খেলায় ‘স্লেজিং করা’ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, শিক্ষকসহ আহত ২০
Published: 16th, February 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খেলা শেষে স্লেজিং (কটু কথা) করাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিক্ষকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই গণিত বিভাগের। আহত শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেন মাথায় আঘাত পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন শহীদ আখতার, মানিক বাবু, সাইদ সিয়াম, মনির আহমেদ, আলী আহসান, সানাউল্লাহ, হাসিব মেজবাহ, অর্ণব, আল আরাফ, সাব্বির, লিখন, নাঈম, মুহিত প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে শহীদ, মানিক, সাইদ, মনির, আরাফ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ও গণিত বিভাগের মধ্যে খেলা ছিল। খেলায় গণিত বিভাগ তিন রানে জয়ী হয়। খেলা শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সমর্থকেরা স্টেডিয়াম ত্যাগ করার সময় স্লেজিং করা নিয়ে গণিত বিভাগের সমর্থকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। পরে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সমর্থকেরা স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে গণিত বিভাগের সমর্থকের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। একপর্যায়ে তাঁরা স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের ফটক ভেঙে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে ভেতরে ঢোকেন। দুই বিভাগের সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা। এ সময় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে গণিত বিভাগের সমর্থকদের ওপর হামলা করেন। পরে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এতে গণিত বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়ামের মধ্যে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে, এতে সাত থেকে আটজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। এ ধরনের খেলায় দুই গ্রুপের শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু খেলায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষকদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি ছিল না।
জানতে চাইলে গণিত বিভাগের সভাপতি আসাবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্টেডিয়াম থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। হামলায় তাঁদের এক শিক্ষকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। প্রথমে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়েন। তাঁদের হতাহতের সংখ্যা এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণ ত ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে বাধা, প্রতিবাদের পর ফটক খুলল পুলিশ
মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন দুটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ একপর্যায়ে তাঁদের পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সুযোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কিছু লোকজন। তবে তাঁরা সেখানে গিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের ফটক বন্ধ দেখতে পান। ফটকের সামনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নিরাপত্তাবলয় ছিল।
ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে তাঁরা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারে গেলে সেখানে থাকা পুলিশ তাঁদের জানায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সূর্যোদয়ের আগে কেউ ফুল দিতে পারবেন না। এ সময় তাঁরা এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
পুলিশ সদস্যদের এমন বাধার মুখে সংগঠন দুটির নেতা-কর্মী এবং উপস্থিত জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। শহীদ মিনারের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা ‘এই রাষ্ট্রের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই শহীদ মিনারের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই পুলিশের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘জবাব চাই জবাব দে, নইলে তালা খুলে দে’-সহ নানা স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে পুলিশ ফটকের তালা খুলে দেয়। এরপর উপস্থিত ছাত্র-জনতাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা নগরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তাঁরা স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঘটনাটিকে ‘শহীদ মিনারে আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপ’ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘উপস্থিত ছাত্র-জনতা শহীদ মিনারে এই ঘৃণ্য আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুলিশ প্রশাসন একপর্যায়ে তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা দিবসে যে পোশাক ফুল দিতে বাধা দেয়, সেই পোশাককে জনগণের মুখোমুখি হতেই হবে।’
এ বিষয়ে জানতে আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই বলব, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণের রাষ্ট্রীয় যে রীতি আছে, সবাই যেন সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ করেন।’