ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক শূচিতা শরমিনের পদত্যাগ চাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। উপাচার্যের নির্দেশে ববি প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন বলে জানা গেছে।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা পাঁচ দফা দাবিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুঁশিয়ারি দেন তারা। পরে বিকেল ৪টার দিকে অযোগ্য উল্লেখ করে প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম ও প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগের দাবিও জানান তারা।

গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য অধ্যাপক শূচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে গোপন সিন্ডিকেট ও ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগে উপাচার্য বাসভবনের ফটক ভেঙে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় ফটক ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় অভিযোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) সানোয়ার পারভেজ লিটন। এ অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিফলন ঘটুক। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন, অথচ তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। গত ২৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগকে দরজা ভেঙে ছাড়িয়ে নেন এবং ২৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক আন্দোলন করতে পারে, ভুল ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে তিনি কিভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলার কারণে স্পষ্ট হয়ে গেছে, তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। অনতিবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন বলেন, “আমি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছি- এ রকম গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষকসহ তিনজন ব্যক্তি জড়িত। তারা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ বহিঃস্থ সিন্ডিকেট সদস্য যারা, তারা সবাই বর্তমান সরকার ও জুলাই চেতনা ধারণ করা ব্যক্তি।”

তিনি বলেন, “শনিবার আমাদের সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিং ছিল। আমাদের ১০ জন সদস্য নিয়ে সফলভাবে আমরা মিটিংটি করেছি। কয়েকজন এতে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। এ সময় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমার বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নানা কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বুলডোজার দিয়ে বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া, আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরই চেষ্টা করছি একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান উন্নয়নের। অবকাঠামো উন্নয়নর জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, দেখা করেছি। ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক ব্যক্তি নানা ইস্যু সৃষ্টি করে কিছু শিক্ষার্থীকে উস্কে দিচ্ছেন; যা কাম্য নয়।”

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.

গোলাম রব্বানী বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু এখানে তো আমার সংশ্লিষ্ট থাকার কথা না। বরং আমরা তাদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই। উপাচার্যসহ আমরা যে তিনজন আছি, এসব উদ্ভূত পরিস্থিতি একসঙ্গে বসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সমাধান করা যেত।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমাকে দায়িত্ব পালন করার জন্য উপাচার্য কোন সহযোগিতা করেননি, দায়িত্বও বুঝিয়ে দেননি। দায়িত্ব দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করতাম। সুযোগ কেন দিচ্ছেন না, তা উপাচার্যই জানে। যোগদানের পর সাড়ে ৩ মাসেও একটা ফাইল আমার টেবিলে আসেনি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত উপাচার্য একাই নিয়ে থাকেন। আমাদের কোন মিটিংয়ে ডাকেন না, কোন সিদ্ধান্তে আমাদের মতামত নেওয়া হয় না।”

ঢাকা/সাইফুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র ন কর র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ দফা দাবিতে এবার অনড় কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের একাংশের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার তাঁর পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসেছেন। তাঁরা এখন ২২ দফা দাবি বাস্তবায়নে অনড় কর্মসূচি শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন।

বেলা দেড়টায় শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাব ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে পাঠদানকক্ষ ও আবাসিক হলসংকট নিরসনে বাজেট বরাদ্দ করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ব্যর্থতা, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভাঙার অভিযোগে করা মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

কর্মসূচিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ, মোশাররফ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শাহেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে সুজয় শুভ বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার বিরোধী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এসব বন্ধ করুন। ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যেসব সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হামলা করেছিল, তাদের কোনো ধরনের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে প্রশাসন। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ সব দাবি আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এম ডি সিহাব, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, রসায়ন বিভাগের হাসিবুল ইসলাম, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মাসুম বিল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আকস্মিকভাবে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ও দুজন শিক্ষক প্রতিনিধিকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরদিন বিকেলে ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের পূর্বনির্ধারিত সভা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এবং একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সানোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে শনিবার রাতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গতকাল সোমবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করেননি। তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসে আগের ২২ দফা, শুক্রবার ঘোষিত ১০ দফার পাশাপাশি আরও ৩ দফা দাবি যোগ করেছেন।
গতকাল সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হন এবং আগের দাবির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি নতুন দাবি যোগ করেন। তিনটি দাবি হলো, জরুরি ভিত্তিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিস্ট বলার কারণে উপাচার্যের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, হঠাৎ করে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি, এরপর শুক্রবার বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ—এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর গতকাল তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার্থীদের দাবি ‘পুরোপুরি মেনে না নেওয়ায়’ উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা
  • প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল নিয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা
  • ২২ দফা দাবিতে এবার অনড় কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের একাংশের
  • আইনি প্রক্রিয়া মেনে শিক্ষক নিয়োগের ফল ঘোষণা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা