সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
Published: 16th, February 2025 GMT
সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আওয়ামী লীগের এই সাবেক সংসদ সদস্যের স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। আজ রোববার এসব মামলা করা হয়েছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আজ নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.
কুমিল্লা–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুবিদ আলীর বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সুবিদ আলী ভূঁইয়া, তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ও ছেলে মোহাম্মদ আলী মোট ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা অবৈধ সম্পদ (জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ) অর্জন করেছেন। এর মধ্যে সুবিদ আলী প্রায় ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, মাহমুদা আক্তার ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং মোহাম্মদ আলী ৪২ লাখ ৫২ হাজার টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।
এজাহারে সুবিদ আলী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। মাহমুদা আক্তার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি (মাহমুদা) ও সুবিদ আলী পরস্পরের সহায়তায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁদের ছেলে মোহাম্মদ আলী কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে, তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতা সুবিদ আলী, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
নজরুলের ৭৮১ কোটির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক সভাপতি ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নজরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
নজরুল ইসলাম মজুমদার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৫ আগস্ট তাঁর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে নজরুল ইসলামের স্ত্রী নাছরিন ইসলাম ও তাঁদের পুত্র-কন্যার ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়। এরপর গত ১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বসুন্ধরা গ্রুপ প্রসঙ্গ
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বসুন্ধরা গ্রুপ, মানে বৃহৎ শিল্প গ্রুপ, তাদের, এই পরিবারটির বিদেশে নাগরিকত্ব আছে। এ রকম প্রায় আটটি দেশে…।
জবাবে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন। নিশ্চয় আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কামরুল ইসলামের আরও ১৬টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও ১৬টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের করা এ–সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কামরুল ইসলাম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট এই ১৬টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়। ওই সব ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬৬ টাকা। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কামরুল ইসলামের ১৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কামরুল ইসলামের ওই ১৫ ব্যাংক হিসাবে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জমা হয়। অন্যদিকে এসব ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। বর্তমানে জমা আছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এদিকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে দুদক। ১১ ফেব্রুয়ারি ওই আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এই মন্ত্রীর নামে মামলা করে দুদক। দুদক বলছে, ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ার পর কামরুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
দুদক বলছে, কামরুল ইসলামের ছেলে তানজীর ইসলামের ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৫ টাকা এবং মেয়ে সেগুপ্তা ইসলামের নামে ১ কোটি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে। তাঁর দুই সন্তানের নামে আরও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকতে পারে।
গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৯ নভেম্বর তাঁকে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি হত্যা মামলা রয়েছে।
২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন কামরুল ইসলাম। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে তাঁকে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।