দুই সপ্তাহের বেশি সময় আন্দোলন। মাঝে সভাপতি তাবিথ আউয়াল অনুরোধ করার পরও মন গলেনি সাবিনা খাতুনসহ ১৮ নারী ফুটবলারের। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন বর্জনের ধারাটা ধরে রাখেন মেয়েরা। কিন্তু রোববার নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সঙ্গে বৈঠকের পর বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন ঋতুপর্ণা চাকমা-তহুরা খাতুনরা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচের পর মার্চে বাটলারের অধীনে অনুশীলনে যোগ দেবেন এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন মেয়েরা। অবশ্য এই ঘোষণা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন কিরণ। কিন্তু যারা বিদ্রোহ করেছেন, সেই মেয়েরা চুপ। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি কেউই। আন্দোলনকারীরা মুখে কুলুপ এঁটে রাখায় ফুটবলাঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। বিদ্রোহের অবসান হলে তো দু’পক্ষের এক হয়ে ঘোষণা দেওয়ার কথা। এমনও আলোচনা চলছে, ফুটবল ফেডারেশনের অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে বের হওয়ার রাস্তা খোঁজা সাবিনারা একুশে পদক নেওয়ার পর বড় কোনো বোমা ফাটাবেন। তাই ঘুরেফিরে একটা প্রশ্ন বারবার উঠেছে, চুপ থাকা এই মেয়েরা কি ছুটি কাটিয়ে আদৌ ক্যাম্পে ফিরবেন?
গত ৩০ জানুয়ারি গণমাধ্যমে দেওয়া তিন পৃষ্ঠার বিবৃতিতে মাসুরা পারভীন-সানজিদা আক্তারদের পুরো অভিযোগই ছিল পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ কোচের অধীনে অনুশীলন না করার পেছনে বডি শেমিং, গালাগাল, মানসিক নির্যাতনসহ আরও অনেক কারণ তুলে ধরেছিলেন তারা। এই অভিযোগগুলোর সুরাহা করতে হলে বাফুফে, কোচ বাটলার ও মেয়েরা মিলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রয়োজন; যেটা আদৌ হয়নি।
যদিও কিরণের দাবি, এই আলোচনা হবে মেয়েরা ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পে যোগ দিলে। এই ঘটনা আদৌ আলোচনার টেবিলে যাবে, নাকি নারী ফুটবলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে; সেই শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। এমনও গুঞ্জন উঠেছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্প থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পর আর ফিরবেন না সাবিনা খাতুনরা। তাদের বাদ দিয়ে ৩৬ ফুটবলারের সঙ্গে বাফুফের চুক্তি হওয়ার পর বিদ্রোহীরা ক্যাম্প ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়ে নেন। কিন্তু তারা বিদায়টা চাচ্ছেন সমঝোতা করে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো গুরুতর অভিযোগ মাথায় নিয়ে নয়।
গতকাল ফেডারেশনে সেই সমঝোতা কতটা হয়েছে, তা শুধু একপক্ষ (বাফুফে) থেকেই জানা গেছে। ‘কোনো শর্ত নয়, পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই মেয়েরা ক্যাম্পে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে তারা বুঝতে পেরেছে, এ ছাড়া কোনো উপায় নেই তাদের’–এভাবেই সমকালের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
যে বাটলারের সঙ্গে সাবিনাদের দ্বন্দ্ব সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে থেকে, সেই কোচকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার প্রসঙ্গও উঠেছে কিরণের সংবাদ সম্মেলনে। এর দায়টা নারী উইং চেয়ারম্যান চাপিয়েছেন বাফুফে জরুরি কমিটির ওপর, ‘নারী উইং নিয়ে ভুল তথ্য যাচ্ছে, সেটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, নারী উইং খেলোয়াড়দের সঙ্গে এককভাবে ও একসঙ্গে বসেছিল। নারী উইং থেকে এই কোচকে না রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কোচ নিয়োগ হয়েছে জরুরি কমিটির সভায়। যেখানে সভাপতি ও সহসভাপতিরা (সিনিয়র সহসভাপতিও আছেন) রয়েছেন।’
