বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ বাকিতে তেল দিচ্ছে না। এ কারণে রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রায় ছয় দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সেবা বন্ধের নোটিশও টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। বাড়তি খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা নিতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারিভাবে সেবা নিচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে তাঁর জেলা শহরে কিংবা ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের নিম্ন আয়, তাদের সামর্থ্য নেই। তারা রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখেই চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উত্তর-পূর্ব পাশে গাড়ি রাখার গ্যারেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্স তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহীর ভাড়া দেড় থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের এ ভাড়া ৬০০ টাকা।
পৌর সদরের বাসিন্দা শাকিল বলছিলেন, তিনি তাঁর অসুস্থ চাচিকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে চাইলে তাঁকে জানানো হয়, এ সেবা বন্ধ রয়েছে। তাঁকে প্রায় চার গুণ টাকা দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এলাকার পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন শতাধিক রোগী এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী বা ঢাকায় যেতে হয়। এ জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন পড়ে। সরকারিভাবে এ সেবা না পেয়ে বিপদে পড়ছেন রোগী ও স্বজন।
তালন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহেল রানার ভাষ্য, তাঁর ছোট ভাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় বিপদে পড়তে হয়। সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে পরে দেড় হাজার টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। এভাবে রাজশাহীতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, তেলের বরাদ্দ না থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যাবে। কবে নাগাদ এ সেবা চালু হবে, তা বলতে পারেননি কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের চালক আবদুস সালাম বলেন, তেলের বরাদ্দ না আসায় সেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাম্পে তেলের বাকি আছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তারা আর বাকি দিতে রাজি না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

বার্নাবাস হাসদা। তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না পেলে এ সেবা চালু করা সম্ভব হবে না। পর্যাপ্ত ওষুধসহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা।
এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মাহবুবা খাতুন বলেন, তানোরসহ কিছু উপজেলায় সমস্যা হয়েছে। তেলের বরাদ্দ যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। শিগগিরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অ্যাম্বুলেন্স সমস্যার বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স বর দ দ বন ধ র উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ বছরের পুরোনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘উলচাপাড়া শাহী জামে মসজিদ’

বিশাল চওড়া ফটক‌। ফটকের ওপর কারুকাজে নির্মিত দুটি মিনার। সুউচ্চ ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে ছয়টি ছোট–বড় মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ চোখে পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উলচাপাড়া এলাকার এই মসজিদের নাম উলচাপাড়া মসজিদ। এলাকাবাসীর কাছে এটি ‘উলচাপাড়া শাহী জামে মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত।

মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। এটি বর্তমানে দেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।

চার ফুট উচ্চতার মজবুত প্ল্যাটফর্মের ওপর চুন–সুরকি, ইট আর কালো পাথরের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মসজিদের অবকাঠামো। মসজিদের দেয়ালে অসংখ্য খোপকাটা মৌলিক টেরাকোটার অলংকরণ। মসজিদটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিমাংশে নামাজের কক্ষ আর নামাজের কক্ষের পূর্ব পাশে বারান্দা। মসজিদের ওপর বর্গাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট নামাজের কক্ষ এবং পূর্ব ভাগে ছোট তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি বারান্দা আছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্থানের তালিকায় উলচাপাড়া মসজিদের নাম উল্লেখ আছে। সেখানে উলচাপাড়া মসজিদের বিষয়ে উল্লেখ আছে, মসজিদের নির্মাণ কৌশল ও মসজিদে ব্যবহৃত ইট দেখে মনে হয় যে এটি সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত। মসজিদে পাওয়া শিলালিপি পাঠ থেকে জানা যায়, ১৭২৭–২৮ সালে কোনো বণিক কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।

এই মসজিদে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন হাফেজ মাওলানা উবায়দুল্লাহ। অসুস্থতার কারণে তিনি বর্তমানে আসতে পারেন না। বর্তমানে মসজিদ তত্ত্বাবধান করছেন মাওলানা আখতারুজ্জামান। কথা হলে তাঁরা দুজন প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদটি ৩০০ বছরের পুরোনো। অনেক মানুষ এই মসজিদ দেখতে এলাকায় আসেন। তবে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে তাঁরা বেশি কিছু জানেন না বলে জানালেন।

মসজিদে কথা হয় ইতিকাফে বসা উলচাপাড়ার গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের (৬৫) সঙ্গে। তাঁর বাবা এনায়েত আলী এই মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১০৫ বছর বয়সে এনায়েত আলী মারা যান। হাবিবুর রহমানের দাদা মোহাম্মদ তোরাব আলী মৃধাসহ পরদাদারা এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন।

গ্রামের বাসিন্দা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের প্রভাষক মোবারক হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। এর পর থেকে মসজিদের কোনো সংস্কারকাজ এলাকাবাসী চাইলেও করতে পারছেন না। মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। প্রতিদিন অনেক মানুষ মসজিদটি দেখতে এই গ্রামে আসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