হয়তো তাঁর উচ্চারণে নিহিত ছিল আনুগত্য আদায় না করতে পারার বিরক্তি বা ক্ষোভ। কিংবা তাঁর ভাষার প্রয়োগে ছিল ক্ষমতার অক্ষমতা! যে কোনো কিছুই হতে পারে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম যে শব্দ দুটি ‘বুলি’ হিসেবে উচ্চারণ করেছেন, তা স্প্যানিশ রেফারি মুনুয়েরা মন্তেরো ‘গালি’ হিসেবেই ধরে নিয়েছেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন।
শনিবার লা লিগায় ওসাসুনার বিপক্ষে ১০ জনের রিয়াল মাদ্রিদ শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করেছে। পয়েন্ট ভাগাভাগি করায় এই মুহূর্তে লা লিগার শিরোপা দৌড়ে বড় ধরনের হোঁচট খেতে হয়েছে তাদের। এখন ২৪ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৫১, অ্যাতলেটিকোর ৫০ এবং ২৩ ম্যাচে বার্সেলোনার ৪৮।
ওসাসুনার মাঠে বিতর্কিত এই ম্যাচটি ঘিরে ক্ষোভে ফুসছে মাদ্রিদ শিবির। বেলিংহামের দাবি, তিনি রেফারিকে অশ্লীল কোনো গালি দেননি, বরং তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন নিজের ওপর। ‘আমি একজন ইংলিশ খেলোয়াড়। স্বাভাবিকভাবেই কিছু কথা ইংরেজিতে বলে ফেলি। হয়তো স্প্যানিশে বলাটা ঠিক হতো। গত মৌসুমে এমন কিছু হলে আমার দোষ ছিল, কিন্তু এবার এটি ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই নয়। আমি যা বলেছি, তা রেফারির প্রতিবেদনের লেখা বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না। আমি কাউকে গালি দিইনি, এটি ভিডিওতে স্পষ্ট। আমি নিজের হতাশা প্রকাশ করেছিলাম। আমার কথাগুলো লিপ রিডিং করলেই বোঝা যাবে।’
কিন্তু কী বলেছিলেন বেলিংহাম? রেফারির প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে– ইংরেজিতে ‘এফ’ বর্ণ দিয়ে শুরু একটি গালি দিয়েছেন বেলিংহাম এবং ‘ইউ’ শব্দ দিয়ে শেষ করেছেন, যা কিনা লা লিগার ২৭ নম্বর ধারায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পড়ে। যার শাস্তি ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও বেলিংহামের বলা শব্দ যুগলকে ‘বুলি’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন।
‘রেফারি ইংরেজিটা ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। বেলিংহাম ‘ইউ’ না ‘অফ’ বলেছিলেন। এর অর্থ আমাকে অবজ্ঞা করো না। এটা আক্রমণাত্মক কিছু না।’ রিয়াল মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ তারা শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির কাছে পেশ করে বেলিংহামের শাস্তি বাতিলের আবেদন করবে।
আসলে এই একটি লাল কার্ডেই যেন এদিন রিয়াল মাদ্রিদের ছন্দপতন শুরু হয়ে যায়। যেখানে ম্যাচের ১৫ মিনিটের মধ্যেই এমবাপ্পের গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। তবে ম্যাচের ৩৮ মিনিটেই রেফারির সঙ্গে বেলিংহামের ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এর পর ১০ জনের রিয়াল রক্ষণ আগলে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কামাঙ্গি ফাউল করে বসলে ওসাসুনার স্পট কিক থেকে গোল শোধ করে দেন। ম্যাচের বাকি সময়ে ভিনিসিয়ুস, এমবাপ্পেরা কিছু সুযোগ পেলেও ভাগ্য বোধ হয় এদিন তাদের সঙ্গ দেয়নি। লা লিগায় এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জয়শূন্য স্পেনের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব। শেষবার এমন তিন ম্যাচ জয়হীন ছিল তারা ২০২০ সালের নভেম্বরে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় ঈদ জামাত শেষে আনন্দমিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আয়োজনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের জামাত শুরু হয়। জামাতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
জামাতের পর সবাইকে নিয়ে বের হয় এক বর্ণাঢ্য আনন্দমিছিল। মিছিলটি আগারগাঁও থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আগত সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, ঈদের জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য কার্পেট ও নামাজের বিছানা রাখা হয়। জামাত শুরুর আধঘণ্টা আগে সকাল আটটার দিকে নির্ধারিত প্যান্ডেল মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর পরে যাঁরা আসেন, তাঁরা খোলা মাঠে নামাজে অংশ নেন।
জামাত শেষে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠ থেকে শুরু হয় ঈদ আনন্দমিছিল। ব্যান্ডদলের বাদ্যবাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে হইহল্লোড় করে আনন্দমুখর পরিবেশে মানুষ অংশগ্রহণ করেন এই মিছিলে।
ঈদের শুভেচ্ছা ও সচেতনতার বার্তা–সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষ ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক’ বলে আনন্দধ্বনি তোলেন। মিছিলের অগ্রভাগে দুই সারিতে ছিল আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া। আরও ছিল ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস–সংবলিত ১০টি পাপেট শো। আনন্দমিছিল থেকে ন্যায্য ঢাকা শহর গড়ার বার্তা দেওয়া হয়। মিছিলটি খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়।
আনন্দমিছিল শেষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উন্মুক্ত মঞ্চে জাসাসের শিল্পীরা ঈদের দর্শকপ্রিয় গান ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ গানটি পরিবেশন করেন। এর পর ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, দেখা পাইলাম না’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো শিল্পীরা পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ সময় সাধারণ মানুষদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
আনন্দমিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছেন জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঈদের আনন্দ সকলের। ঈদের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, ঈদের নামাজের পর ঘরে ঢুকে যাওয়া এবং শুধু নিজেদের পরিবারকে সময় দেওয়া, সেটার পরিবর্তন দরকার। কারণ, ঈদ মানেই জমায়েত, সমাজের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে।’
এই জামাত ও আনন্দমিছিলে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদটাকে সত্যিকার অর্থেই ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল, সেটা হয়তো কয়েক শ বছর পর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিবছর এভাবেই নগরবাসী এক হয়ে ঈদ উদ্যাপন করবে। এখন থেকে ঈদ উৎসব হবে আনন্দময়। ঘরে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে না। সবাই একসঙ্গে ঈদ মিছিল করবে, মেলা উপভোগ করবে, সবাই একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেবে।’
আনন্দমিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছেন জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঈদের আনন্দ সকলের। ঈদের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, ঈদের নামাজের পর ঘরে ঢুকে যাওয়া এবং শুধু নিজেদের পরিবারকে সময় দেওয়া, সেটার পরিবর্তন দরকার। কারণ, ঈদ মানেই জমায়েত, সমাজের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে।’
এই জামাত ও আনন্দমিছিলে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদটাকে সত্যিকার অর্থেই ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল, সেটা হয়তো কয়েক শ বছর পর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিবছর এভাবেই নগরবাসী এক হয়ে ঈদ উদ্যাপন করবে। এখন থেকে ঈদ উৎসব হবে আনন্দময়। ঘরে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে না। সবাই একসঙ্গে ঈদ মিছিল করবে, মেলা উপভোগ করবে, সবাই একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেবে।’