দুর্নীতি সব শেষ করে দিচ্ছে, এটা থেকে বের হতেই হবে: ড. ইউনূস
Published: 17th, February 2025 GMT
দেশ দুর্নীতি অনেক গভীরে ঢুকে গেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দুর্নীতি সব শেষ করে দিচ্ছে। এটা থেকে বের হতে না পারলে বাংলাদেশের কোনো গতি নেই, বের হতেই হবে।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসসের
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সামনে বিশাল সম্ভাবনাময় জগৎ, শুধু আমাদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচিগুলো ঠিক করার অপেক্ষা। তারুণ্য আমাদের আছে, প্রাকৃতিক সুযোগ আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি, এই একটা জিনিস সব শেষ করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, যে কোনো সমীক্ষায় আপনারা দেখবেন, বাংলাদেশ দুর্নীতির তালিকায় সর্বনিম্নে। সততা বলে আমাদের আর কোনো জিনিস নেই, শৃঙ্খলা বলে আমাদের আর কোনো জিনিস নেই। কাজেই এই দুর্নীতি থেকে বের না হলে আমরা ভাল কিছু করতে পারব না।
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা আজকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সম্মেলনে এসেছি। কাজেই দুর্নীতি কোথায় আছে, কীভাবে আছে। তাদের কাছে এটা অজানা নয়। এটা থেকে উদ্ধার পাওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গতি নেই। এটা থেকে বের হতেই হবে আমাদের।
তিনি বলেন, এটা (দুর্নীতি) থেকে আমরা কেউ মুক্ত হতে পারছি না। এমন গভীরে ঢুকে গেছি আমরা। আমরা যত বক্তৃতাই করি; এটা অসাড় কথা, যদি আমরা একটা সৎ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারি।
দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড.
দুর্নীতি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব জায়গাগুলোতে অনলাইন ব্যবস্থা আছে, সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়; আমরা দুর্নীতিমুক্ত হই। কারণ, দুর্নীতিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই চলছে না। তারাও চায় আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য হোক, এটা তাদের গবেষণা। আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ব্যক্তিগত সুযোগ নিয়ে ব্যস্ত আছি। জাতীয় সুযোগের জন্য আমরা মোটেই চিন্তিত নই। আমাদের সেই চিন্তা বদলে ফেলতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা সরকারি কার্যক্রমে যুক্ত আছেন, তাদের অনুরোধ জানাই দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে। দুর্নীতি থেকে সরকারকে বের হতে হবে। সরকার যদি দেশের উপকারে আসতে চায়, তাহলে এটা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে হবে।
অনলাইন সেবা চালু করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আপনাদের কাছে আবেদন করবো, আমরা থাকা অবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনলাইন সার্ভিস, যেগুলো তৈরি আছে, সেটা শতভাগ যেন আমরা বাস্তবায়ন করে যেতে পারি।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, কেউ এটা বাধা দেওয়ার জন্য যেন কোমর বেঁধে না লেগে যায়। কোমর বেঁধে লেগে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, এটি (দুর্নীতি) দিয়েই তো তারা সব সুযোগ সুবিধা পেতো। এটা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের হবেটা কী? তারা নানা ব্যাখ্যা দিবে, এটা ব্যাহত করার জন্য। আমরা তাদের (দুর্নীতিবাজদের) মুক্তি দিতে চাই না।
তিনি বলেন, এটা হলো লোহার ফটক (দুর্নীতি), এটা অতিক্রম না করলে উন্নতি বলেন, কিছুই আসবে না। কিচ্ছু হবে না। সম্মান, উন্নতি যাই বলেন, কিছুই হবে না। এটা ভদ্র লোকের সংসারের মতো হতে হবে যে আমরা দুর্নীতিমুক্ত জাতি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যদি দুর্নীতি মুক্ত হতে পারে। তাহলে আমরা কেন পারব না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরাও পারব।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি থেকে বিভিন্ন দেশ বের হয়ে এসেছে, এটা সম্ভব। অসম্ভব কিছু না। শুধু চেষ্টার দরকার, আমাদের প্রতিজ্ঞা দরকার, এটা আমরা করবো।
সম্প্রতি আরব আমিরাত সফরের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আরব আমিরাতের লোক আমাদের দুর্নীতি নিয়ে বলছে, আমরা তোমাদের কোনো ডকুমেন্ট দিয়ে বিশ্বাস করাতে পারছি না। এত ভুয়া। গৃহকাজের লোক। কিন্তু সে সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে মেডিকেল ডক্টর হিসেবে। জলজ্যান্ত আমরা দেখছি, এ ডাক্তার হতে পারে না। কিন্তু সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে। ডাক্তারে সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি নিয়ে ওখানে আসছে। আমরা কতটা বাছাই করবো। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় যে, আমরা এটা কিছুই করতে পারছি না। আমরা কেউ না কেউ তাকে এই সার্টিফিকেট দিচ্ছি। এজেন্টরা যোগাড় করে দেয়, শুধু একটা এজেন্ট না বহু এজেন্ট আছে।
তিনি বলেন, এভাবে আমাদের বহু মেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে গিয়ে কিসের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, কেউ জানেও না। মানব পাচারের যে বিষয়, তা অত্যন্ত বীভৎস। আমাদের মেয়েরা যাচ্ছে, কি অবস্থায় ফিরে আসছে, যদি সশরীরে ফিরে আসতে পারে। কত লাশ কোথায় চলে যাচ্ছে সেটারও কোনো হিসাব নেই। এই কোন দেশ বানালাম আমরা। আমরা তো দায়ী।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিজের কাছে, নিজের সন্তানদের কাছে আমরা কি জবাব দেবো যে, কাউকে আমরা রক্ষা করতে পারছি না। এই মৃত্যু, এই মানব পাচারের জন্য আমরা দায়ী না।
তিনি বলেন, এ ভীষণ রোগ, আমাদের সারা গায়ে ঘা, এটা থেকে মুক্ত হতে না পারলে কোন দিকে অগ্রসর হওয়ার উপায় নেই। আমরা আজকে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা এই ঘা থেকে মুক্ত হবো, সুস্থ হবো, দুর্নীতির দায়ে আমাদের কেউ অভিযুক্ত করতে পারবে না। এই রকম সরকার চালাবো, এ রকম সমাজ চালাবো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র স র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
টস জিতে বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া
হাইভোল্টেজ ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছে ইংল্যান্ড। চোটজর্জর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরও কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করছে ইংলিশরা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) লাহারের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছেন অসি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। অর্থাৎ আগে ব্যাটিং করছে ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ
ম্যাথিউ শর্ট, ট্রাভিস হেড, স্টিভ স্মিথ (অধিনায়ক), মার্নাস লাবুশেন, জশ ইংলিস (উইকেটকিপার), অ্যালেক্স কেরে, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, বেন ওয়ারশুইস, নাথান এলিস, অ্যাডাম জাম্পা, স্পেন্সার জনসন।
ইংল্যান্ড একাদশ
ফিল সল্ট, বেন ডাকেট, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জস বাটলার (অধিনায়ক), লিয়াম লিভিংস্টোন, ব্রাইডন কার্স, জোফরা আর্চার, আদিল রশিদ, মার্ক উড।
বিএইচ