Samakal:
2025-02-22@18:48:13 GMT

নজর বিদ্যানন্দের স্টলে

Published: 16th, February 2025 GMT

নজর বিদ্যানন্দের স্টলে

‘প্রতি টন কাগজের জন্য ১৭টি গাছের মৃত্যু হয়। আমাদের জ্ঞানের ক্ষুধা মেটাতে যে গাছ আত্মত্যাগ করেছে; তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আরেকটি গাছ রোপণ করি’– স্লোগানে চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলায় স্টল তৈরি করেছে বিদ্যানন্দ। পাঠক-দর্শনার্থী ঘুরেফিরে ভিড় করছেন এই স্টলে।
চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
গতকাল রোববার মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যানন্দের স্টলের চারপাশে নানান আকারের গাছের কাটা অংশ। সামনের অংশে ঝুলছে লম্বা আকৃতির গাছের অংশ। রশিতে ঝুলানো গাছের একটি অংশ আবার কাটা; যেখানে রয়েছে রক্তের রং। এর নিচে লম্বা লম্বা গাছের কাটা অংশ দেওয়া হয়েছে পুরো অংশজুড়ে। স্টলের সাইনবোর্ড গাছের তৈরি। সেখানেও রাখা হয়েছে গোল আকারের গাছের একাধিক টুকরো। নামফলকের ডান পাশে লেখা হয়েছে, ‘কাগজ রিসাইকেল করি/বৃক্ষের প্রাণ বাঁচাই।’

পুরো স্টল তৈরি করা হয়েছে গাছের টুকরো দিয়ে। গাছের প্রতি মানুষের নির্মমতা থেকে বৃক্ষনিধন রোধে সচেতনতার বার্তা দিতে এই স্টল। পড়ে থাকা ও অব্যবহৃত গাছ সংগ্রহ 
করে সেগুলোকে নানা আকারে কেটে আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে স্টলটি। এখানে ৫০০ টাকার বই কিনলে দেওয়া হচ্ছে গাছ উপহার। কাগজ রিসাইকেল করে তা দিয়ে গল্প ও কবিতার বই প্রকাশ করেছে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগঠন।

এই স্টল নিয়ে কৌতূহল দেখা গেছে পাঠক ও দর্শনার্থীর মধ্যে। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ আবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছেন। এর মধ্যে একজনকে দেখা গেল, কয়েকটি বই কিনে গাছের চারা উপহার পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তাদের একজন কলেজ পড়ুয়া শিমলা। চার বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের পর থেকে মেলায় আসার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে না পাওয়ায় আসা হয়নি। প্রথমবারের মতো এসে গাছ দিয়ে তৈরি স্টলটি নজর কেড়েছে। সত্যি, এক কথায় দারুণ হয়েছে স্টলটি। গাছের ওপর মানুষের যে নির্মমতা, তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে।’
তাঁর বান্ধবী কানিজ বলেন, ‘পছন্দের তিনটি বই কিনেছি; সঙ্গে উপহার পেয়েছি গাছের চারা। সত্যি, এ এক অন্যরকম অনুভূতি।’ অনেকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্টল তত্ত্বাবধায়ক ওমর ফারুক বলেন, ‘গাছের ওপর মানুষের নির্মমতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গাছের প্রতি মানুষের এমন নির্মমতা রোধ করতে ও গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ বাড়াতে এই স্টল তৈরি করা হয়েছে। এখানে ব্যবহৃত সব গাছ নষ্ট ও অব্যবহৃত।’
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা ও পুনর্ব্যবহৃত কাগজে ছাপানো ‘প্রতিধ্বনি’ বইয়ের লেখক কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘নির্বিচারে গাছ ধ্বংস রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে গাছের প্রাণ বাঁচাতে কাগজ পুনর্ব্যবহার করতে হবে। আশা করছি, এটি অনুসরণ করবেন অন্যরাও।’
সংস্থার পরিচালনা পরিষদের সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবহৃত কাগজ না ফেলে ও না পুড়িয়ে পুনর্ব্যবহার করা হলে একদিকে বৃক্ষের প্রাণ বাঁচবে; অন্যদিকে পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে। আমরা চাই গাছ বাঁচাতে পুনর্ব্যবহৃত কাগজে নতুন বই প্রকাশ করতে এগিয়ে আসুক সবাই।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোবাইল ও মাদকে আসক্ত। এই আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে বই। সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতেও বড় ভূমিকা রাখবে বই। বইমেলা সৃজনশীল, মননশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে ভূমিকা রাখবে।’
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বলেন, ‘এবারের মেলায় ১৪০টি স্টলে ভালো ভালো বই এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ হলেও মলাটবদ্ধ বইয়ের কদর কখনও শেষ হবে না।’
শিশু প্রকাশের মালিক আরিফ রায়হান বলেন, মেলার শুরুর দিকে বই বেচার হার কম হলেও এখন বাড়ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ব দ য নন দ ন র মমত ব যবহ ত বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

