ব্রাজিলের ৬ গোল হজমে শুরু, শিরোপা জয়ে শেষ
Published: 17th, February 2025 GMT
দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়েছিল ব্রাজিলের। প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৬ গোল হজম করে আসর শুরু করেছিল সেলেসাওরা। সেই পরাজয়ের পর অনেকেই তাদের শিরোপা জয়ের দৌড়ের বাইরে রেখেছিল। অপরদিকে, আর্জেন্টিনা তখন শিরোপা জয়ের প্রধান দাবিদার হয়ে ওঠে। তবে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে, শেষমেশ সাম্বার দেশের যুবাদের মুখেই শেষ হাসি। দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল।
রোববার (১৬ ফেব্রিয়ারি, ২০২৫) দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে চিলিকে ৩-০ গোলে হারায় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিততে হলে করতে হতো ৪ গোল। আলবিসেলেস্তারা জয় তো পায়নি, উল্টো ৩-২ গোলে হেরে গিয়েছে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। চূড়ান্ত পর্বে প্রথম ৪ ম্যাচ শেষে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল সমান ১০ করে। ফলে শেষ ম্যাচ দিয়েই শিরোপা নির্ধারণের অপেক্ষায় ছিল দুই দল।
আরো পড়ুন:
ব্রাজিলে আবারো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ২
চ্যাম্পিয়ন হতে অপেক্ষা বাড়ল ব্রাজিলের, আর্জেন্টিনারও
ভেনেজুয়েলার জোসে অ্যান্তনিও স্টেডিয়ামে চিলির মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। ম্যাচের ৭২ মিনিট পর্যন্ত কোনো গোল না হলেও পরের ১৭ মিনিটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। ৭৩ থেকে ৮৮ মিনিটের মধ্যে ডেভিড ওয়াশিংটন, পেদ্রো এবং রিকার্ডো ম্যাথিয়াস গোল করলে ম্যাচ জিতে নেয় ৩-০ ব্যবধানে।
এই জয়ের ফলে আর্জেন্টিনার চেয়ে তিন পয়েন্টে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। একই সাথে (+৪) গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকে তারা। শিরোপা জয়ের জন্য প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তাই ৪ গোলের ব্যবধান রেখে হয়ের বিকল্প ছিল না আর্জেন্টিনার সামনে। একই মাঠে একটু পরে এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে খেলতে নেমে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত ৩-২ ব্যবধানে ম্যাচই হেরে যায় আলবিসেলেস্তারা।
সুতরাং ৩ পয়েন্টে এগিয়ে থেকেই শিরোপা নিশ্চিত করে ব্রাজিল। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় এবং সব মিলিয়ে ১৩তমবার দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টটির ট্রফি জিতল সেলেসাওরা। ৮টি শিরোপা জিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে উরুগুয়ে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার শিরোপা ৫টি।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ক প আম র ক আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন র ব যবধ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কেবল ক্রিকেট বাণিজ্যেই ভারত-পাকিস্তান লড়াই!
