দেশব্যাপী ৭১ লাখ তরুণ-তরুণীর ১৪ হাজার ইভেন্টে অংশগ্রহণ
Published: 17th, February 2025 GMT
দেশে তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত ৫০ দিনব্যাপী তারুণ্যের উৎসব শেষ হচ্ছে ১৯ ফেব্রুয়ারি, বুধবার। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসবে প্রায় ৭১ লাখ তরুণ-তরুণী প্রায় ১৪ হাজার ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে।
উৎসবের প্রতিপাদ্য ছিল ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই।’ এই প্রতিপাদ্য ঘিরে দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে এই উৎসব। এর মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ঐক্যের প্রকাশ ঘটানো, সহযোগিতার নীতি প্রচার করা হয়েছে। উদ্যোক্তা কর্মী হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যাতে তারা দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
ছোট ছোট সৃষ্টিশীল উদ্যোগের মাধ্যমে সারাদেশে গ্রাম থেকে শহর, প্রান্তিক ও অনগ্রসর হতে অগ্রসর সব এলাকায় সব শ্রেণি-পেশার তরুণ-যুবদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে উদ্যাপিত হয়েছে তারুণ্যের উৎসব। এর মাধ্যমে গ্রাম, শহর, সুবিধাপ্রাপ্ত-সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণির তরুণ-যুবদের মাঝে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত মূল্যবোধ প্রচার করা হয়েছে।
তরুণদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা ও অজানা সম্ভাবনা আছে সে সম্পর্কে সচেতন করার বিভিন্ন রকম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম তরুণদের উজ্জীবিত করতে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগে প্রতিদিন তারুণ্যের উৎসবের শত শত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে কমপক্ষে ২৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭১ জন নারী, ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৩০২ জন পুরুষসহ মোট ৭১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৩ জন তরুণ-যুবক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মোট ১৩ হাজার ৭১১টি ইভেন্টের মধ্যে শুধু নারীদের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ইভেন্ট ছিল দুই হাজার ৯৩১টি।
ক্রীড়া পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জেলা ক্রীড়া অফিস দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায় হতে শুরু করে, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজন করে অনূর্ধ-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্ট। এসব আয়োজনের মধ্যে ছিল মেয়েদের ৮৫৫টি ম্যাচ যাতে কমপক্ষে ২৫ হাজার ৬০০ মেয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
এই উৎসবের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজন করে চা শ্রমিক ও খাসিয়া জনগোষ্ঠীদের অংশগ্রহণে সিলেটে দিনব্যাপী ফুটবল প্রতিযোগিতা, কক্সবাজারে বিচ ফুটবল, ৬৪ জেলায় অ-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট, অ্যামপিউটি ফুটবল ফেস্টিভাল, তিন পার্বত্য জেলায় সুবিধাবঞ্চিত নারী ফুটবলারদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৪দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ, সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে ফুটবল ফেস্টিভাল, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের ইয়াং ডিপ্লোমেটদের নিয়ে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ, ৩টি ভেন্যুতে বিপিএল মিউজিক ফেস্ট, ৩৫০টি স্কুলের অংশগ্রহণে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইত্যাদি।
বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের আয়োজনে ৬টি জেলায় এবং জাতীয় পর্যায়ে ঢাকার পল্টন ময়দানে ওপেন আরচারি প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের আয়োজনে ৪০০ জন পুরুষ-মহিলা অংশগ্রহণে ঢাকায় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা এবং ঢাকা ও কক্সবাজারে তায়কোয়ান্দো ডিসপ্লে, শিশু-কিশোর তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের আয়োজনে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে নকআউট ভিত্তিতে যুব কাবাডি (অ-১৮ বালক ও বালিকা) প্রতিযোগিতা এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। দেশে সক্রিয় ৫৬টি ক্রীড়া ফেডারেশনও অ্যাসোসিয়েশনের সবাই এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন আয়োজন করে।
এ ছাড়াও দেশব্যাপী উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দেশীয় ও গ্রামীণ খেলা যেমন কাবাডি, দাড়িয়াবান্ধা, বউচি, গোল্লাছুট, ঘুড়ি উড়ানো উৎসব, রোলার স্কেটিং, সাইক্লিং, সিক্সারস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, মিনি ম্যারাথন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, কারুপণ্য মেলা ও পিঠা উৎসব, নজরুল সংগীত সন্ধ্যা, জুলাই-৩৬ বিষয়ক গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শহিদদের গল্প বলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, বইপড়া, আবৃত্তি, বানান প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আলোচনা অনুষ্ঠান, বিজ্ঞান কুইজ, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, ডিজিটাল লিটারেসি ক্যাম্পেইন, শীত বস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষ রোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, জিরো ওয়েস্ট ব্রিগেড গঠন, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু মুখ ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা ও কর্মশালা, যুব উদ্যোক্তা সমাবেশ, ফ্রি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এই উৎসবের অংশ হিসেবে।
