যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার জন্য সেনা পাঠাতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, এটি সহজ সিদ্ধান্ত নয়, তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

স্টারমার ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লেখেন, যদি প্রয়োজন পড়ে, তবে ইউক্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হলেও সেটি শুধুমাত্র একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত নয়, বরং এটি হতে হবে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটি হালকাভাবে বলছি না। আমি গভীরভাবে এই দায়িত্ব নিয়ে ভেবেছি। এটি করতে গিয়ে ব্রিটিশ সেনাসদস্যদের ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটি ইউক্রেনের স্থায়ী নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আজ সোমবার প্যারিসে একটি সম্মেলনে বসতে চলেছেন ইউরোপের দেশগুলোর নেতারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এই সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন, যেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক, ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার আশা করা হচ্ছে। স্টারমারেরও ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে এতে ইউরোপকে রাখার পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনবিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত কেইথ কেলগ। তার মন্তব্যের পরই ফ্রান্স জরুরি সম্মেলনের আয়োজন করে।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, মস্কোর যুদ্ধ বন্ধ করতে যদি সত্যিকারের আলোচনা শুরু হয়, তবে ইউক্রেন ও ইউরোপ তার অংশ হবে।

এই আলোচনার অংশ হিসেবে এ সপ্তাহে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যাবে, রাশিয়া আদৌ শান্তি চায় কি না।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সাম্প্রতিক বক্তব্য ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ইউরোপের ভূমিকা বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়। তবে ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এটি রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বকে আরও সরাসরি সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র- রয়টার্স

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থায়ন বন্ধ, যক্ষ্মার ঝুঁকি বেড়েছে 

দেশে যক্ষ্মার বোঝা অনেক বড়। যক্ষ্মারোগীর ১৭ শতাংশ এখনো শনাক্ত করতে পারে না স্বাস্থ্য বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজে প্রভাব পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি সহায়তা ছাড়াই যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে সাতটি দেশে একই সঙ্গে সাধারণ যক্ষ্মা ও ওষুধপ্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, বাংলাদেশ সেই তালিকায় আছে। অন্য দেশগুলো হচ্ছে অ্যাঙ্গোলা, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি ও ভিয়েতনাম। দীর্ঘদিন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে প্রতিবছর যক্ষ্মায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। গতকাল রোববার প্রথম আলোকে দেওয়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, গত বছর তারা সারা দেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত করতে পেরেছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন ৬৫ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৭ শতাংশ যক্ষ্মারোগী শনাক্তের বাইরে। তাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। তাঁরা যক্ষ্মা ছড়াচ্ছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো।  অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা, বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব 

এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়া।’ দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পক্ষ থেকে আজ সকালে মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ব্র্যাক সেন্টার ইনে দুটি পৃথক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির কাজ বন্ধ

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, প্রায় আড়াই দশক ধরে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশও (আইসিডিডিআরবি) সরকারি কর্মসূচিতে সহায়তা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়ায় হঠাৎ করেই এর প্রভাব পড়েছে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। আইসিডিডিআরবি ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ করেছে এবং প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা ও কর্মী ছাঁটাই করেছে।

সরকারি ও বেসরকারি সূত্র জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটিতে যক্ষ্মা শনাক্তে সরকারকে সহায়তা করত। তারা শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তেও কাজ করত। এ ছাড়া শ্যামলীর যক্ষ্মা হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগী ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করত। আইসিডিডিআরবি প্রতিটি হাসপাতালে একজন করে মেডিকেল অফিসার দিয়েছিল। এখন এসব কাজ বন্ধ। 

একদিকে শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১৭ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে শনাক্তের কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়বে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। এসব করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত না হলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়বে।’

১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে যেকোনো নাগরিকের জন্য যক্ষ্মা শনাক্তের পরীক্ষা, ওষুধ ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের যক্ষ্মা কর্মসূচি। 

গতকাল রোববার জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) জুবাইদা নাসরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তামূলক কাজ বন্ধ হওয়ার ফলে কিছু সমস্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। আমরা পরিস্থিতি দ্রুত সামলে নিয়েছি। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা ব্যবস্থাপনায় সরকারি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগিয়েছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