অথচ এই কিরণই গত বছরের অক্টোবরে সাফ জেতার পর বাটলারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। বাটলার ইস্যুতে তাঁর ইউটার্নে মেয়েদের আন্দোলনে বাফুফের অভ্যন্তরীণ কারও হাত আছে কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বাফুফে নির্বাহী সদস্য হয়ে ঊর্ধ্বতন ছয় ব্যক্তির ওপর দোষ চাপানো বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি সভাপতি তাবিথ আউয়াল। কিরণের মন্তব্যটি যে ভালোভাবে নেয়নি, সেটা এক কর্মকর্তার কথাতেও স্পষ্ট, ‘তাঁর (কিরণ) এ কথা বলাটা একদমই ঠিক হয়নি।’
বাফুফের দাবি অনুযায়ী ঝামেলা মিটেছে। তাতে অবশ্য শিগগির মাঠে ফেরা হচ্ছে না বিদ্রোহীদের। ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচে যে তারা থাকবেন না, সেটা একপ্রকার অনুমেয়ই ছিল। নতুন করে রোববার তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু অনিশ্চয়তা কাটেনি সাবিনাদের আন্দোলন নিয়ে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীনতা দিবসে পিওজে মিউজিক ক্লাবের থিম সং ‘সবুজের আহ্বান’
মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাচ্ছে প্রকৃতি ও জীবন (পিওজে) মিউজিক ক্লাবের থিম সং ‘সবুজের আহ্বান’। আজ চ্যানেল আইয়ের পর্দায় গানটির ভিডিওচিত্র প্রচারের পাশাপাশি গানটি পাওয়া যাবে পিওজে মিউজিক ক্লাব এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে।
‘সবুজের আহ্বান’ গানটির কথা লিখেছেন খন্দকার হাসনাত করিম পিন্টু। সুর ও সংগীত তানভীর তরী। সহকারী সুর ও সংগীত শাফরিনা। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন তানভীর তরী, মইন খান, নউশিন শারমিলি, কেয়া সুহি, জিয়াউল হক ভূঁইয়া ও শাফরিনা। গানটি পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু।
পিওজে মিউজিক ক্লাবের থিম সং-এ ফুটে উঠেছে— ফুলের সুবাস, পাখির কাকলি, নদীর কলতান আর বাংলার লোকসংগীতের হারানো ঐতিহ্যের কথা। গানটি মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি কেবল দেখার জিনিস নয়, জীবন ও ভালোবাসার অনন্য উৎস।
‘সবুজের আহ্বান’ থিম সং-এর পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘ধ্বংস আর দূষণের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে, সবুজের আহ্বান এক সাহসী উচ্চারণ— দখল নয়, সংরক্ষণ; নীরবতা নয়, প্রতিবাদ; বিচ্ছিন্নতা নয়, সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া সবুজ জীবনের গান। এটি এমন একটি সুর যা গানের মধ্য দিয়ে মানুষকে জাগিয়ে তোলে, পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়, আর বাংলা সংস্কৃতিকে গর্বের সঙ্গে ধারণ করে।’
তানভীর তরী বলেন, ‘যেখানে সুরে মিশে যায় প্রকৃতির স্পর্শ, যেখানে গানে উঠে আসে সবুজের কথা— সেখানেই জন্ম ‘সবুজের আহ্বান’-এর। এ গান শুধুই একটি থিম সং নয়, এ যেন এক প্রাণের অনুভূতি, একটি আলোড়ন, প্রকৃতির কাছে যাওয়ার আহ্বান। তাই গানের সুরে বলি, এসো গাই প্রকৃতির গান, এসো গাই জীবনের গান।’
শাফরিনা বলেন, ‘সবুজ সুরে রাঙাই জীবন স্লোগান ধারণ করে গানটি হয়ে উঠেছে পিওজে মিউজিক ক্লাবের প্রাণ। এই গান সকলকে আহ্বান জানায়, একসাথে গাইতে, একসাথে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে।’
‘সুন্দর প্রকৃতিতে গড়ি সুস্থ জীবন’ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের বহুমুখী উদ্যোগ নিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইমপ্রেস গ্রুপের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। ২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে চ্যানেল আইতে শুরু হয় ফাউন্ডেশনের গবেষণাভিত্তিক টিভি অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’, যা বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে। এর ধারাবাহিকতায় সংগীতের মাধ্যমে পরিবেশ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘সবুজ সুরে রাঙাই জীবন’ স্লোগানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পিওজে মিউজিক ক্লাব’।