ইনস্টাগ্রামের সেই পেইজটার নাম ঠিক মনে নেই। তবে বাবর ও রিজওয়ানদের ছবি পোস্ট করে যে ক্যাপশন দিয়েছে তার ভাষা ছিল এরকম, ‘‘অর্থের শক্তি দেখাল ভারত!’’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিজেদের মাটিতে আয়োজন করেও পাকিস্তান দুবাই গেছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। বিমানবন্দরে রিজওয়ান ও বাবরের সেই ছবি।
ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বাণিজ্য এখন এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে, ভারত পূর্ব দিকে থাকলে বাকি সবাই পশ্চিমে। দুই মেরুতে অবস্থান। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করেছে পাকিস্তান। লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। প্রতিবেশী দেশ ভারত অংশগ্রহণের জন্য সরকার থেকে পায়নি সবুজ সংকেত।
আইসিসির যেকোনো ইভেন্টের সূচি যেখানে তিন মাস আগে ঠিক হয়ে যায় সেখানে ভারতের কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি আটকে থাকে দিনের পর দিন।
এর আগে, এশিয়া কাপ পাকিস্তান বিনা শর্তে মেনে নিলেও এবার তারাও একটু বেঁকে বসে। ভারতকে আসতেই হবে তাদের দেশে নয় তো তারা বাদ! ভাবনা ছিল এরকমই। কিন্তু এই কথা যে, কেবল নিজেদের আলোচনার টেবিলেই ছিল বলাবাহুল্য। আইসিসির মিটিংয়েও এমন কথা বলা মানে নিজেদের অবস্থানকেই ছোট করে ফেলা। বাধ্য হয়ে ভারতের হাইব্রিড মডেলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। বাকি সব ম্যাচ পাকিস্তান। আয়োজক পাকিস্তান এক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারত। ভারতের গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারত। তাহলে তাদের ঘরের মাঠেই খেলতে হতো অন্তত গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে উঠলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু ওই যে ক্রিকেট বাণিজ্য এমন অবস্থানে যেখানে পাকিস্তান চাইলেও কৌশলী হতে পারবে না। আইসিসি এবং এসিসি বাড়তি লাভের আশায় এখন গ্রুপ পর্বেই ভারত ও পাকিস্তানকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো যদি দুই দল ফাইনাল খেলে তাহলে এর আগ পর্যন্ত নক আউটে মুখোমুখি হতে হবে না। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই যার বড় প্রমাণ। গ্রুপ পর্বে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর আবার তারা ফাইনাল খেলেছিল।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তারা একসঙ্গে খেলেছিল। এরপর ভারত নক আউট পর্বে গেলেও পাকিস্তান যেতে পারেনি। ফলে তাদের ম্যাচ খেলাও আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও একই কাণ্ড। গ্রুপ পর্বের পর দুই দল আবার সেরা চারে মুখোমুখি। ভারত ফাইনাল খেলতে পারলেও পাকিস্তান পারেনি। এবারও বাণিজ্যিক দিক থেকেই বিবেচনা করে আইসিসি দুই জায়ান্টকে একই গ্রুপে রেখেছে।
সুবিধা হলো একটাই, ক্রিকেট বাণিজ্য। দুই দলের মুখোমুখি লড়াই এখন কেবল মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ। পুরোনো সেই জৌলুস নেই। নেই লড়াইয়ের তীব্র জেদ। খেলোয়াড়রাও সেই উত্তাপ টের পান না। গণমাধ্যম, ব্রডকাস্ট আর দর্শকই সেই উত্তেজনা টিকিয়ে রেখেছেন। সব মিলেই কিন্তু বাণিজ্য। তাইতো দুই দলের ম্যাচের টিকিট দুই ঘণ্টাও অনলাইনে থাকে না। স্টেডিয়ামের বাইরে কালোবাজারিতে বিক্রি হয় চড়া দামে। সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন।
স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। বাকিদের ভরসা টিভি সেট, অনলাইন স্ট্রিমিং। এজন্য ব্রডকাস্টরাও চওড়া দামে বিক্রি করেছে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রতি ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন বিক্রি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ রুপিতে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ৩০.৪ বিলিয়ন মিনিট। টি-টোয়েন্টিতেও ওয়াচ টাইম রেকর্ডে শীর্ষে এই দুই দলের ম্যাচ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ২২ বিলিয়ন মিনিটের মতো।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার ভেঙে যাবে অতীতের সব রেকর্ডই। এ ম্যাচের দিকে তাই অপেক্ষা নিয়ে তাকিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা ও প্রচারস্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। তাইতো ‘মওকা-মওকা’ গান প্রচার করে বাড়তি নজর কাড়ার চেষ্টাতে পুরো সফল হয়ে যান তারা।
গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচটি ছাড়া যদি ফাইনালে তাদের আবার দেখা হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাণিজ্যের অঙ্কটা তখন কোথায় গিয়ে থামে, সেটি অনুমানেরও বাইরে। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের থেকে অর্থের ঝনঝনানি নিশ্চিত বেড়ে যাবে। আয়োজকরা সেই অপেক্ষাতেই।
সেজন্যই ক্রিকেট বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের জেদের কাছে একপ্রকার নত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে! বাবর-রিজওয়ানকে তাই স্বাগতিক হয়েও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর পাড়ি দিতে হয়। মাঠের ক্রিকেটে সেই জবাবটা তারা আজ দিতে পারলে কিছুটা মুখরক্ষা হলেও হতে পারে।
ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব