‘মবে’ প্রশাসন নমনীয় ভুক্তভোগীরা ভয়ে
Published: 17th, February 2025 GMT
মবের (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) বিরুদ্ধে সরকারের ও বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি কোনো কাজে আসছে না। কখনও ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লি’, কখনও ‘তৌহিদি জনতা’ নামের মব একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে। আর আক্রান্তরা ভয়ে কথা বলছে না। এই বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা। সারাদেশে গত ছয় মাসে মবের হাতে নৈরাজ্যের ঘটনায় পুলিশের সক্রিয়তার অভাব দেখা গেছে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে একটি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। হুমকির অভিযোগে শনিবার স্থগিত করা হয়েছে ১৪ দিনের ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’। একই দিন অনুমতি থাকলেও চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান মাঝপথে বাতিল করে রেলওয়ে। এর আগে টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্থগিত হয় লালন স্মরণোৎসব। গত শুক্রবার ভূঞাপুরে দোকান থেকে ছুড়ে ফেলা হয় ফুল। বন্ধ করা হয় ঘুড়ি উৎসব। গত ২৫ জানুয়ারি এলেঙ্গায় বাতিল হয় চিত্রনায়িকা পরীমণির কসমেটিক পণ্যের দোকান উদ্বোধন। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস একটি অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি। এর আগে ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮০টি মাজার-দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক ও নারীকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে তৈরি হয় শঙ্কা। তবে এসব অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে জড়ালেও কেউ পার পাচ্ছেন ‘ছোট ভুল’ বলে। আবার ব্যবস্থা নিচ্ছে না নমনীয় প্রশাসন। কোথাও কোথাও মবের ভয়ে মামলা করছেন না ভুক্তভোগীরা। আবার কোথাও কোথাও প্রশাসন বা পুলিশকে মবের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব বাতিলের কারণ উল্লেখ করে ফেসবুকে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, আমাদের দ্রুত অনুসন্ধান থেকে জানা গেল, নাট্যকর্মীদের মধ্যেই একটা অংশ এ উৎসবের বিরোধিতা করে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে হল বরাদ্দ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। কারণ, সরকার শিল্পকলার মাধ্যমে সারাদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিচ্ছে, শনিবারও শিল্পকলায় তিনটি প্রদর্শনী হলো। রোববারও প্রাচ্যনাট্যের শো আছে শিল্পকলায়। তাহলে এখানে কেন পুলিশ উৎসব বন্ধ করতে বলবে? খোঁজ নিয়ে জানলাম, পুলিশ এ রকম কিছু বলেনি। রাতে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা কাউকে উৎসব বন্ধ করতে বলেনি।
অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে দাবি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের। তবে এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এতে লেখা, ‘১১ ফেব্রুয়ারির পর কয়েক দফায় ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধের দাবি ওঠে। পরপর কয়েক দিন অনেক মানুষ দলগতভাবে এসে এ দাবি জানিয়ে যায়। বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়।’
ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব স্থগিতসহ বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক আয়োজনে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলা-ভাঙচুরের নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে। গতকাল রোববার চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি নিখিল দাস ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এই অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে এলাকায় এলাকায় সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক ও প্রযোজক রিয়াজুল রিজু বলেন, ‘লালন উৎসব, ফুলের দোকান, ভালোবাসা দিবস নিয়ে অরাজকতা দেখছি আমরা। এটা মেনে নিতে পারি না। ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি প্রতিটি আলাদা। একটির সঙ্গে অন্যটি গুলিয়ে ফেললে হবে না।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘রাষ্ট্রবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক কিছু না করলে প্রত্যেকের অনুষ্ঠান করার স্বাধীনতা রয়েছে। যারা এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘নারীদের আটকে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। ফৌজদারি আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, উদ্বিগ্ন। সামগ্রিকভাবে নারীর প্রতি অসম্মান, নারীবিদ্বেষী আচরণ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। দেখা যাক। তবে যেখানে ঘটনা ঘটবে, সেখানেই আমরা প্রতিবাদ করতে থাকব।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘কেউ যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, দেশে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে পুলিশ বদ্ধপরিকর।’
টাঙ্গাইলে কারা দায়ী, প্রশাসন কী বলছে?
