‘প্রতি টন কাগজের জন্য ১৭টি গাছের মৃত্যু হয়। আমাদের জ্ঞানের ক্ষুধা মেটাতে যে গাছ আত্মত্যাগ করেছে; তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আরেকটি গাছ রোপণ করি’– স্লোগানে চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলায় স্টল তৈরি করেছে বিদ্যানন্দ। পাঠক-দর্শনার্থী ঘুরেফিরে ভিড় করছেন এই স্টলে।
চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
গতকাল রোববার মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যানন্দের স্টলের চারপাশে নানান আকারের গাছের কাটা অংশ। সামনের অংশে ঝুলছে লম্বা আকৃতির গাছের অংশ। রশিতে ঝুলানো গাছের একটি অংশ আবার কাটা; যেখানে রয়েছে রক্তের রং। এর নিচে লম্বা লম্বা গাছের কাটা অংশ দেওয়া হয়েছে পুরো অংশজুড়ে। স্টলের সাইনবোর্ড গাছের তৈরি। সেখানেও রাখা হয়েছে গোল আকারের গাছের একাধিক টুকরো। নামফলকের ডান পাশে লেখা হয়েছে, ‘কাগজ রিসাইকেল করি/বৃক্ষের প্রাণ বাঁচাই।’
পুরো স্টল তৈরি করা হয়েছে গাছের টুকরো দিয়ে। গাছের প্রতি মানুষের নির্মমতা থেকে বৃক্ষনিধন রোধে সচেতনতার বার্তা দিতে এই স্টল। পড়ে থাকা ও অব্যবহৃত গাছ সংগ্রহ
করে সেগুলোকে নানা আকারে কেটে আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে স্টলটি। এখানে ৫০০ টাকার বই কিনলে দেওয়া হচ্ছে গাছ উপহার। কাগজ রিসাইকেল করে তা দিয়ে গল্প ও কবিতার বই প্রকাশ করেছে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগঠন।
এই স্টল নিয়ে কৌতূহল দেখা গেছে পাঠক ও দর্শনার্থীর মধ্যে। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ আবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছেন। এর মধ্যে একজনকে দেখা গেল, কয়েকটি বই কিনে গাছের চারা উপহার পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তাদের একজন কলেজ পড়ুয়া শিমলা। চার বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের পর থেকে মেলায় আসার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে না পাওয়ায় আসা হয়নি। প্রথমবারের মতো এসে গাছ দিয়ে তৈরি স্টলটি নজর কেড়েছে। সত্যি, এক কথায় দারুণ হয়েছে স্টলটি। গাছের ওপর মানুষের যে নির্মমতা, তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে।’
তাঁর বান্ধবী কানিজ বলেন, ‘পছন্দের তিনটি বই কিনেছি; সঙ্গে উপহার পেয়েছি গাছের চারা। সত্যি, এ এক অন্যরকম অনুভূতি।’ অনেকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্টল তত্ত্বাবধায়ক ওমর ফারুক বলেন, ‘গাছের ওপর মানুষের নির্মমতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গাছের প্রতি মানুষের এমন নির্মমতা রোধ করতে ও গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ বাড়াতে এই স্টল তৈরি করা হয়েছে। এখানে ব্যবহৃত সব গাছ নষ্ট ও অব্যবহৃত।’
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা ও পুনর্ব্যবহৃত কাগজে ছাপানো ‘প্রতিধ্বনি’ বইয়ের লেখক কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘নির্বিচারে গাছ ধ্বংস রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে গাছের প্রাণ বাঁচাতে কাগজ পুনর্ব্যবহার করতে হবে। আশা করছি, এটি অনুসরণ করবেন অন্যরাও।’
সংস্থার পরিচালনা পরিষদের সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবহৃত কাগজ না ফেলে ও না পুড়িয়ে পুনর্ব্যবহার করা হলে একদিকে বৃক্ষের প্রাণ বাঁচবে; অন্যদিকে পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে। আমরা চাই গাছ বাঁচাতে পুনর্ব্যবহৃত কাগজে নতুন বই প্রকাশ করতে এগিয়ে আসুক সবাই।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বলেন, ‘এবারের মেলায় ১৪০টি স্টলে ভালো ভালো বই এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ হলেও মলাটবদ্ধ বইয়ের কদর কখনও শেষ হবে না।’
শিশু প্রকাশের মালিক আরিফ রায়হান বলেন, মেলার শুরুর দিকে বই বেচার হার কম হলেও এখন বাড়ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল ব দ য নন দ ন র মমত ব যবহ ত বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘বৈষম্য দূরীকরণে আর কাউকে যেন রক্ত দিতে না হয়’
বৈষম্য দূরীকরণে আর কাউকে যেন রক্ত দিতে না হয়, আজকের দিনে এই আমাদের অঙ্গীকার বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের পাশে আমরা সব সময় আছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারের মাঝে অর্থ সহায়তা দিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন। আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা যৌথভাবে এ আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসক বলেন, তারা যে স্বপ্ন নিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন, বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছেন, তা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাদের স্বপ্ন লালন করে সমাজ থেকে সব বৈষম্য দূর করতে হবে। আমরা একটা সুন্দর সমাজ গড়তে চাই। এটা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। যদি তা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে এটা হবে আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাত হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নঈম উদ্দিন, ইউএইচএফপিও ডা. হাবিবুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ, সাবেক ভিপি কবির হোসেন প্রমুখ।