বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 16th, February 2025 GMT
নান্দাইলে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা সদরের ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দ্রুত কমিটি বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির ময়মনসিংহ সদর উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নান্দাইল উপজেলা বিএনপির ১১২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। এ কমিটির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে ইয়াসের খান চৌধুরী এবং সদস্য সচিব এনামুল কাদির। এ ছাড়া ২০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, তিনজনকে সম্মানিত সদস্য ও অন্যদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
একই দিন সাবেক মেয়র এ কে এম আজিজুল ইসলাম পিকুলকে আহ্বায়ক এবং সাবেক কাউন্সিলর রফিকুজ্জামান ভূঁইয়া মনিরকে সদস্য সচিব করে ৮১ সদস্যের পৌর কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে কমিটিগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
কিন্তু উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এ ক্ষোভ থেকেই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিটি বাতিলের দাবিতে মোটরসাইকেল মিছিল বের করেন তারা। গতকাল রোববার দুপুরেও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় নেতাকর্মীরা অবৈধ কমিটি মানি না মানব না, টাকার কমিটি মানি না মানব না, আওয়ামী লীগের কমিটি মানি না মানব না’ বলে স্লোগান দিতে দিতে সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে নান্দাইল পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে মোটরযান শ্রমিক সমিতির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময় বক্তব্য দেন নান্দাইল উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আকরাম হোসেন ফেরদৌস, যুবদল নেতা মোবারক হোসেন উজ্জল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিগত ১৭ বছর যারা আওয়ামী দুঃশাসনে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ঘোষিত কমিটিতে তাদের রাখা হয়নি। রাখা হয়েছে তাদের, যাদের বিগত সরকারি দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে সখ্য ছিল। তাই এ কমিটির বাতিল চান তারা। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব এনামুল কাদির বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান অনেক যাচাই-বাছাই করে ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কেউ না মানলেও কিছু করার নেই।’
ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালাম জানান, যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে, তারা যোগ্য বলেই রাখা হয়েছে। এর পরও যদি সমস্যা থেকে থাকে, তারা বলুক কে কে অযোগ্য, পরে তাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত কর ম র র কম ট সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হাতির পাল ফিরল বনে ক্ষত রয়ে গেল মনে
আড়াই মাস আগে বিয়ে করেন উসমান আলী। বসবাস করতেন নাকুগাঁও এলাকায় একটি সরকারি আশ্রয়ণের ঘরে। গত বছরের ২৯ মার্চ রাতে এক দল বন্যহাতি নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও পাহাড় থেকে নেমে এসে বোরো ক্ষেতে হানা দেয়। এ সময় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে উসমান আলীও হাতি তাড়াতে যান। এক পর্যায়ে হাতির তাড়া খেয়ে পা পিছলে ক্ষেতের আইলে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক জিআই তারের ওপর পড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।
উসমান আলী (২৩) একা নন, তাঁর মতো অনেক কৃষকই হাতি তাড়াতে গিয়ে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত এপ্রিলে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি এলাকায় হাতির আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে গিয়ে মারা যান বাতকুচি টিলাপাড়া এলাকার উমর আলী মিস্ত্রী (৬৫)। তাঁর বড় ছেলে বলেন, ‘মা অনেক আগেই মারা গেছেন। বাবা একাই সংসার সামলাতেন। বাবা জীবিত থাকাকালে আমাদের সংসার নিয়ে কোনো টেনশন হতো না। ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে গিয়ে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন বাবা। এখন বাবা না থাকায় সংসারের সব বোঝা কাঁধে নিয়ে চলেছি। শুনেছি হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়। বন বিভাগে আবেদন করেছি। এখনও কোনো সহযোগিতা পাইনি।’
শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় বছরজুড়ে পাহাড় থেকে লোকালয়ে চলে আসা অর্ধশতাধিক হাতির তাণ্ডব নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন এলাকাবাসী। তবে গত ৩১ অক্টোবর নালিতাবাড়ীর বাতকুচি এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর হাতির পাল জঙ্গলে ফিরে গেছে। অর্থাৎ চার মাস ধরে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন সীমান্তবাসী। হাতির পাল জঙ্গলে ফিরে গেলেও চলতি ফসলের যে কোনো সময় পাহাড় থেকে খাদ্যের সন্ধানে ফের লোকালয়ে ফিরে আসার আতঙ্ক কাটছে না তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা যোসেফ মারাক, লোকান হোসেন ও হাসমত আলীর ভাষ্য, তাদের এলাকা পাহাড়ের পাশে হওয়ায় বিভিন্ন সময় বন্যহাতি এসে তাণ্ডব চালায়। বাড়ির দেয়াল, গাছপালা ভাঙে। তারা জানান, প্রায় চার মাস ধরে হাতি বনে চলে যাওয়ায় কোনো অঘটন ঘটছে না। এখন একটু শান্তি মতো ঘুমাতে পারছেন। কিন্তু ভয় কাটছে না, কারণ ফসলের মৌসুমে ঠিকই হাতির পাল পাহাড় থেকে নেমে আসবে।
নালিতাবাড়ী সীমান্তের বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকার কৃষক এন্ডারসন সাংমা ও লুইস নেংমিজা জানান, শেরপুরের তিন উপজেলার ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের জীবন কাটে হাতি আতঙ্কে। আগে মশাল জ্বালিয়ে, হৈ-হুল্লোড় করে হাতি তাড়ানো যেত। এখন হাতি কোনো কিছু পরোয়া করে না। উল্টো মানুষকেই ধাওয়া করে।
বন বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, ১৯৯৫ সালে ২০-২৫টি বন্যহাতির দল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পিক পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে গারো পাহাড়ে চলে আসে। পরে এসব হাতির পাল ভারতের কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার কারণে আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। ধান ও কাঁঠালের মৌসুম ছাড়াও খাদ্যের সন্ধানে প্রতি রাতেই হাতির পাল জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসে। সারাবছর শেরপুরের শ্রীবরদী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত চষে বেড়ায় এসব হাতি। গত এক দশকে শুধু গারো পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩১টি হাতি মারা গেছে। বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। এ ছাড়া হাজারের অধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে বনের জমি। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড়। একসময় এই বনাঞ্চলে অবাধে ঘুরে বেড়াত বন্য হাতি। কিন্তু পাহাড়ে মানুষের বসতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় হাতির চলাচল। তাদের চলাচলের পথ দখল করে বাগান করা হয়েছে। টিলা কেটে বানানো হয়েছে সড়ক। এ ছাড়া খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছে হাতির পাল। তাই বাধ্য হয়ে লোকালয়ে আসছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ সম্প্রতি সমকালকে বলেন, গারো পাহাড়ের ঝিনাগাতি, শ্রীবর্দী ও হালুয়াঘাট উপজেলায় ২০১৬ সালে ১৩ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। গোপালপুর ও হালুয়াঘাটে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। আরও আট কিলোমিটার সৌরবেষ্টনী নির্মাণ করা হচ্ছে। নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও ৫০ কিলোমিটার সৌরবেষ্টনী ও বায়োফেন্স নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। হাতি প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ৫০টি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।