বেলজিয়ামে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সুযোগ
Published: 16th, February 2025 GMT
ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম। দেশটির অন্যতম ভাষা হলো ডাচ ও ফ্রেঞ্চ। পশ্চিম ইউরোপের উন্নত এই দেশ বিশ্বের অন্য দেশের মতো উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের জায়গা হতে পারে। সেনজেনভুক্ত ছোট এ দেশের রাজধানী ব্রাসেলস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস আছে বেলজিয়ামে। তুলনামূলক কম খরচে শিক্ষা গ্রহণ এবং কাজের সুযোগ আছে। তাই দেশটিতে এখন পাড়ি জমান অসংখ্য শিক্ষার্থী।
বেলজিয়ামের শিক্ষার মান উন্নত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আইটি, পদার্থ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, প্রকৌশল, আইটি, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়ার জন্য ভালো দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বেলজিয়ামে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংও ভালো।
বৃত্তি নিয়ে অনেকে বিদেশে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে এ সুযোগ আছে। বৃত্তি নিয়ে ইউরোপে পড়তে চাইলে ওই মহাদেশের বেলজিয়াম হতে পারে পড়ার দেশ।
এখানে আইইএলটিএস ছাড়াই বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য স্কলারশিপের তালিকা তুলে ধরা হলো—
গভর্নমেন্ট অব
বেলজিয়াম স্কলারশিপ
বেলজিয়াম সরকার এক বছরের বিশেষ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রাম বা চার থেকে ছয় মাসের উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সে বৃত্তি দেয়। উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এআরইএস নামের এ বৃত্তিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আইইএলটিএস ছাড়াই আবেদন করতে পারেন। এ বৃত্তিতে বেলজিয়াম সরকার নির্ধারিত যে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়নে অধ্যয়নের সুযোগ পেতে পারবেন যে কেউ।
মাস্টার মাইন্ড স্কলারশিপ
মাস্টার মাইন্ড স্কলারশিপ বেলজিয়ামের আঞ্চলিক সরকার বা ফ্ল্যান্ডার্স সরকারের অর্থায়নের একটি বৃত্তি। ফ্ল্যান্ডার্স ও ব্রাসেলসে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩০টি স্কলারশিপ দেওয়া হয়। কিছু স্কলারশিপে আবাসন, চিকিৎসা বীমা, টিউশন ফি মওকুফসহ ৮ হাজার ২০০ ইউরো শিক্ষা ভাতা দেয়।
ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স
স্কলারশিপ
ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তিগুলোর
মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এ বৃত্তির জন্য সারাবিশ্ব থেকে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হয়ে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ স্কলারশিপটি ইউরোপে বিভিন্ন মাস্টার্স ও ডক্টরাল স্টাডি প্রোগ্রামের জন্য। আপনি বেলজিয়ামে পড়ার জন্য আইইএলটিএস ছাড়া ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের জন্য
আবেদন করতে পারেন। বৃত্তিটি শিক্ষার্থীদের মাসিক ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো জীবনযাত্রার খরচসহ টিউশন ফি,
ভিসা ফি, ভ্রমণ ও শিক্ষার্থীদের বীমা খরচ
দিয়ে থাকে।
ভিএলআইআর-ইউওএস স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
ভিএলআইআর-ইউওএস বৃত্তি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ টিউশন ফি ছাড়াই, জীবনযাত্রার খরচ, বিমানে যাতায়াতের টিকিট ও মাসিক অনুদান দেয়। এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সর্বাধিক আকাঙ্ক্ষিত স্কলারশিপ প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে একটি। ফ্লেমিশ ইউনিভার্সিটি বা কলেজে সম্পূর্ণ অর্থায়নে পড়ার জন্য প্রায় ৩৫ জন বিদেশি ছাত্রকে প্রতিবছর এই বৃত্তি দেওয়া হয়। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউর প র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয়দের বিদেশে পড়াশোনায় আগ্রহ কমছে, কারণ কি শুধুই রাজনীতি
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের অনেক নামী প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যান ভারতের ছাত্রছাত্রীরা। করোনাপরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও শিক্ষার্থীদের বিদেশযাত্রার প্রবণতা কমছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, বিদেশে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১৫ শতাংশ। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য দেশে যাওয়ার আগ্রহ কমছে ভারতীয়দের?
