগার সুলতানার বাংলাদেশ। অতিথিদের জিততে লেগেছিল ২৩.৫ ওভার। ইনিংসজুড়ে বল করেছেন বাংলাদেশের পাঁচ স্পিনার—নাহিদা আক্তার, সুলতানা খাতুন, রাবেয়া খান, স্বর্ণা আক্তার ও ফাহিমা খাতুন।
ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টিতে এমন অভাবনীয় ঘটনা একবারই ঘটেছে। সেটা এ বছরই। গত ২৫ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০–তে প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ‘অল–স্পিন অ্যাটাক’ দিয়ে ম্যাচ জেতে পার্ল রয়্যালস। দলটির হয়ে ২০ ওভার করেন পাঁচ স্পিনার—বিওর্ন ফরচুইন, দুনিত ভেল্লালাগে, মুজিব উর রেহমান, নাকাবা পিটার ও জো রুট।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদ এবং উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এ সমাবেশ করেন তারা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবীর, গোলাম রাব্বানী, তানভীর মন্ডলসহসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
কুয়েটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নের
ইবিতে এক কার্ডেই মিলবে সব সেবা
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর অন্যায়ভাবে কুয়েট প্রশাসন প্রহসন চালাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা কুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। অনতিবিলম্বে কুয়েট প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ দেশের ছাত্রসমাজ আবারো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ছাত্র রাজনীতি মুক্ত একটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্র রাজনীতিকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের উপর যেভাবে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে তা চরম অদক্ষতার পরিচয় দেয়।”
তিনি বলেন, “ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই এ ধরণের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ প্রশাসনকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সবসময় কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পাশে আছি।”
সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কুয়েট উপাচার্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের। কিন্তু তিনি একটি দল বা গোষ্ঠীকে সবসময় সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। কুয়েট উপাচার্য সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি তার চেয়ারে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “যিনি ছাত্রদের অধিকার সংরক্ষণ করতে পারেন না, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে আগামী ২ মে আবাসিক হলগুলো খোলা ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী