সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আওয়ামী লীগের এই সাবেক সংসদ সদস্যের স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা হয়েছে।

এ ছাড়া নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। আজ রোববার এসব মামলা করা হয়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আজ নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.

আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কুমিল্লা–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুবিদ আলীর বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সুবিদ আলী ভূঁইয়া, তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ও ছেলে মোহাম্মদ আলী মোট ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা অবৈধ সম্পদ (জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ) অর্জন করেছেন। এর মধ্যে সুবিদ আলী প্রায় ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, মাহমুদা আক্তার ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং মোহাম্মদ আলী ৪২ লাখ ৫২ হাজার টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।

এজাহারে সুবিদ আলী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। মাহমুদা আক্তার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি (মাহমুদা) ও সুবিদ আলী পরস্পরের সহায়তায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁদের ছেলে মোহাম্মদ আলী কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে, তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতা সুবিদ আলী, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

নজরুলের ৭৮১ কোটির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক সভাপতি ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নজরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

নজরুল ইসলাম মজুমদার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৫ আগস্ট তাঁর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে নজরুল ইসলামের স্ত্রী নাছরিন ইসলাম ও তাঁদের পুত্র-কন্যার ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়। এরপর গত ১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বসুন্ধরা গ্রুপ প্রসঙ্গ

নিয়মিত ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বসুন্ধরা গ্রুপ, মানে বৃহৎ শিল্প গ্রুপ, তাদের, এই পরিবারটির বিদেশে নাগরিকত্ব আছে। এ রকম প্রায় আটটি দেশে…।

জবাবে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন। নিশ্চয় আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব দ আল ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ের নতুন তারিখ ২৭ মার্চ

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) ও তাঁর মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার রায় ঘোষণার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ মার্চ।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারকে মো. রবিউল আলম আজ রোববার এই তারিখ ধার্য করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই আদালতের বেঞ্চ সহকারী বিল্লাল হোসেন।

জি কে শামীম কারাগারে আছেন। তাঁর মা পলাতক। এ মামলায় গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। আদালত সেদিন ৩০ জানুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছিলেন। কিন্তু সেদিন (৩০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন আদালত।

তবে আসামিপক্ষ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি আবার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার আবেদন করা হয়। পরে আদালতের আদেশে মামলাটি রায়ের পর্যায় থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আসে। আজ রোববার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের নতুন তারিখ ঠিক করেন আদালত।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর দুদক মামলা করে।

মামলায় ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, শামীমকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে তাঁর মায়ের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এই টাকার তথ্য শামীম বা তাঁর মায়ের আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়েশা আক্তার তাঁর ছেলে শামীমের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ নিজ নামে রেখে তাঁকে (শামীম) অপরাধে সহায়তা করেছেন।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন শামীম। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে পৃথক মামলা হয়।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চলিয়ে ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার জব্দ করে র‍্যাব। এই টাকার কোনো উৎস পায়নি দুদক। সব মিলিয়ে শামীমের ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে শামীমের। এ ছাড়া ঢাকায় দুটি বাড়িসহ প্রায় ৫২ কাঠা জমির মালিক তিনি। এসবের দাম ৪১ কোটি টাকা। শামীম তাঁর অস্ত্রধারী সাত দেহরক্ষীকে দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টেন্ডারবাজি, বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটে চাঁদাবাজি করে এসব অর্থসম্পদ অর্জন করেছেন।

২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় শামীম ও তাঁর সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। অন্যদিকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই শামীমকে ১০ বছর এবং তাঁর সাত দেহরক্ষীর প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুদকের মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক মালেকের ১৩ বছর কারাদণ্ড
  • জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ের নতুন তারিখ ২৭ মার্চ