ববি উপাচার্যের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 16th, February 2025 GMT
ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক শূচিতা শরমিনের পদত্যাগ চাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। উপাচার্যের নির্দেশে ববি প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন বলে জানা গেছে।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা পাঁচ দফা দাবিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুঁশিয়ারি দেন তারা। পরে বিকেল ৪টার দিকে অযোগ্য উল্লেখ করে প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম ও প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগের দাবিও জানান তারা।
গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য অধ্যাপক শূচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে গোপন সিন্ডিকেট ও ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগে উপাচার্য বাসভবনের ফটক ভেঙে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় ফটক ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় অভিযোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) সানোয়ার পারভেজ লিটন। এ অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিফলন ঘটুক। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন, অথচ তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। গত ২৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগকে দরজা ভেঙে ছাড়িয়ে নেন এবং ২৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক আন্দোলন করতে পারে, ভুল ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে তিনি কিভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলার কারণে স্পষ্ট হয়ে গেছে, তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। অনতিবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন বলেন, “আমি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছি- এ রকম গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষকসহ তিনজন ব্যক্তি জড়িত। তারা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ বহিঃস্থ সিন্ডিকেট সদস্য যারা, তারা সবাই বর্তমান সরকার ও জুলাই চেতনা ধারণ করা ব্যক্তি।”
তিনি বলেন, “শনিবার আমাদের সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিং ছিল। আমাদের ১০ জন সদস্য নিয়ে সফলভাবে আমরা মিটিংটি করেছি। কয়েকজন এতে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। এ সময় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমার বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নানা কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বুলডোজার দিয়ে বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া, আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরই চেষ্টা করছি একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান উন্নয়নের। অবকাঠামো উন্নয়নর জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, দেখা করেছি। ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক ব্যক্তি নানা ইস্যু সৃষ্টি করে কিছু শিক্ষার্থীকে উস্কে দিচ্ছেন; যা কাম্য নয়।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমাকে দায়িত্ব পালন করার জন্য উপাচার্য কোন সহযোগিতা করেননি, দায়িত্বও বুঝিয়ে দেননি। দায়িত্ব দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করতাম। সুযোগ কেন দিচ্ছেন না, তা উপাচার্যই জানে। যোগদানের পর সাড়ে ৩ মাসেও একটা ফাইল আমার টেবিলে আসেনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত উপাচার্য একাই নিয়ে থাকেন। আমাদের কোন মিটিংয়ে ডাকেন না, কোন সিদ্ধান্তে আমাদের মতামত নেওয়া হয় না।”
ঢাকা/সাইফুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র ন কর র
এছাড়াও পড়ুন:
টঙ্গীতে বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ রোববার সকাল সাতটা থেকে তাঁরা কারখানাসংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে সকাল সাড়ে আটটার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকেরা জানান, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তারিখ দিয়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি। ১১ মার্চ হঠাৎ কারখানা বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে তখন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। ওই সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিকেরা আজ সকালে আবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন বলেন, এই কারখানার শ্রমিকেরা কয়েক দিন আগে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন। পরে ২০ মার্চের মধ্যে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় ১ হাজার ৫০০ জন শ্রমিকের মধ্যে ১ হাজার ২৫০ জনের বেতন দেওয়া হয়। গতকাল শ্রমিকেরা কাজ না করার ঘোষণা দিলে কারখানায় ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ঘোষণা করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল সাতটা থেকে শ্রমিকেরা বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে কারখানার সামনে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।