আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি আরও পিছিয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 17th, February 2025 GMT
চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় আরও পিছিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এক সঙ্গে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনে করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলেছি যে, আমাদের কিছু কাজ আছে। আমরা অত তাড়া করছি না। আমি একটা জিনিস বলি, আপনারা তো ভাবছেন ভিক্ষা করে নিয়ে আসি, আসলে অনেক শর্ত মেনে এবং আমাদের নিজস্ব তাগিদে। কিছু শর্ত আছে বললেই আমরা পালন করবো, তা নয়। এখন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ভালো। আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি না।
আগামী মার্চে কি আইএমএফ পর্ষদে প্রস্তাব উঠছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মার্চে না আমরা বলছি একটু অপেক্ষা করবো, আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির প্রস্তাব এক সঙ্গে উঠবে।
চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব প্রথম দফায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও প্রথম। দফায় তা পিছিয়ে ১২ মার্চ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে তা আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়া হলো। বোর্ড অনুমোদন করলে তার কয়েক দিন পর দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হতে পারে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বারবারই কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়টি অনেক গুরুত্ব পায় বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, শুধু চতুর্থ কিস্তির জন্য নয়, আগের কিস্তিগুলোতেও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি।
সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধি দল কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়। একই সঙ্গে কর-জিডিপি অনুপাত বছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। সরকার এ শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। এতে করে প্রায় ১০টি পণ্য ও সেবায় শুল্ক- করা কিছুটা কমানো হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ ঋণ র ক স ত ড স ল হউদ দ ন আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ
বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গেল অমাবস্যার গোনে গভীর সাগরে মাছ ধরতে জাল ফেলে খালি হাতে উপকূলে ফিরেছেন দুবলার চরকেন্দ্রিক জেলেরা। মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে সাগর পারের বিভিন্ন জেলেপল্লির শুঁটকির চাতালগুলো।
চলতি মৌসুমের মধ্যে জেলেদের মাছ ধরার বাকি সময় আছে আগামী পূর্ণিমার গোন। এই গোনে মাছ পাওয়া গেলেও পুরো মৌসুমের সংকট কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন মৎস্যজীবীরা। সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের ঈদ উৎসব পালন করবেন কীভাবে আর দেনা পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাদের পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ।
সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে ও বন বিভাগের তথ্যমতে, দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই মৌসুম। মৎস্য আহরণকালে জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ সময় সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন।
সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে হতাশা। মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সর্বশেষ পূর্ণিমার গোনেও মাছের তেমন দেখা পাননি তারা।
গেল গোনে সাগরের সুন্দরবন উপকূলে পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সাগরে যেতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিকূল বাতাস উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে জাল ফেললেও তেমন মাছ পাননি। ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি।
দুবলার চরের মোংলা রামপাল মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সাগরের মাছ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানের মতো মাছের সংকট কখনোই দেখেননি। তিনি বলেন, পশ্চিমা বাতাসের কারণে কোনো মাছ পড়ছে না। বাতাসের তীব্রতায় জেলেরা সাগরের গভীরে যেতে পারেনি।
সাগরের অধিকাংশ জেলে ও মৎস্যজীবীর একই অবস্থা বলে দাবি করেছেন জাকির শেখ। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন দূরের কথা, লগ্নির টাকা লুভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগরের কামাল হোসেন দুবলারচরের আলোর কোলের মৎস্যজীবী। তিনি জানান, তাঁর তিনটি ট্রলারে মৌসুমে প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা করে দাদনে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সাগরে এসেছেন। এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও আয় করেছেন সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো। লাভ দূরের কথা, পুঁজির অর্ধেকও এখন পর্যন্ত তোলা যায়নি। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে কীভাবে তা পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
কথা হয় সাগরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাসের কারণে গেল গোনে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাগরে মাছের সংকট বেশি দেখা গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা খাঁ খাঁ করছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবীর বাড়িতে ফিরে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে।
এবারের মৌসুমে সাগরে মাছের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন বন বিভাগের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ সংকট থাকায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে।