জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং ফ্যাসিবাদী শাসনামলের নিপীড়ন-গুম-খুন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাসহ দায়ী সবার বিচার দাবি করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক। রোববার সন্ধ্যায় অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে লালনপালন না করে যেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আত্মপ্রকাশ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই আন্তর্জাতিক অধিকারভিত্তিক সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কর্মীরা বলেন, উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশে ও বিদেশে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং তাদের দোসররা নানা রকম ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। নানাভাবে উসকানির মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ সরকার প্রতিষ্ঠিত আছে দেখাতে চাচ্ছে। এ ধরনের উসকানির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গত বুধবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনটি নিয়েও আলোচনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কথাসাহিত্যিক বর্ণালী সাহা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আজফার হোসেন।

মূল বক্তব্যে বলা হয়, ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দমনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। ওএইচসিএইচআরের তথ্যানুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ দায়ী সবার বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর যথাযথ তদন্ত ও বিচারের কাজটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে শেষ করার দাবি জানানো হচ্ছে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সদস্য অনুপম সৈকত শান্ত বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিক্ষোভের সময় অগ্রভাগে থাকা নারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ওই নারীরা যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ পেয়েছে। এটাও মানবতাবিরোধী অপরাধ। পরবর্তী সময়ে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে, বিদ্যমান আইনে সেসবেরও বিচার দাবি করি।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করতে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে অনেক দেশে ফ্যাসিবাদী দলের বিচার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধিকারকর্মী প্রকৌশলী তন্ময় কর্মকার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক অধিকারকর্মী চিকিৎসক নাজমুল আহমেদ বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো উচিত। যেসব দেশে ওই ব্যক্তিরা পালিয়ে অবস্থান করছেন, সেসব দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির জনগণ যেন নিজ নিজ দেশের সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেন।

আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী নৃবিজ্ঞানী ও লেখক নাসরিন খন্দকার বলেন, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ক্ষেত্রে জনগণের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। জনগণকে সহিংসভাবে দমন করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকারের পূর্বশর্ত হলো সরকারের সমালোচনা করতে পারা।

অধ্যাপক আজফার হোসেন বলেন, অভ্যুত্থান এখনো শেষ হয়নি। ফ্যাসিস্ট অবস্থা ও সংস্কৃতির এখনো অবসান হয়নি। এগুলো এখনো চ্যালেঞ্জ। তিনি সরকারকে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া ও জিনিসপত্রের দাম কমানোর ওপর আরও জোর দিতে বলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ম নবত ব র ধ সরক র র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ব্র্যান্ডে কাজের সুযোগ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট কর্মসূচির উদ্যোগ নেয় উদ্ভাবনী ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে। সদ্য স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা মাত্রই উজ্জ্বল পেশাজীবন পান, সেটাই ছিল আয়োজনের মূল লক্ষ্য বলে জানায় উদ্যোক্তারা।

চুয়েটের কয়েকটি বিভাগ থেকে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নেয়। যার মধ্যে ছিল বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ সেশন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী ব্র্যান্ডে সরাসরি কাজের সুযোগ পাবেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে মো. ফারা নেওয়াজ সেশন পরিচালনা করেন। তিনি বৈশ্বিক ও জাতীয় টেলিকম শিল্পের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সংশ্লিষ্ট খাতে উদ্ভাবনী ব্র্যান্ডের অবদান নিয়ে আলোচকপাত করেন।

হুয়াওয়ে ব্র্যান্ডের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও বলেন, নিয়মিত ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে আমরা নতুন স্নাতকের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করছি, যেন তারা দেশের প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। নতুন গ্র্যাজুয়েট ও অভিজ্ঞতার পরিবার ও সমন্বয়টা জরুরি। সদ্য স্নাতকরা নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে পারে। চুয়েটে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে, যাদের নিজেদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি।

কর্মসূচি প্রসঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট আমাদের শিক্ষার্থীরা আইসিটিতে বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগে মূল্যবান প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে। উদ্যোক্তা প্রযুক্তি ব্র্যান্ড শিল্পখাতের চাহিদা পূরণে তাদের আরও বেশি সম্যক ধারণা দেওয়ার সঙ্গে ক্যারিয়ার গড়ার দারুণ সুযোগ দিয়েছে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, যদি আইসিটি ও টেলিকম খাতের সেরা নির্মাতার প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাই, তাহলে দারুণভাবে ক্যারিয়ারের সূচনা হবে। সিনিয়রদের কাছে শুনেছি, পারফরম্যান্সই হুয়াওয়ে ব্র্যান্ডের চালিকাশক্তি। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অনুপ্রাণিত। বৃদ্ধিবৃত্তিক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

হুয়াওয়ে ব্র্যান্ডের সিনিয়র এইচআর ম্যানেজার মো. ফারা নেওয়াজ, এইচআর ম্যানেজার ওমর হায়দার মাসফিক আহমেদ ও অ্যাসিস্টেন্ট এইচআর ম্যানেজার মো. খালিদ হোসেন, চুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মেহেদী হাসান চৌধুরী সরাসরি কর্মসূচিতে অংশ নেন। উদ্ভাবনী ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে বেশিরভাগ কর্মীকে স্থানীয় জনবল থেকে নিয়োগ দেয়। তারা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং বিশ্বের অন্যসব দপ্তরেও বিশেষ দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ব্র্যান্ডে কাজের সুযোগ