গোপালপুর থানার ওসি গোলাম মুক্তার আশরাফ জানান, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আন্জু আনোয়ার ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। আয়োজনের বিষয়টি আমাদের জানাননি। একটি উড়ো চিঠির কারণে তারা অনুষ্ঠান বন্ধ রাখেন। কারা এ লিফলেট বিতরণ করেছে, খুঁজে বের করা হবে।
ভূঞাপুরের ওসি রেজাউল করিম বলেন, ফুলের দোকানে তাণ্ডবের খবর শুনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁকে আটক করা হয়েছিল। পরে কেউ মামলা না করায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। অনুষ্ঠানে যদি কোনো অপসংস্কৃতি থাকে, তা আইনশৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটায়।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিটি ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কোনো অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর। আয়োজক কমিটি উপজেলা প্রশাসনকে আগে থেকে অবহিত করলে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এসব অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়।
ভূঞাপুরে বসন্তবরণ উৎসবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় হযরত আলীর বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একই এলাকার মুফতি আনিছুর রহমান। হযরত আলী বলেন, ‘বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে অনৈসলামিক কাজ করে। এ কারণে আমরা বাধা দিয়েছি। তাদের কাছে ফুল বিক্রি করতে মানা করেছি।’
মধুপুরে লালন স্মরণোৎসবে বাধা দেন উপজেলা হেফাজতের সভাপতি ও বাসস্ট্যান্ড মসজিদের খতিব আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল্লাহ, কওমি ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সোলায়মান কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মধুপুরের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদসহ ১০-১২ জন।
কওমি ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান কাসেমী বলেন, ‘লালনের মতবাদ ভ্রান্ত। বাসস্ট্যান্ড মসজিদের সামনে মঞ্চ তৈরি করে নৃত্য পরিবেশন হবে– এটা মানা যায় না। এ কারণে আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। প্রশাসনের লোকজন আমাদের ডেকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। আমরা কোনো শর্ত আরোপ করিনি। লালনের যেসব বিষয় নিয়ে ইসলামের সঙ্গে বিতর্ক রয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে মানা করেছি।’
বরিশালে সাংস্কৃতিক জোট বনাম সমন্বয় পরিষদ
মহান বিজয় দিবসের পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করতে পারবে না বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। এবার বিএনপি-জামায়াতপন্থি সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক জোট’ শহীদ মিনারে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
১৯৮৫ সালে নগরের দক্ষিণ সদর রোডে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পর জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠান করে আসছিল ২৭ সংগঠনের জোট বরিশাল সমন্বয় পরিষদ। গত ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করতে পারেনি। প্রশাসন থেকে অনুমতি পেলেও শহীদ মিনারে জোটের নিয়ন্ত্রণে থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় সমন্বয় পরিষদ সেখানে যায়নি।
গত ৫ আগস্টের পর ৩২ সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে জোট গঠিত হয়েছে। এর আহ্বায়ক জাসাস সভাপতি সাব্বির নেওয়াজ সাগর ও জামায়াতপন্থি বরিশাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক আযাদ আলাউদ্দিন সদস্য সচিব। আযাদ আলাউদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালনে আমরা জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুমতি পেয়েছি।’ সমন্বয় পরিষদ অনুষ্ঠান করতে পারবে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগের দোসর, তাদের শহীদ মিনারে আসার সুযোগ নেই।’
সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কীভাবে পালিত হবে, তা নিয়ে সোমবার পরিষদের সভা হবে। জাতীয় নাট্যোৎসবও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে না পারলে জোটভুক্ত সংগঠনগুলো স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি করবে। একুশের সকালে সম্মিলিতভাবে প্রভাতফেরি করা হবে।’
সিলেটে কৌশলে বাধা
সিলেটে সাংস্কৃতিক অঙ্গন অনেকটা নীরব হয়ে পড়েছে। সম্মিলিত নাট্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা ও বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার হাজরাই গ্রামে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে যাত্রাগানের আয়োজন করে এলাকার লোকজন। কিন্তু অশ্লীলতার অভিযোগ করে বাধা দেয় স্থানীয় কিছু লোকজন। তাদের বাধার কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘যাত্রাগানের অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে এলাকার লোকজন আপত্তি তোলে। কিন্তু সেই ভিডিও তিন বছর আগের। তার পরও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
প্রকাশক পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে ৬ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ১০ দিনের একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের অনুমতি নেওয়া হয়। দু’দিন আগে ‘আলোর অন্বেষণ’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে বিএনপি নেতা সালেহ আহমদ খসরু ও জামায়াতের সেলিম আউয়ালসহ কয়েকজন প্রশাসনে অভিযোগ করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মেলা স্থগিত করা হয়। পরে প্রকাশক পরিষদ জামায়াতের সেলিম আউয়াল ও কামরুল আলমকে জড়িত করে তিন দিনের মেলার আয়োজন করে। সোমবার মেলা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক পরিষদের সভাপতি নাজমুল হক নাজু। তিনি জানান, নানা নাটকীয়তার পর বইমেলা তারা করছেন।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রকাশক পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় সিটি করপোরেশন তাদের মাঠ বরাদ্দ বাতিল করায় মেলা হয়নি।
জাতীয় সংগীত বদলানোর দাবির প্রতিবাদে ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’-এর আয়োজন করেছিল বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকির কারণে তা স্থগিত করা হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে স্থগিত করা হয় বলে জানান নাট্যকর্মী অরূপ বাউল।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, তারা সিলেটে বর্ণমালার মিছিলসহ কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছেন। সরাসরি কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। শহীদ মিনারে এবার তারা ছিলেন না। ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে পুলিশের অনুমতি নিতে। তিনি জানান, এটা অনুমতির বিষয় নয়, সহযোগিতার বিষয়। তার পরও পুলিশ প্রশাসনে আবেদন করা হবে।
