বইমেলায় বন্ধ করা হলো স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্টল
Published: 16th, February 2025 GMT
অমর একুশে বইমেলায় একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্টল বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অভিযোগ উঠেছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি করায় স্টলটি বন্ধ করেছে বাংলা একাডেমি। তবে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলছেন, এই স্টলটি মেলায় নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদন নেয়নি। এজন্য বন্ধ করা হয়েছে। এর সঙ্গে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিংবা ডায়াপারের কোনো সম্পর্ক নেই।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, বইমেলায় কিছু কাজের জন্য আমরা ইভেন্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিই। তারা টয়লেটসহ মেলার অবকাঠামোর জন্য কিছু কাজ করে থাকে। এজন্য মেলা কমিটিকে জানিয়ে তারা ছোট ছোট স্পন্সর সংগ্রহ করার সুযোগ পায়। যেভাবে টয়লেট ক্লিনিং এর কাজ করছে ডেটল। তারা মেলা কমিটিকে জানিয়ে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু এই স্টলটি ইভেন্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন মেলা কমিটিকে না জানিয়ে স্থাপন করেছে।
এদিকে ইভেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান অনুমোদনহীনভাবে স্টলটি স্থাপন করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা কিছু কোম্পানি থেকে স্পন্সর সংগ্রহ করি। মেলা কমিটি আমাদেরকে জায়গা দেখিয়ে দেন। টয়লেট ক্লিনিং ডেটলের মতোই স্যানিটারি ন্যাপকিন আর ডায়াপারের জন্য এই স্টলটি দিয়েছিলাম।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চিঠি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসলামিক গ্রুপের আপত্তির কারণে মবের ভয়ে স্টলটিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি করতে নিষেধ করেছে মেলা পরিচালনা কমিটি।
তবে বইমেলা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই চিঠি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে স্পন্সর কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাতিয়ায় সড়কে অবস্থান নিয়ে ৭ ঘণ্টা বিক্ষোভ এনসিপি নেতা-কর্মীদের
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের ওপর হামলার ঘটনায় সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সোমবার রাত আটটা থেকে হাতিয়ার জাহাজমারা বাজারে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে হামলাকারীদের ধরতে প্রশাসনের অভিযানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে এনসিপি নেতা-কর্মীরা সড়ক থেকে সরে যান।
এদিকে হান্নান মাসউদসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শহরের জামে মসজিদ মোড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপূর্ত ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তুহিন ইমরান, জেলা সংগঠক ইয়াছিন আরাফাত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, বনি আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, ‘এ ধরনের হামলা আগে আওয়ামী লীগ করত। এখন যারা হামলা করছে, তাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। এখন আওয়ামী কায়দায় একটি দল মানুষের মুখে ভাষা কেড়ে নিতে চায়।’
গত সোমবার বিকেলে এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ তাঁর নিজ উপজেলা হাতিয়ার জাহাজমারা এলাকায় গণসংযোগে যান। তিনি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জাহাজমারা বাজারে একটি পথসভা করছিলেন। সভায় হান্নান মাসউদের বক্তৃতা চলাকালে কিছু ব্যক্তি পথসভায় বাধা দেন এবং একপর্যায়ে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মারধর শুরু করেন। হামলাকারীরা বিএনপির নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
এ হামলার পর রাত আটটার দিকে হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে জাহাজমারা বাজারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে দ্বিতীয় দফায় লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা হয়। তখন আরও কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে আবদুল হান্নান মাসউদও আহত হন। হামলার মধ্যেও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা।
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের দল। এনসিপির সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে, তখনো জাহাজমারা বাজারে হামলাকারীরা ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আবদুল হান্নান মাসউদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইউছুফ প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, দুই দফায় সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে তাঁদের কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় যখন হামলা চালানো হয়, তখন হামলাকারীদের অনেকের হাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তাঁরা হান্নান মাসউদকে হত্যার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার হামলা করেছেন। অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও আজ জাহাজমারায় গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হবে।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জাহাজমারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহরাজ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবদুর রবের ওপর সোনাদিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জাহাজমারা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন। এ সময় হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে একটি মিছিলের সঙ্গে তাঁরা মুখোমুখি হন। তখন সেখানে দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়েছে। বিষয়টি ভুল–বোঝাবুঝি।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।