কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নে ওয়ার্ড সভাপতির পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রোববার রাত ৯টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন নিজের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি তাঁর ফেসবুক আইডিতে দেন। তদন্ত কমিটিতে তৌফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে আছেন আতিকুর রহমান মাসুদ, মো.

কামাল উদ্দিন, মো. মাহমুদুজ্জামান রিপন ও মো. আ. সাত্তার। তাঁরা পাঁচজনই পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

গত ৩০ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে পাকুন্দিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ সময় মো. বদরুল আলমকে আহ্বায়ক করে চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন বিএনপির ৭১ সদস্য আহ্বায়ক কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে শনিবার বিকেলে পাকুন্দিয়া ইউনিয়নের চণ্ডীপাশা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা সভা ডাকে ইউনিয়ন বিএনপি। সভা চলাকালে ওয়ার্ডের দুই সভাপতি প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষই চেয়ার দিয়ে অন্য পক্ষের লোকজনকে আঘাত করে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জে কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ১১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাবার অপদস্ত হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে পুরো উপজেলায়। 

গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এক জন শিক্ষককে অসম্মান করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। 

সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, গত বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভা চলছিল। দুপুর ২টার দিকে একটি দল মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক  কান্তি লাল আচার্য্যকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

তিনি বলেন, “১৯৯১ সাল থেকে কান্তি লাল আচার্য্য এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি আমারও শিক্ষক। এভাবে অসম্মান করে এক জন শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া নিন্দনীয়।”  

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেছেন, কান্তি লাল আচার্য্য দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নেতাকর্মীরা তার পদত্যাগ দাবি করে মিছিল-সমাবেশ করেন। উত্তেজিত জনতার চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।  

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ১ মার্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কান্তি লাল আচার্য্য। ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি হলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কান্তি লাল আচার্যকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২৮ সালের মার্চ মাসে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

কান্তি লাল আচার্য্যকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, অভিযোগ করে তার মেয়ে ভাবনা আচার্য্য বৃহস্পতিবার ফেসবুকে লিখেছেন (হুবহু তুলে ধরা হলো), “আমার বাবা জনাব কান্তি লাল আচার্য্য। ৩৫ বছর ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আমার বাবাকে গতকাল ১৬.০৪.২৫ তারিখে কোন রকম প্রমানিত অভিযোগ ছাড়া বলপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করানো হয়। আমার বাবার কি অপরাধ, কি সমস্যা কিছু বলা হয়নি। জানেন, স্কুলে ঝামেলা হওয়ার আগে বাবাকে মানা করা হয় স্কুল যেতে। বলছিল, স্কুলে গেলে অপমান হতে হবে।

বাবা সেই কথার উত্তরে বলেন, আমি কোন অন্যায় করিনি, আমার কোন অপরাধ নেই। আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বল্লে নির্দ্বিধায় আমি সরে যাবো। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াবো। কেউ আমার অপরাধের প্রমাণ আনতে পারলে আনুক।

বাবাকে পদত্যাগ করার আগে স্কুলে ককটেল ফাটানো হচ্ছিল। আমার বাবা তখনো নির্ভীক। জোর করে সাইন করতে বলছিল এমন একটি কাগজে যেখানে লেখা ছিল, দুর্নীতির অভিযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি। বাবা নির্ভয়ে বলেছিল, আমি দুর্নীতি করিনি, এই পেজে আমি সাইন করবো না। এমনিতেই পদত্যাগ করছি। সেই সময় বাবাকে একদল মারতে যায়।

পরবর্তীতে, আরেকটি কাগজে লেখা হয়: ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।

কি সুন্দর তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। আজ একজন শিক্ষকের এই পরিনতি! আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে বিশ্বাস করেন। আমার বাবা এবং আমরা কেউ মানতে পারছি না যে, একজন মানুষ ৩৫ বছর চাকরিরত থাকার পর তাঁর এই পরিনতি।

আপনারা উগ্র হয়ে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে কবর দেয়ার মতো যন্ত্রণা দিয়েছেন। এতোদিন অন্য মানুষের এমন ঘটনা দেখতাম। আজ আমার বাবার সাথে এই হেন কাজ হয়েছে।

জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্ত হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন উনি শিক্ষক নয় শুধু, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সাথে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!

একজন শিক্ষকের এই অপমান!পৃথিবীতে একমাত্র হীন জাতি আমরা যারা পদে পদে শিক্ষকদের টার্গেট করে এই অপমানজনক পরিস্থিতি উপহার দিচ্ছি।

আজ আমাদের সাথে হলো। কাল ঠিকই সবার পাল্লায় এই মব এসে উপস্থিত হবে। ঈশ্বর ছেড়ে দেই না ভাই। বিশ্বাস করেন, আমার বাবার দীর্ঘশ্বাস, চোখে এক আতঙ্কের আভাস এই সব কখনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।”

পদত্যাগ প্রসঙ্গে কান্তি লাল আচার্য্য বলেছেন, “সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। অ্যাডহক কমিটি আমাকে বাদ দিতে পারত। কিন্তু, এভাবে অসম্মান করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। যারা এ কাজ করেছে, অধিকাংশই আমার ছাত্র ছিল।”  

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেছেন, “প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগ করানোর বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