অচল আইসিইউ সচলে মনোযোগ দিন

মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র তথা আইসিইউ লইয়া দেশে যাহা চলিতেছে তাহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ব্যতীত আইসিইউ বরাদ্দ মিলিতেছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগিতেছে ঘুষও। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হইতেছে রোগী ও স্বজনের পকেট। উপরন্তু, সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসিতেছে না। এক কথায় আইসিইউ লইয়া দেশের চিকিৎসা খাতে এক নৈরাজ্য চলিতেছে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, দেশে আইসিইউর শয্যা আছে সর্বমোট প্রায় বারো শত, যাহার ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। উপরন্তু, ৩৪ জেলায় কোনো আইসিইউ নাই। তৈলাক্ত মস্তকে তৈল মর্দন সম্ভবত ইহাকেই বলে। ঢাকায় যেহেতু সরকারের শীর্ষ ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ থাকেন, পাশাপাশি আছেন দেশের সর্বাধিক অর্থবিত্তসম্পন্ন মানুষেরা, ওই কথাটি নিশ্চয় সচেতন কাহারও নিকট অপ্রাসঙ্গিক ঠেকিবে না। অন্যদিকে ঢাকাকেন্দ্রিক অতি জরুরি চিকিৎসার এই আয়োজনের কারণে সমগ্র দেশের মানুষকে ছুটিয়া আসিতে হয় রাজধানীর দিকে, যাহার ভোগান্তি ভুক্তভোগী তো বটেই, ন্যূনতম মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষেরও টের পাইবার কথা। অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক হইল, ঢাকা মহানগরে ৮২৬টির মধ্যে ৩৮৪টি সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৪৪২টি বেসরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ আইসিইউ লইয়া রমরমা বাণিজ্যের বিষয়টিও একেবারে স্পষ্ট। সকলেরই জানা থাকিবার কথা, সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য পৃথক খরচ দিতে হয় না। অন্যদিকে রাজধানীর মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দৈনিক আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১৫ সহস্র টাকা। চিকিৎসক ফি, ঔষধের দাম এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যুক্ত হইয়া দিনে স্বাভাবিক খরচ দাঁড়ায় ৩০ হইতে ৩৫ সহস্র টাকা। রোগীর অবস্থা জটিল হইলে এই খরচ লক্ষ টাকাও ছাড়াইয়া যায়। অধিকন্তু, যেই হাসপাতাল যত নামি, তাহার আইসিইউর খরচও ততধিক, যাহা খুব কম রোগীর পরিবারই বহন করিতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত খরচের নিচে চাপা পড়িয়া অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা গুটাইয়া লইতে বাধ্য হইয়াছেন, এমন নজিরও কম নাই। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কখনও কখনও রোগীর মৃত্যু ঘটিবার পরও তাহা স্বজনকে না জানাইয়া আইসিইউতে রাখিয়া ‘বিল বাণিজ্য’ করিবার অভিযোগও রহিয়াছে। 

আমরা জানি, ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাইতে বিশেষত বিগত করোনাকালে তৎকালীন সরকার প্রতি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। সেই প্রকল্পের অধীনে ২৭ জেলায় স্থাপনও করা হয় আইসিইউ ইউনিট। সেইগুলির মধ্যে ১৮টিই সচল করা যায় নাই। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হইয়াছে গত ডিসেম্বরে। এহেন জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার কারণে প্রকল্প হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বলা হইয়াছে, করোনার পর এই সকল ইউনিট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ডেপুটেশনে চলিয়া যায়। কিন্তু নূতন করিয়া জনবল সৃষ্টির কার্যক্রমও দৃশ্যমান নহে। অনস্বীকার্য, যেখানে সমগ্র চিকিৎসাব্যবস্থায় পরিকল্পনাহীনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতিফলন স্পষ্ট সেইখানে আইসিইউ স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হইবার কথা নহে। বিষয়টির সহিত বিগত কয়েক দশক যাবৎ চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থার ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণের সম্পর্ক আছে বলিয়া আমরা মনে করি। অন্য সকল মৌলিক অধিকারের ন্যায় বিগত সরকারসমূহের জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে অবহেলাও এই ক্ষেত্রে দায়ী বলিয়া বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলিতেছেন, এইভাবে চলিতে থাকিলে পরিস্থিতি অচিরেই আরও জটিল রূপ লইতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্তত অচল আইসিইউ সচল করিবার বিষয়ে তাহারা তৎপর হইতে পারে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নটি এই ক্ষেত্রে উঠিতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে যেই সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অচল আইসিইউ সচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা যাইতেছে না বলিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, উহার প্রতি মনোযোগ দিতে তো আর অর্থের প্রয়োজন নাই। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