১৯ দিনেও অধরা জড়িতরা
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বাওনা গ্রামে ২৮ জানুয়ারি নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচ ঘিরে ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভকারী ও ম্যাচ আয়োজকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে খেলা দেখতে যাওয়া ছয় বছরের শিশু শওকত রাফিসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। ১৯ দিন পার হলেও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, ‘ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা হুমকি দিচ্ছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে মামলা করতে সাহস পাইনি।’
আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা জিয়াউর রহমান জানান, ঘটনার পর দু’দিন এলাকা থেকে পালিয়েছিলাম। পরে থানায় মামলার বিষয়ে বললে তারা টিকিট কেটে খেলা দেখার আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিরিয়ে দেন। তাঁর দাবি, খেলা পরিচালনা করতে অন্তত ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিট কেটে খেলার আয়োজন করা হয়।
হাকিমপুর থানার ওসি সুজন মিঞা জানান, যারা হামলা চালিয়েছে, তারা নানা মতাদর্শের। এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হাকিমপুরের ইউএনও অমিত রায় জানান, যতদূর জেনেছি, কোনো পক্ষ মামলা করতে চায় না। তাই বিষয়টি নিয়ে কিছু করা সম্ভব হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাটে যা ঘটেছে
জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ২৯ জানুয়ারি নারীদের ফুটবল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে মাইকে প্রচার শুনে ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যার আগে স্থানীয় কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।
নারীদের খেলায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এরই মধ্যে সরকারপ্রধানের কার্যালয় জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনো গোষ্ঠীর নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়নের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে নারীদের খেলায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফের ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বৈঠকে স্থানীয় আলেমরা ‘ভুল’ স্বীকার করেন। পরে ওই মাঠে ৫ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবল দলের খেলা হয়।
উড়ো চিঠিতে পণ্ড
চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ উৎসবের মাঝপথে অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করে দেওয়ার কারণ নিয়ে মুখ খুলছে না রেলওয়ে। তবে রেলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, পবিত্র শবেবরাতের ধর্মীয় বিভিন্ন আচার পালনে ব্যাঘাত হওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগের পাশাপাশি উড়ো হুমকিও আসে। তাই মাঝপথে অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করে দেয় রেলওয়ে।
এ ছাড়া শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা আসে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আসা নির্দেশনা জানানো হলে আয়োজকরা অনুষ্ঠান গুটিয়ে নেয়। তবে এ নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ব্যুরো ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মব জ স ট স অন ষ ঠ ন র বসন তবরণ ন ট য ৎসব ব ত ল কর পর স থ ত উপদ ষ ট ব যবস থ ন কর ছ বর শ ল বন ধ র র জন য স গঠন র ঘটন ফ টবল ইসল ম সরক র উপজ ল ল কজন ঘটন য় র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
শেকৃবিতে শিবিরের প্রকাশনা উৎসব বন্ধের নির্দেশ
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রশিবির আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রশাসনের প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশাবুল হক।
জানা যায়, পূর্বঘোষিত ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি এ দুইদিনের অনুষ্ঠানে প্রথম দিন শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের জন্য অপেক্ষা না করে স্টলগুলো তুলে দিতে বলে প্রশাসন। অন্যথায় স্টল ভেঙে ক্লিন করে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। বুধবার বিকাল ৫টার দিকে অনুষ্ঠানে এসে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশাবুল হক বলেন, বাধা দেওয়া হয়নি বরং আমরা আয়োজকদের অনুরোধ করেছি যেন তারা অনুষ্ঠানটি সংক্ষিপ্ত করে এবং আজকের মধ্যেই শেষ করে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ২১ ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতির বিষয় বিবেচনায় নিয়েই প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা না শুনলে পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তবে আয়োজক ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রকাশনা উৎসবটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করা হচ্ছিল এবং এতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা ছিল না।
এদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। প্রকাশনা উৎসবে আগত এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখানে কেবলমাত্র বই দেখতে ও কিনতে এসেছি। এটা তো কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, তাহলে কেন এটি বন্ধ করা হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ হওয়া উচিত, কিন্তু বারবার এভাবে বাধা দেওয়া হলে আমাদের জুলাইয়ের উদ্দেশ্য ব্যহত হয়।
এ নিয়ে শেকৃবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবুল হাসান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য একটি প্রকাশনা উৎসব করেছি। যা আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছি এবং প্রশাসনের মৌন সম্মতিতে করেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি আয়োজন বিবেচনায় রেখে আমরা অনুষ্ঠানটি শহিদ মিনারের পাশে থেকে সরে টিএসসির সামনে আনি। পাশাপাশি রাত ৮ টার মধ্যে সব কার্যক্রম শেষসহ স্থানটি আগের মতো পরিচ্ছন্ন করে রাখারও কথা দিয়েছি।