আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বগুড়া জেলা যুবদলের পাঁচ নেতার পদ স্থগিত
Published: 16th, February 2025 GMT
জাতীয়তাবাদী যুবদল বগুড়া জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত কমিটির পাঁচ নেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদও স্থগিত করা হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় তাঁদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমলূক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়নের নির্দেশে রোববার ১৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
পদ স্থগিত করা ওই পাঁচ নেতা হলেন বগুড়া জেলা যুবদলের সদ্য ঘোষিত কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সুজাউল ইসলাম, স্বাস্থ্য সম্পাদক মো.
সাংগঠনিক সূত্রে জানা যায়, ৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা যুবদলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক দুই সভাপতির মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে যুবদলের জেলা কমিটির সভাপতি ও আবু হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটি ঘোষণার পর অন্তত পাঁচজন নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের নানা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এসব ছবিতে বগুড়া জেলা যুবদলের সদ্য ঘোষিত কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সুজাউল ইসলামকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসানের সঙ্গে তাঁদের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়। এ ছাড়া অন্য নেতাদেরও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার কেন্দ্রীয় যুবদল পাঁচজনের পদ ছাড়াও সব পর্যায়ের সদস্যপদ স্থগিত করে।
বগুড়া জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কমিটিকে বিতর্কিত করতে ভুয়া কিছু ফেসবুক আইডিতে কয়েকজন নেতাকে নিয়ে নানা ভিত্তিহীন ছবি ছড়ানো হয়। কমিটির পরিচিতি সভা করার পরও এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো বন্ধ না হওয়ায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের পদ স্থগিত করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ট র স ল ইসল ম য বদল র সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।