Samakal:
2025-03-26@07:57:52 GMT

রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি

Published: 16th, February 2025 GMT

রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি

রাজনীতিতে ভুল করেননি– এমন কোনো রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যাঁর ভুলের পরিমাণ যত কম, তিনি তত বেশি সফল। তাঁকে জনগণ তত বেশি ভালোবেসে মনে রেখেছে। রাজনীতিতে ভুল বলতে এমন সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বোঝায়, যা অবিবেচনাপ্রসূত; বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে এমন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা সমাজের একাংশ বা পুরো রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এসব ভুল সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। 
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো অসংখ্য ভুল করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তা স্বীকার করতে চায় না। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলগুলো তাদের ঐতিহাসিক ভুলে অনড়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ দাবিদার দলগুলো সরকারে থাকাকালীন দমনপীড়ন, হামলা-মামলা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমন করে। রাষ্ট্রীয় দুর্যোগেও ভুলের দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। 

গত ১৫ বছরে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, তা নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে কেবল প্রতারণা নয়, রীতিমতো জনগণের ক্ষমতাকে হেয় করেছে। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ যে গণবিচ্ছিন্নতার চর্চা করেছে এবং জনগণের মধ্যে বিরাগ সৃষ্টি করেছে– তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবহেলা ভুলের রাজনীতির মূল কারণ। নেতারা নিজেদের স্বার্থে দুর্নীতি, অর্থের অপব্যবহার ও বিভাজন সৃষ্টি করেন, যা জনগণের আস্থা কমায়। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সহিষ্ণুতা ও গঠনমূলক বিতর্কের অভাবে বিভাজন বাড়ে, যা দেশের সংকটকে আরও গভীর করে তোলে। 

বাংলাদেশের বামপন্থি দলগুলো দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কিছু ভুল রাজনীতির কারণে তাদের শক্তি ও জনসমর্থন কমে গেছে। তাদের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার অভাব, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের সমস্যা ও চাহিদার সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারা, কার্যকর নেতৃত্ব ও দলীয় কাঠামোর অভাব, আধুনিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থতা, শক্তিশালী জোট ও কার্যকর কৌশল তৈরি করতে না পারা উল্লেখযোগ্য। এসব কারণে বামপন্থি দলগুলো তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, তবে তাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সবসময় সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং গণতান্ত্রিক চর্চায় ভালোমন্দের দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তবু এ দীর্ঘ সময়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো– বিভেদ ও প্রতিহিংসা নয়, বরং সমঝোতা, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণই একটি জাতিকে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। যদি দলগুলো এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করতে পারে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যেই এটি একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে আপন স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।
বিএনপি তাদের রাজনৈতিক ভুল ও ভুলের রাজনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে বলছে, অতীতের বিভাজন, বিরোধ ও প্রতিশোধের রাজনীতি শেষ করতে হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তারা বিরোধীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে, সহযোগী হিসেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে মামলার ধারা, দমনপীড়ন বা শক্তি প্রয়োগের পথ পরিহার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। বর্তমানে জনগণ সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের দাবি করছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে। 
বিএনপি মনে করে, গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি নির্বাচন, যা দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সহায়ক। অতীতে সহিংস রাজনীতির ফলে দেশের ক্ষতি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আলোচনা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা এবং দেশের স্বার্থে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সব রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক দর্শন গড়ে তুলতে হবে।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি’, যা ‘সবার বাংলাদেশ’ নির্মাণের ভিত্তি– এই ধারণাটি তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের মূল বিষয়, যা গণতন্ত্র, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক। এটি বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের পুনর্জাগরণ ও মর্যাদার ঐতিহাসিক সনদ, যা বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা এবং ভিশন ২০৩০-এ যুক্ত রয়েছে।

সাঈদ খান: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত ভ ল র র জন ত গণত ন ত র ক ক র জন ত র জন ত ক র জন ত ত জনগণ র গ রহণ দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মিরসরাইয়ে শহীদ মিনারে ১৪৪ ধারা জারি

উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলের দুটি অংশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। আজ বুধবার ভোর সাড়ে ছয়টায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি জানান মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের নবগঠিত কমিটি এবং পদবঞ্চিত সংক্ষুব্ধ কর্মীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ২৪ মার্চ থেকে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে মর্মে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসন চত্বর ও এর আশপাশের ৫০০ গজ এলাকায় ২৬ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ২৭ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ সময় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য-আগ্নেয়াস্ত্র, সব প্রকার দেশীয় অস্ত্র বহনসহ ওই এলাকায় পাঁচজনের অধিক ব্যক্তির একত্রে চলাফেরা বা অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

১৮ মার্চ বিএনপির চট্টগ্রাম জেলা পুনর্গঠন কমিটির সিদ্ধান্তে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ মিরসরাই উপজেলা, বারিয়ারহাট ও মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এ কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে উপজেলা বিএনপির একটি অংশ। মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীদের করা সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২৬ মার্চ সকালে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁরা। সেখানে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতা-কর্মীরা এলে তাঁদের প্রতিহত করা হবে।

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে দুটি পক্ষের বিরুদ্ধে সংঘাত ও সংঘর্ষের গোয়েন্দা তথ্য এবং মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে সংঘাত এড়াতে ও জনগণের জানমাল রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শহীদ মিনার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সতর্ক অবস্থান রয়েছে। শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের অন্যান্য সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পালিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়: নাহিদ ইসলাম
  • জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের কিছু রায় দেওয়ার অবশ্যই চেষ্টা করব: রিজওয়ানা হাসান
  • ‘সংস্কার ও বিচার ছাড়া ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা হলে জনগণ প্রতিরোধ করবে’
  • মিরসরাইয়ে শহীদ মিনারে ১৪৪ ধারা জারি
  • জাতীয় ঐক্যের ভিত সুদৃঢ় হোক
  • ১০০ গাড়ি নিয়ে যারা ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায়, তারা কী করবে আমরা বুঝি: মির্জা ফখরুল
  • সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চেষ্টা হচ্ছে: তারেক রহমান
  • ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব: হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • এবার সারজিসের পোস্টে হান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘সরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না’
  • গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমিক আকাঙ্ক্ষা: সমাজ ও সংস্কৃতিতে শ্রমিক সুরত