দিদিয়ের দেশমের পর কে হবেন ফ্রান্সের কোচ—এমন প্রশ্ন এখনই উঠতে শুরু করেছে। কারণ, দেশমের সঙ্গে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ বিশ্বকাপের পর। ২০১২ সাল থেকে ফ্রান্সের কোচের পদে থাকা দেশম এই মেয়াদ শেষে আর থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

২০১৮ বিশ্বকাপ জেতা এবং ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা দেশমের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর জায়গায় ফ্রান্সের কোচ হিসেবে জিনেদিন জিদানকে দেখা যাবে কি না। এই প্রশ্নের উত্তরে দেশম বলেছেন, জিদানই তাঁর সহজাত উত্তরসূরি।

ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

রাজধানীর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার শেষ হয়নি ১৬ বছরেও। কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা আশা প্রকাশ করছেন, সাক্ষী হাজির করে দ্রুত মামলার বিচার শেষ করা হবে।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, এটা মিথ্যা মামলা। প্রকৃত আসামিরা আইনের আওতায় আসেনি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগের তীর শেখ হাসিনার দিকেই।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশ হারায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় এবং ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হয়। তবে এ ঘটনার বিস্ফোরক আইনে করা মামলা এখনো বিচারাধীন। 

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তারিখ ধার্য ছিলো। ওইদিন একজন সাক্ষ্য দেন। আগামি ১৩ মার্চ মামলা পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। ওইদিন ৪৬২ জনের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হবে। গত ১৯ জানুয়ারি ১৭৮ জন জামিন পান। সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছেন তারা।

এ সম্পর্কে বিডিআর মামলার প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আলহাজ বোরহান উদ্দিন জানান, বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক আইনের মামলায় এ পর্যন্ত ১৭৮ জন বিডিআর সদস্যের জামিন হয়েছে। আরও ৪৬২ জনের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাদের জামিন বিষয়ে শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৩ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।

তিনি বলেন, “এ মামলার চার্জশিটে ১১৪৫ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৮৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন, আগামী তারিখে আরও সাক্ষী সাক্ষ্য দিবেন। আমররা নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

আরেক প্রসিকিউটর আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে স্বৈরাচারের বীজ নিহিত করে। স্বৈরাচার, স্বৈরশাসন এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরদের হত্যা করেছিলো। দেশের চৌকষ সেনা কর্মকর্তাদের এক জায়গায় করে হত্যা করে। এর ভেতরে স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের বীজ নিহিত ছিলো।”

তিনি বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য কমিশন গঠন হয়েছে। পুনরায় এ মামলা তদন্তে গেলে হিজিবিজি লেগে যাবে। আমরা চাইবো সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার। সম্পূরক চার্জশিট দিলে যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করা যাবে। গত ১৬ বছর ধরে মামলার বিচার বিলম্বিত হয়েছে। আমরা আশা করছি, বিচার আর বিলম্বিত হবে না। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত চালিয়ে যাবো।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, “এটা একটা মিথ্যা মামলা। ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে এটা তো সত্য। তবে প্রকৃত আসামি ধরা পড়েনি। ভিকটিমদের পরিবারও বলেছে ন্যায়বিচার হয়নি। কারণ প্রকৃত আসামিরা বিচারের আওতায় আসেনি। যারা মামলার আসামি তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। কাজেই আশা করছি, তারা ন্যায়বিচারে খালাস পাবেন।”

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান বিদ্রোহ শুরু করে। এ সময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।

পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, লোগো ও পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এ বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর আইন।

এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।

২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জগঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় চার বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।

রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজন মারা যান। খালাস পান ১২ আসামি।

এজলাস কক্ষে আগুন : ৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৯ জানুয়ারি ছিলো মামলার ধার্য তারিখ। তবে নানা নাটকীয়তার পর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিচারকাজ চলবে মর্মে জানানো হয়। এদিকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবিতে ৮ জানুয়ারি রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ৯ জানুয়ারি ভোরে এজলাস কক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আলিয়া মাদ্রাসার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, ভোরে বহিরাগতরা এসে আদালতের এজলাস কক্ষে আগুন দিয়েছে। তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ কারণে ওইদিন মামলার বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ১২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ চলবে মর্মে রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মামলার বিচারকাজ।

পিলখানার হত্যাকাণ্ডের মৃত্যু, হাসিনাদের বিরুদ্ধে মামলা :  পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় মামলার আসামি বিডিআরের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহিমের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ মামলার আবেদন করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।

মামলায় ঘটনাকালীন বিজিবি মহাপরিচালক ও সাবেক সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহমেদ, সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, নুর আলম চৌধুরী লিটন, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, পিলখানা বিদ্রোহ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল, ২০১০ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেল সুপার এবং চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