বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত ৭ নভেম্বর পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুল মান্নান পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন মাস পার হলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি। উল্টো তদন্ত চলাকালেই পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ এমডি হয়েছেন সাইফুল। 
গত ২ সেপ্টেম্বর এমডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সচিবের কাছে আবেদন করেন জোবায়দুর রহমান ও মোর্শেদ আলম নামে দুই ব্যক্তি। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে এমডির দায়িত্ব পান সাইফুল। আগে তিনি খনির জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার টু কন্ট্রাক্টের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।    
জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষের প্রায় ১ হাজার কোটির টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী রয়েছে। তার পরও একই ব্যাংকে ২০২৩ সালে আরও ২ কোটি টাকা এফডিআর করা হয়। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে বেসরকারি চারটি ব্যাংকে ১১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। 
এদিকে খনির ২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ব্যয় দেখানো হয় ৩৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে খনির ১৮২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকার বিছানার চাদর ও ছাতা ক্রয় দেখানোসহ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব বিলের ভাউচারগুলো এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। 
ভাউচারগুলো যাচাই করে দেখা যায়, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মালপত্র কেনা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। সাইফুল মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ২৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিধি অনুযায়ী কোম্পানির প্রফিট বোনাসের টাকা এমডির পাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ তিনি চাপ প্রয়োগ করে প্রফিট বোনাস হাতিয়ে নেন। এমনকি খনির পাথর বিক্রিতে অভিনব কায়দায় কমিশন আদায় করেন। তার প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান এই টাকা সংগ্রহ করেন।
অন্যদিকে এমডি সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে (সোনালী ব্যাংক, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শাখা) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে একটি হিসাব নম্বরে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি শুধু নগদ অর্থ জমা করা হয়েছে। আর লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ নিয়েও দুদকে অভিযোগ দেওয়া আছে। 
তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী জানান, নানা কারণে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগির প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত এমডি সাইফুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে সমকালকে বলেন, অভিযোগকারী জোবায়দুর রহমানকে তিনি চেনেন না। সুবিধা না পাওয়া কিছু ব্যক্তি ও খনি অভ্যন্তরের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, কোনো উৎকোচের বিনিময়ে নয়, ওপর মহলের মৌখিক নির্দেশনায় তা করা হয়েছে। 
কোম্পানির ২৪তম এজিএম নিয়ে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে সাইফুল বলেন, কেনাকাটাসহ যাবতীয় ব্যয় ও কার্য সম্পাদনের জন্য পাঁচজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে এমডির কোনো হাত থাকে না। কমিশন গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, ওপর মহলের চাপে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর স্থানান্তর করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম তদন ত এমড র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৭১ এর শহীদ বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বুধবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি।

এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

রাষ্ট্রপতির পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা জানান। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

এরপর একে একে বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক–সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