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান
ভারতের সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালে বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তুলে ধরেছে। এ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরে (২০২৪) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ শতাংশ কমেছে।
লোকসভায় এক সংসদ সদস্যর প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৯৮৯ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী অন্য দেশে পড়াশোনা করেছেন। ২০২৪ সালে এসে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন ভিনদেশে। অর্থাৎ এক বছরে সোয়া লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে।
সবচেয়ে বেশি কমেছে কানাডায়। এ দেশে শিক্ষার্থী কমার হার ৪২ শতাংশ। ইংল্যান্ডে প্রায় ২৮ শতাংশ, আমেরিকায় প্রায় ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কম পড়তে গেছেন।
আরও পড়ুনইংল্যান্ডে পড়াশোনা: খণ্ডকালীন চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ, আইইএলটিএসে ৬.৫ স্কোর হলে আবেদন ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কাছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাবরই খুব আকর্ষণীয়। তবে অন্য দেশেও পড়ার ঝোঁক রয়েছে। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অন্য কয়েকটি দেশে বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাশিয়া ও ফ্রান্স। ২০২৩–এর তুলনায় ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, ফ্রান্সে সংখ্যাটি ১৪ শতাংশ।
রাশিয়ার ক্ষেত্রে মেডিকেলে পড়তে যাওয়ার ঝোঁক বেশি। হাজারো শিক্ষার্থী সে দেশে যাচ্ছেন ডাক্তারি পড়তে। সেখানে পড়াশোনার খরচ যেমন কম, তেমনি মেডিকেলের পাঠ নেওয়ার জন্য কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি থেকে বসবাসের ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। শুধু এমবিবিএস নয়, পিএইচডি করতেও অনেকে রাশিয়ায় যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনলিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ৩৫০টির বেশি প্রোগ্রামে পড়াশোনা, স্কলারশিপের সুবিধা, সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ১৪ নভেম্বর ২০২৪ছাত্র কমার কারণ—
বিদেশে ভারতীয়দের পড়তে যাওয়ার প্রবণতা কমার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক কারণ। বিভিন্ন দেশে দক্ষিণপন্থী দলের উত্থান হয়েছে। এর ফলে কঠোর হয়েছে অভিবাসননীতি। ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে গন্তব্য হিসেবে আমেরিকা, ইউরোপের একাধিক দেশ আগের মতো আর অনুকূল নয় বলে তাঁদের মত।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি ছাত্রসংখ্যা কমার পেছনে কিছুটা দায়ী বলে মন্তব্য তাঁদের। এ ক্ষেত্রে কানাডার প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এ দেশেই সবচেয়ে বেশি কমেছে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। তার প্রভাব পড়েছে ভিসার ক্ষেত্রে।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার যে নীতি, তা কোনো ভিনদেশির পক্ষে সুবিধাজনক নয়। কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। এর ফলে এই দুটি দেশে পড়তে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অন্য দিকে ঝুঁকেছেন। ইউক্রেন, রাশিয়ায় অনেক মেডিকেল ছাত্র পড়তে যেতেন, সেখানে যুদ্ধ হলেও যাচ্ছেন। আমেরিকা বা কানাডার মতো সেখানে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নেই, পড়াশোনার খরচও কম।’
বিদেশে না যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বিক মন্দা, শিল্প উৎপাদনে ঘাটতি, কর্মসংকোচন নিয়োগের ক্ষেত্রকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। অতীতে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যেতেন যে লক্ষ্য নিয়ে, সেখানে কোথাও নিয়োগ খুঁজে নেওয়া, তেমন পরিস্থিতি আর নেই। বড় বহুজাতিক সংস্থায় কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজ, আইইএলটিএসে ৫.৫–এ আবেদন০২ অক্টোবর ২০২৪আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে জনকল্যাণের ধারণাটা ফিকে হয়ে আসছে। যে উদারনৈতিক নীতির ফলে অন্য দেশের ছাত্রছাত্রীরা স্বাগত ছিল, সেখানে আজ বাধা তৈরি হয়েছে। এর ফলে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ভারতীয় ছাত্রদের যে মেধা ও পরিশ্রম, তার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। এই প্রবণতা আগামী দিনেও বজায় থাকবে।’
শুধু বিদেশযাত্রা নয়, দেশের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট করতে চাইছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার গুরুত্ব কমছে। বাজেট কমছে, নিয়োগের সম্ভাবনা কমছে। তাই কলেজে ছাত্র ভর্তি কমে গিয়েছে। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে সম্ভবত সেই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বাইরের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার উৎসাহ কমে যাচ্ছে অথবা যোগ্যতাতেও ঘাটতি হচ্ছে।’