শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রীদের, ব্যাখ্যা দিলেন সেদিনের ঘটনার
Published: 16th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ ছাত্রী হলে ৫ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার দাবি করেছেন ছাত্রীরা। এই আদেশ প্রত্যাহারের জন্য তাঁরা প্রশাসনকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফেরও পদত্যাগ চেয়েছেন তাঁরা।
আজ রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এই দাবি জানান। বিকেল পাঁচটায় নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে এই সম্মেলন হয়। এতে গত বৃহস্পতিবার বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন রওজাতুল জান্নাত, উম্মে হাবিবা বৃষ্টি, সুমাইয়া শিকদার, মাইসারা জাহান ও জান্নাতুল মাওয়া।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুমাইয়া শিকদার। এতে তিনি পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, অন্যায়ভাবে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাহার, প্রক্টরিয়াল বডি অপসারণের আগে নতুন করে এই ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া না চালানো, হলে হামলাকারী শিক্ষার্থীদের বিচার করা, ছাত্রীদের সঙ্গে উগ্র আচরণ ও নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন মন্তব্য করা ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বিচার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নিয়ে অবমাননাকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া প্রক্টরের পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন হিসেবে পরিচিত সব স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা।
যে ব্যাখ্যা দিলেন ছাত্রীরাসংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীরা জানান, ‘গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হলের সামনে একদল শিক্ষার্থী ভাঙচুর করতে আসে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের একপাক্ষিকভাবে দোষারোপ করা হয়েছে।
ছাত্রীরা দাবি করেন, সেদিন রাত সাড়ে ১১টায় বেশ কিছু শিক্ষার্থীর একটি জটলা মিছিল নিয়ে হলের সামনে এসে সরাসরি ভাঙচুর শুরু করে। এ ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় অপ্রস্তুত নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করা হয়। হলের ভেতরে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্লোগানের মাধ্যমে নানা ধরনের নারীবিদ্বেষমূলক কটূক্তি করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্রীরা জানান, ‘প্রচণ্ড হট্টগোল ও ভাঙচুরের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিচে নেমে আসেন। তখন গেটের অপর প্রান্তে ভাঙচুরকারী শিক্ষার্থীদের একজন অনুমতি ছাড়া ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তখন মেয়েরা প্রতিবাদ জানাতে পাশের ছোট গেটের তালা ভেঙে মূল ভবনের বাইরে হল আঙিনায় নেমে আসে।’
তখনই সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একজন ছাত্রীদের ‘হাসিনার দোসর’ ও ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে গালি দেন। ছাত্রীরা অপমানজনক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করেন। আধা ঘণ্টা ধরে চলতে থাকা এসব ঘটনায় প্রক্টরকে জানানো হলেও তিনি আশানুরূপ ব্যবস্থা নেননি বলে ছাত্রীদের দাবি। নিরাপত্তা সংকটে ভুগতে থাকা ছাত্রীরা পরে প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে যান। সেখানে গাড়ি থেকে নেমেই একজন অশোভন আচরণ শুরু করেন। গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিরাও ‘হাসিনার দোসর’ ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে গালাগাল শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা প্রথমে বুঝতেই পারেননি যে তাঁরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য।
তাঁরা বলেন, প্রশাসনকে তাঁরা একাধিকবার হলের নাম পরিবর্তন ও ফটকের সামনে থাকা নৌকা অপসারণ করার কথা জানিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে দুইবার লিখিত আবেদনও দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন সেটা করেনি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার এই দায়ভার প্রশাসন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীরা জানান, প্রশাসন ছাত্রীদের হল এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বারবার বলার পরও প্রক্টর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। ছাত্রীদের সঙ্গে সহকারী প্রক্টর অশোভন আচরণ করেছেন। হাসিনার দোসর, ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়েছেন। অশোভন আচরণ করা সহকারী একজন প্রক্টরকে একজন ছাত্রী আঘাত করেছেন, যা অনুচিত ও বিচারযোগ্য। রাতের বেলা ছাত্রদের মেয়েদের হলে আসা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন নিজেদের অপরাধ ও অপকর্ম ঢাকতেই কেবল মেয়েদেরই শাস্তি দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিসিবি আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে’
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে বিসিবির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম কোড স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), যা তার কোচিং ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিয়েছে।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে বরখাস্ত করে বিসিবি। তবে শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন হাথুরুসিংহে। তার ভাষায়, ‘তারা আমাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ দেয়নি। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে।’
সেই সময়কার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগও তুলে ধরেছেন হাথুরুসিংহে। জানান, বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি নিজেকে চরম নিরাপত্তাহীন মনে করছিলেন। ‘সাধারণত আমার সঙ্গে একজন ড্রাইভার ও একজন বন্দুকধারী থাকত। কিন্তু ওই দিন শুধু ড্রাইভার ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, কিছু একটা ঘটেছে।’
ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে টিভিতে নিজের চাকরিচ্যুতির খবর দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। ব্যাংক ম্যানেজারও তাকে সতর্ক করে বলেন, রাস্তায় বের হলে বিপদ হতে পারে। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় টুপি ও হুডি পরে মধ্যরাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ। নাসুমের ঘটনার ব্যাখ্যায় হাথুরু বলেন, ‘আমি কাউকে চড় মারিনি। আসলে আমি ব্যাটসম্যানদের গ্লাভস পাঠাতে বলছিলাম, তাই পিঠে হালকা টোকা দিই। এটাকে চড় বলা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা।’
এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক সহকারী কোচ নিক পোথাস ও স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথও। হেরাথ বলেন, ‘বিশ্বকাপে তার চারপাশে সবসময় ক্যামেরা ছিল। এমন কিছু ঘটলে তার ভিডিও বের হতোই।’ পোথাস যোগ করেন, ‘এটা খুবই স্পষ্ট যে, কেউ হয়তো তার প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এ ধরনের অভিযোগ এনেছে।’
হাথুরুসিংহে মনে করেন, তাকে বরখাস্ত করা ছিল বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ। ‘আমি জানি না, গত ছয় মাসে কতগুলো চাকরির সুযোগ হারিয়েছি। বিসিবি শুধু আমার চাকরি নয়, আমার পুরো কোচিং ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে,’ বলেন তিনি।