বরগুনার আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, ময়লা ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পায়রা নদী ও বাসুগী খালে। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলার কারণে নদী ভরাট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।
বরগুনা ও আমতলীর মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত পায়রা নদী। প্রমত্তা পায়রার সঙ্গে যুক্ত বাসুগী খাল। প্রবহমান পায়রা নদী ও খাল ঘিরে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাজার।
জনগুরুত্বপূর্ণ এ পৌর শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদীতীর ঘেঁষে এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ বাজারের পশ্চিম পাশে বাসুগী খালের পাড়ে ফেলছেন। এসব বর্জ্য নদী খালের পানিতে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। ফলে পায়রা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব ময়লা নদীর স্রোতে ভেসে যায়।
এ বিষয়ে কথা হলে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে পৌরসভায় কোনো ডাম্পিং ইয়ার্ড নেই। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ না পাওয়ায় সে প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদীতীর ঘেঁষে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা ফেলছেন। সেখানে রয়েছে হাসপাতাল, বাজার ও ছোটখাটো কারখানার বর্জ্য। তীরসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও যে যার মতো গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলছে। কাক, মুরগি, কুকুর সেগুলো ঘাটাঘাটি করছে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায়। বর্জ্য নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এতে পায়রা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি এখন বিষে পরিণত হয়েছে। সেই পানি গোসল, রান্নাসহ নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করছেন অনেকে।
একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে বাসুগী খালেও। পলিথিন, চিপস, বিস্কুটের খোসা ভাসছে খালের পানিতে। হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাচের বোতলসহ নানা ধরনের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য দেখা গেছে সেখানে। শুধু পায়রা বা বাসুগী খাল নয়; ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি রোডের পূর্ব পাশের ডোবা, সাত ধারা, খোন্তাকাটা, সবুজবাগ, একে স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
পায়রা নদী তীরবর্তী গাছ বাজারের বাসিন্দা রাবেয়া ও হনুফা বেগম বলেন, গাঙ্গের পানি দিয়া মোরা নাওয়া রান্দাসহ সব কাজ হরি। পানি নষ্ট অইয়া যাওয়ায় নাওনের পর গা খালি চুলকায়।
লঞ্চঘাট এলাকার জেলে রাজু খাঁ বলেন, পায়রা নদীতে একসময় ইলিশ, পাঙাশ, পোয়া, তপসী, গলদা চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্জ্যের কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক জেলে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
আক্ষেপ করে জেলে নিজাম খাঁ বলেন, পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আগের মতো মাছ পাই না। ইলিশ, পাঙাশ ও তপসী মাছ নাই বললেই চলে। সারাদিন বড়শি নিয়ে বসে থাকলেও মাছ পাওয়া যায় না।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অধ্যাপক (অব.
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বর্জ্য ব্যস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া আছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, নদীর পানি ও পরিবেশদূষণ ময়লা ব্যবস্থাপনা জরুরি।
পৌরসভাকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্টারলিংকে আড়ি পাতার সুযোগ নতুন নির্দেশিকায়
স্যাটেলাইটনির্ভর ইন্টারনেট–সেবায় আইনানুগ আড়ি পাতার সুযোগ রেখে নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট–সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলে সেখানেও আড়ি পাতার সুযোগ থাকবে।
নতুন নির্দেশিকা বা গাইডলাইনের নাম ‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ফর নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর ইন বাংলাদেশ’। গতকাল বুধবার এটি জারি করা হয়।
বিটিআরসি বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন নির্দেশিকা করেছে। স্টারলিংক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এটি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সেবা দেয়। ইলন মাস্কের
সঙ্গে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কলে স্টারলিংক প্রসঙ্গে আলোচনা করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশিকায় আড়ি পাতার সুযোগবিটিআরসির নির্দেশিকায় ২৬(৪) অনুচ্ছেদে আইনানুগ আড়ি পাতা বা ল’ফুল ইন্টারসেপশনের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, নির্ধারিত জাতীয় সংস্থার প্রয়োজন অনুসারে লাইসেন্সধারী বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত তার ‘গেটওয়েতে’ প্রবেশাধিকার প্রদান করবে এবং আইনানুগ আড়ি পাতার ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে লাইসেন্সধারী সরকারের নির্ধারিত সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য প্রদান করবে। এ ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য লাইসেন্সধারীর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি থাকতে হবে।
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবার লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১, ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন ১৯৩৩, টেলিগ্রাফ আইন ১৮৮৫–এর পাশাপাশি অন্যান্য অধ্যাদেশ, বিধি ও নীতি মেনে চলতে হবে।
লাইসেন্সধারী সেবা দেওয়ার আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে অন্তত একটি ‘গেটওয়ে সিস্টেম’ স্থাপন করবে বলেও উল্লেখ আছে নির্দেশিকায়। এতে আরও বলা হয়, বিটিআরসি লাইসেন্সধারীকে বাড়তি গেটওয়ে স্থাপন করতে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যবহারকারীর কার্যক্রম ও পরিবেশন স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে হতে হবে। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্র্যাফিক বহনের জন্য লাইসেন্সধারীকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
আড়ি পাতার সুযোগ রাখতে হলে সেটার জন্য স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে। কারণ, আড়ি পাতা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বি এম মইনুল হোসেন, অধ্যাপক, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়আবেদন ফি ৫ লাখ টাকানির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারীর সেবার ট্যারিফ বা মূল্য বিটিআরসি অনুমোদিত হতে হবে। লাইসেন্স নেওয়ার আবেদন ফি ৫ লাখ টাকা, লাইসেন্স নেওয়ার ফি ১০ হাজার মার্কিন ডলার (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি) এবং বার্ষিক নিবন্ধন ফি ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৭ লাখ টাকা) এবং আইওটির জন্য ১০ হাজার ডলার (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি)।
সেবাদাতাকে প্রথম দুই বছর বিটিআরসির সঙ্গে কোনো রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে না। তবে তৃতীয় বছর থেকে ৩ শতাংশ হারে এবং ষষ্ঠ বছর থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং তাদের কার্যক্রম চালাতে হবে অন্তত ৫ বছর।
আড়ি পাতার ‘স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে’অধিকারকর্মীরা আড়ি পাতার টেলিযোগাযোগে বিরোধী। তবে কেউ কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্টভাবে আড়ি পাতার সুযোগ রাখার ক্ষেত্রে আপত্তি দেখান না। কিন্তু সমস্যা হলো, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ আইনে আড়ি পাতার যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তার ঢালাও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আড়ি পাতার সুযোগ রাখতে হলে সেটার জন্য স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে। কারণ, আড়ি পাতা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। কীভাবে আড়ি পাতা হবে, কারা করবে, কাদের দায়বদ্ধ করা যাবে—এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট না হলে সব আগের মতোই চলবে। এ সরকারের কাছে প্রত্যাশা, আড়ি পাতা যেন সত্যিকারের আইনানুগ ও জবাবদিহিমূলক হয়।
বি এম মইনুল আরও বলেন, দেশীয় আইআইজি থেকে ব্যান্ডউইডথ নিলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা সরকার হাতেই থাকবে। ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে সরকারকে বক্তব্য স্পষ্ট করতে হবে।