তারুণ্যের উৎসবকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রাণবন্ত করে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের এই উৎসবে সম্পৃক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এই তারুণ্যের উৎসব উদ্যাপিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে যুব উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন, যুব সমাবেশ অনুষ্ঠান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক বিতর্ক, কেইস কম্পিটিশন, আন্তর্জাতিক পুষ্টি অলিম্পিয়াড, আলোচনা অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও তারুণ্যের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও একই রকম কর্মসূচি হাতে নেয়।
পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় উৎসব চলাকালে বিভিন্ন ভেন্যুতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সমাজের সবার অংশগ্রহণে সকল সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগে এই উৎসবটি উদ্যাপন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা, ক্রীড়া সংস্থা এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অংশগ্রহণে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ নতুন দিনের বার্তা প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
তারুণ্যের উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১ ডিসেম্বর ২০২৪ মিডিয়া লঞ্চিং ও লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং তারুণ্যের উৎসব উদ্যাপন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তারুণ্যের উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে সারাদেশে একযোগে তারুণ্যের উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয় যা ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে শেষ হয়। তারুণ্যের উৎসবকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ২৩টি বিভিন্ন পর্যায়ের দপ্তর ও সংস্থা, একযোগে কাজ করে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৮০টি মিশনেও তারুণ্যের উৎসব ব্যাপকভাবে উদ্যাপিত হয়েছে।
হাসান//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র ণ য র উৎসব র অন ষ ঠ ন পর ব শ সব র অ পর য য উপজ ল ফ টবল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেকৃবিতে শিবিরের প্রকাশনা উৎসব বন্ধের নির্দেশ
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রশিবির আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রশাসনের প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশাবুল হক।
জানা যায়, পূর্বঘোষিত ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি এ দুইদিনের অনুষ্ঠানে প্রথম দিন শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের জন্য অপেক্ষা না করে স্টলগুলো তুলে দিতে বলে প্রশাসন। অন্যথায় স্টল ভেঙে ক্লিন করে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। বুধবার বিকাল ৫টার দিকে অনুষ্ঠানে এসে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশাবুল হক বলেন, বাধা দেওয়া হয়নি বরং আমরা আয়োজকদের অনুরোধ করেছি যেন তারা অনুষ্ঠানটি সংক্ষিপ্ত করে এবং আজকের মধ্যেই শেষ করে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ২১ ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতির বিষয় বিবেচনায় নিয়েই প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা না শুনলে পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তবে আয়োজক ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রকাশনা উৎসবটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করা হচ্ছিল এবং এতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা ছিল না।
এদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। প্রকাশনা উৎসবে আগত এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখানে কেবলমাত্র বই দেখতে ও কিনতে এসেছি। এটা তো কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, তাহলে কেন এটি বন্ধ করা হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ হওয়া উচিত, কিন্তু বারবার এভাবে বাধা দেওয়া হলে আমাদের জুলাইয়ের উদ্দেশ্য ব্যহত হয়।
এ নিয়ে শেকৃবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবুল হাসান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য একটি প্রকাশনা উৎসব করেছি। যা আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছি এবং প্রশাসনের মৌন সম্মতিতে করেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি আয়োজন বিবেচনায় রেখে আমরা অনুষ্ঠানটি শহিদ মিনারের পাশে থেকে সরে টিএসসির সামনে আনি। পাশাপাশি রাত ৮ টার মধ্যে সব কার্যক্রম শেষসহ স্থানটি আগের মতো পরিচ্ছন্ন করে রাখারও কথা দিয়েছি।