ছন্দহীন ধারায়ই চলছে শেয়ারবাজার। দরবৃদ্ধির তালিকার পর লেনদেনের শীর্ষ তালিকায়ও মন্দ শেয়ারগুলো ক্রমে দাপট দেখাচ্ছে। টাকার অঙ্কে লেনদেনে শীর্ষ ২০ কোম্পানির মধ্যে বি ও জেড ক্যাটেগরির শেয়ার ছিল আটটি। বাকি ১২টি এ ক্যাটেগরিভুক্ত হলেও এর বেশির ভাগই কারসাজির শেয়ার।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল রবি, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণফোন। এর মধ্যে রবির প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। শেয়ারপ্রতি মাত্র ১০ পয়সা দর বেড়ে সর্বশেষ ২৯ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের সাড়ে ১৩ কোটি টাকার এবং গ্রামীণফোনের ১৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। সাড়ে ৪ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৮ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে এ তালিকায় আরও ছিল– বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, এসিআই এবং রেনাটা।
এর বাইরে লেনদেনের শীর্ষে থাকা এ ক্যাটেগরিভুক্ত বাকি শেয়ারগুলো হলো– বিডি কম, সোনালি পেপার, ওরিয়ন ইনফিউশনস, বিচ্‌ হ্যাচারি এবং ই-জেনারেশন। বি এবং জেড ক্যাটেগরির শেয়ারগুলো ছিল জিকিউ বলপেন, খুলনা প্রিন্টিং, গোল্ডেনসন, খান ব্রাদার্স পিপি, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের মতো শেয়ার।
গতকাল জেড ক্যাটেগরিভুক্ত বেশির ভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিশ্রধারা ছিল এ এবং বি ক্যাটেগরির শেয়ারের ক্ষেত্রে। এ ক্যাটেগরিভুক্ত ২১৫ শেয়ারের মধ্যে ৮২টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৯টির। বি ক্যাটেগরিভুক্ত ৮০ শেয়ারের মধ্যে ৩০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩৮টির। আর জেড ক্যাটেগরিভুক্ত ১০২ শেয়ারের মধ্যে ২৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫৭টির। বাকি শেয়ারগুলোর দর অপরিবর্তিত।
এমন চিত্রের মধ্যে দরবৃদ্ধির শীর্ষ ২০ শেয়ারের মধ্যে বি এবং জেড ক্যাটেগরিভুক্ত শেয়ার ছিল ১৩টি। বাকি সাতটি এ ক্যাটেগরিভুক্ত। সর্বাধিক ১০ শতাংশ দরবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষে ছিল এক সময়ের কারসাজির শেয়ার বিডিকম। ৯ শতাংশের ওপর দরবৃদ্ধি নিয়ে এর পরের অবস্থানে ছিল বন্ধ কোম্পানি এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল মিলস এবং রিজেন্ট টেক্সটাইল।

দর কমায় গতকাল জেড ক্যাটেগরির শেয়ারের আধিক্য দেখা গেছে। দর হ্রাস পাওয়া শীর্ষ ২০ কোম্পানির ১৫টি ছিল জেড ক্যাটেগরিভুক্ত। সোয়া ৮ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়ে দরপতনের শীর্ষ চার কোম্পানি নিউ লাইন ক্লোথিংস, খুলনা প্রিন্টিং, অ্যাপোলো ইস্পাত, নুরানি ডাইং। এসব শেয়ারই জেড ক্যাটেগরিভুক্ত।
ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৩০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭৫টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ৫২টির। কেনাবেচা হয়নি তিনটির। ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২২টির দর অপরিবর্তিত। বাকি ১৫টির মধ্যে ছয়টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯টির। প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৯৮ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেন ১৪ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ৪১৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র দর ব ড় ছ দরব দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সমস্যা সবই জানা, সমাধানে মানসিকতার বদল জরুরি

শেয়ারবাজার সমস্যা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, শেয়ারবাজারের সমস্যা সবই জানা। এগুলোর সমাধানে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।

শেয়ারবাজারের সমস্যা এবং উত্তরণের পথ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে ড. আনিসুজ্জামান গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যালয়ে যান। সেখানে বিএসইসি কর্মকর্তা এবং বাজার অংশীজনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বিএসইসি কার্যালয়ে যান তিনি।

শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৯ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ড. আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। গতকালের বৈঠকে কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম এবং অপর সদস্য এফআইডির অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব উপস্থিত ছিলেন।

ড. আনিসুজ্জামান প্রথমে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, সিডিবিএলের এমডি এবং ডিএসই ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক, নিরীক্ষক, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উভয় বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার অংশ নেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসি বা বাজার অংশীজনের কেউই বাজারের জানা সমস্যার বাইরে নতুন কিছু জানাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন, তার সবটাই জানা। সমস্যার কথা সবাই জানে। তবে সমাধান কীভাবে চান, সে বিষয়ে শুনতে চাই।’ তিনি সবার কাছে সমাধানের লিখিত প্রস্তাব চেয়েছেন।

শেয়ারবাজার বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণের আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ের বাইরে ব্রোকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বিএসইসির চেয়ারম্যান ডিএসইর পরিবর্তে তা সিএসইতে করার পক্ষে মত দেন। তাঁর কথা, ডিএসইতে এ ধরনের বৈঠক বহু হয়, সে তুলনায় সিএসইতে কম হয়।

সূত্র জানায়, বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটিকে শেয়ারবাজারের বর্তমান আকার এবং এর কাঠামোগত বিষয়ে ধারণা দেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, এ বাজার বর্তমানে বড় ধরনের যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, সেগুলোর অন্যতম হলো– নেগেটিভ ইক্যুয়িটি ইস্যু, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে সুশাসনের অভাব, ভালো আইপিওর অভাব, বিনিয়োগ পণ্যের ঘাটতি এবং বাজার কারসাজিসহ শেয়ারবাজার ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। 

আলোচনায় ডিএসইর চেয়ারম্যান জানান, শেয়ারবাজারের লেনদেন ব্যাপক হারে কমায় লেনদেনে উৎসে কর বেশি থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই উৎসে কর কমানো দরকার। সিএসইর চেয়ারম্যান জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন চালু হবে। প্রাথমিকভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে স্বর্ণ, তুলা, পাট বা কমিশন যেসব পণ্য কেনাবেচার অনুমোদন দেবে, সেগুলো কেনাবেচা হবে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপালী চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভালো মূল্য ও কর সুবিধা না থাকায় দেশের বড় ও স্বনামধন্য কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা হলে সবাই সেকেন্ডারি শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে আইপিও নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।

বৈঠকে অন্যরা স্টক এক্সচেঞ্জসহ লেনদেনে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে জানান। তারা নগদ লভ্যাংশ বিতরণে বিলম্ব বা না দেওয়া ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং আইপিওতে ভালো কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে কর রেয়াত সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেষ কার্যদিবসে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
  • সমস্যা সবই জানা, সমাধানে মানসিকতার বদল জরুরি
  • পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
  • দরপতনের ধারায় শেয়ারবাজার
  • সূচকের পতন, কমেছে শেয়ারদর
  • ২ বছর মেয়াদের নতুন ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু