বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রামীণ জনপদের মানুষকে সহজ ও নিরাপদ ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে কুমিল্লার দুটি ইউনিয়নে ‘ডিজিটাল ইউনিয়ন’ কার্যক্রম শুরু করেছে বিকাশ।

সারা দেশে বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার জগন্নাথপুর ও পাঁচথুবী ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে এই আয়োজনের যাত্রা শুরু হয়। বাউলগান, বর্ণিল র‌্যালি, উঠান বৈঠকসহ নানা উদ্যোগে এই দুই ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে যাত্রা শুরু হয় ভিন্নধর্মী এই আয়োজনের।

দেশের প্রান্তিক মানুষকে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে অভ্যস্ত করে তাঁদের প্রতিদিনের লেনদেনে আরও সক্ষমতা ও স্বাধীনতা বাড়াতে শুরু থেকেই নানা উদ্যোগ পরিচালনা করছে বিকাশ। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ডিজিটাল ইউনিয়ন’ কার্যক্রমের আওতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বৈঠক, মাইকিং, ভিডিও শিক্ষা কার্যক্রম, বাউলগান, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কীভাবে সবচেয়ে সহজে, নিরাপদে ডিজিটাল লেনদেন করা যায়, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হবে। বিকাশের মাধ্যমে বিল প্রদান, মাইক্রোফিন্যান্সসহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় সেবা ও নিরাপদে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে ডিজিটাল ইউনিয়ন কার্যক্রমে। পরবর্তী সময়ে এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সম্প্রসারিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ইউটিলিটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিকাশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা স্থানীয় জনগণকে ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে তাঁদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক জীবনযাত্রায় আরও স্বাচ্ছন্দ্য, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সফলতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