Samakal:
2025-04-21@08:19:52 GMT

দেড় মাস ধরে মায়ের সন্ধানে ছেলে

Published: 16th, February 2025 GMT

দেড় মাস ধরে মায়ের সন্ধানে ছেলে

দেড় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাসিন্দা রেবেকা বেগম। তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ছেলে শরীফুল ইসলাম (১৮)। মায়ের নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করলেও পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। 
রেবেকা বেগম রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী। গত ১ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। 
শরীফুল ইসলামের ভাষ্য, তাঁর মায়ের কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের কাছে যেতেন। কখনও তারা গিয়ে নিয়ে আসতেন, আবার কখনও একাই ফিরে আসতেন। গত ১ জানুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন আগের মতোই মা ফিরে আসবেন। কয়েকদিন যাওয়ার পর ফিরে না আসায় নিকট আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেন। সেখানে না পেয়ে পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাঁর মায়ের সন্ধান পাননি। 
মায়ের খোঁজ পেতে রাজবাড়ী জেলা শহর ছাড়াও ফরিদপুর, মাগুরাসহ আশপাশের জেলায় পোস্টারিং করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই মায়ের সন্ধান পাচ্ছেন না। গত ২৫ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু পুলিশেরও তেমন তৎপরতা নেই। মাকে খুঁজতে খুঁজতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। 
যে কোনো মূল্যে মাকে ফেরত চান জানিয়ে শরীফুল বলেন, ‘আমি ফরিদপুর পলিটেকনিক কলেজে পড়ছি। সামনে আমার দুটি পরীক্ষা। পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে পারছি না। মাকে খুঁজব নাকি পড়াশোনা করব। শুধুই মনে হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গ্রুপে মেসেজটা দিলে ফল পাওয়া যাবে। এই চিন্তা করতে করতে দিন কাটে আমার। একটি পরীক্ষা খারাপ হলে একটি বছর শেষ।’ 
সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আব্দুস সালাম জানান, ওই জিডিটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ইজতেমায় ছিলেন। কয়েক দিন আগে রাজবাড়ী ফিরেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছেন। 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবন্ধী নারীর অনন্য পাঠশালা

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে এক সাহসী নারীর হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসাধারণ এক পাঠশালা। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক সীমাবদ্ধতা জয় করে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন জয়ন্তী রায়।
৪০ বছর বয়সী জয়ন্তীর জীবন কখনও সহজ ছিল না। তিনি কুঁজো, সোজা হয়ে চলতে পারেন না। ঝুঁকে চলতে হয়। এই প্রতিবন্ধকতার কাছে কখনও তিনি মাথা নিচু করেননি। এসএসসি পাস করেও অর্থাভাবে কলেজে যেতে পারেননি। কৃষক হরিচাঁন রায়কে বিয়ে করে আরও কঠিন এক সংসার জীবন শুরু হয়। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসারে এক দিন সিদ্ধান্ত নেন– শুধু নিজের জীবনের উন্নতি নয়, এলাকার শিশুদেরও পড়াতে হবে।
বাড়ির উঠানের এক গাছতলায় মাত্র ১০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর পাঠশালা। শিশুপ্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে নিলেও অনেকেই দিতে পারত ৫০ বা ১০০ টাকা। কিন্তু অর্থ নয়, জয়ন্তীর মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছতলার পাঠশালা সরিয়ে নেওয়া হতো পাশের মন্দিরে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক বন্যাবাড়ি গ্রামে একটি রাস্তার কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ফেলেন এই অনন্য পাঠশালা। এর পর থেকেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ইউএনও জয়ন্তীকে বলেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে আর কোনো টাকা নিতে হবে না। উপজেলা অফিস থেকে তাঁর সম্মানী দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে পেয়েছেন জয়ন্তী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁর পাঠশালাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে। এখন জয়ন্তী প্রতি মাসে পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা সরকারি বেতন। পাশাপাশি ইউএনওর উদ্যোগে টিআর প্রকল্পের 
আওতায় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি টিনশেড পাঠশালা। লাগানো হয়েছে তিনটি বৈদ্যুতিক পাখাও। জয়ন্তীর বিদ্যালয়ে এখন ৩০ জন শিশু পড়াশোনা করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিশুদের পাঠ নিতে হতো। এখন সুন্দর ঘরে বিনামূল্যে চলছে পাঠদান।
অভিভাবক শিউলী বিশ্বাস ও সবিতা রায় বলেন, জয়ন্তীর পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। আগে যা কল্পনাও করতে পারেননি তারা। দারিদ্র্যের কারণে তারা অনেকেই শিশুদের পড়ানোর জন্য জয়ন্তীকে টাকা দিতে পারতেন না। ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা বলেন, তিনি পাঠশালার 
জন্য একটি ঘর ও জয়ন্তীর পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিনা বেতনে এ পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা 
পড়াশোনা করছে।
নিজেই এক সময় আলো থেকে দূরে সরে পড়া জয়ন্তী এখন অন্যদের জন্য বাতিঘর হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী নারীও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। যতদিন বাঁচি, ততদিন শিশুদের শিক্ষা দিয়ে যাব।’
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মঈনুল হক বলেন, এটি একটি অনন্য পাঠশালা। জয়ন্তী যা করেছেন, তা এ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। এ পাঠশালার শিশুদের জন্য একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মের গরমে শিশুদের কষ্টের কথা ভেবে প্রশাসন থেকে তিনটি পাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জনকল্যাণে উপজেলা প্রশাসন এমন কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাজে উঠতে গিয়ে পা পিছলে নদীতে নিখোঁজ নাবিক
  • প্রতিবন্ধী নারীর অনন্য পাঠশালা
  • মাথা ঘোরার সমস্যা হলে কেন চেকআপ করা জরুরি
  • বেলা শেষের যাত্রী
  • বিমুখতা নয়, সচেতনতা