ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। আজ রোববার কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে কলেজটির শিক্ষক, কর্মচারী-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, অধ্যক্ষের অবসরের পর নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজনীন আরা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁকে দায়িত্ব না দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিং বডি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে দায়িত্ব দিয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে এমনটি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত বুধবার অধ্যক্ষের কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নীতিমালা মেনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তরের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে জেলা প্রশাসক মো.

জহিরুল ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করছেন। মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নীতিমালা মেনে যোগ্য শিক্ষকের কাছেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর ডিগ্রি কলেজ চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষের কক্ষসহ কলেজের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝোলানো। কয়েকজন শিক্ষক তালাবদ্ধ ভবনগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত। একজন শিক্ষককে দেখা গেল, মাঠের মধ্যেই কংক্রিটের বেঞ্চের ওপর বসে সকালের নাশতা সেরে নিচ্ছেন। কলেজ চত্বরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অফিস সহকারী আরাফাত আলম মল্লিক ও তানভীর হোসেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তির ফরম বিতরণ করছেন।

তানভীর হোসেন বলেন, উপবৃত্তির ফরম পূরণ শেষে ১৭ ফেব্রুয়ারি জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে খোলা মাঠেই ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। তা না হলে উপবৃত্তি থেকে অনেকেই বঞ্চিত থেকে যাবেন। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মোহনা বিশ্বাস চৈতি জানায়, পাঠদান বন্ধ আছে জানার পরও তারা কেবল উপবৃত্তির ফরম পূরণ করতে কলেজে এসেছে। সার্বিক বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।

বাংলা বিভাগের শিক্ষক আয়েশা আক্তার বলেন, সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ মো. আবু রাশেদের শেষ কর্মদিবস ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। এদিন তিনি চাকরি থেকে অবসরজনিত ছুটিতে (পিআরএল) যান। অবসর নেওয়ার মূল নিয়ম হচ্ছে, কমপক্ষে তিন মাস আগে গভর্নিং বডির সভা ডেকে একটি রেজল্যুশন করতে হয় এবং ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বিদায়ী অধ্যক্ষ তা করেননি।

আয়েশা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমি যত দূর জেনেছি, গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্যার বারবার মিটিং ডাকার কথা বললেও তিনি (অধ্যক্ষ মো. আবু রাশেদ) ডাকেননি। উনি যাওয়ার আগের দিনও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি এবং যেদিন চলে গেছেন, ডিসি অফিসে দেখা করে চলে গেছেন। আমরা যাঁরা শিক্ষক আছি, তাঁরা ওনাকে বিদায় দেওয়ার জন্য ফুল-মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষা করেছি, স্যার আসেননি, চলে গেছেন। উনি জানিয়েছেন, শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা ওনার প্রয়োজন নেই। কেন, কী উদ্দেশ্যে এমন করেছেন, আমি বলতে পারব না। বিদায়ের আগে অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তর করলে এমন হতো না।’

এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ বেলা ১১টা থেকে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে সহকারী অধ্যাপক নাজনীন আরা খাতুন নিজেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার দাবি করে বলেন, ‘গভর্নিং বডি নীতিমালা না মেনেই তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিচ্ছেন। যা মেনে নেওয়া যায় না।’

নাজনীন আরার বক্তব্যকে সমর্থন করে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘১১ ফেব্রুয়ারি গভর্নিং বডির সভায় নীতিমালা না মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার প্রতিবাদে আমরা এর আগে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছি এবং আজ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হচ্ছে।’

কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আকাশ হোসেন বলে, ‘দুই ম্যাডামকেই আমরা শ্রদ্ধা করি। তবে নীতিমালা অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ হোক, সেটাই শিক্ষার্থীদের আশা।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপব ত ত গভর ন

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক কোচিং সেন্টার মালিকের কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. জোবায়দুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ওই নালিশি মামলা করেন।

জোবায়দুর রহমানের আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পল্টন থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জোবায়দুর রহমান মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র মালিক।

মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ছাড়াও আসামি হিসেবে আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা, উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও এসআই আতিকুর রহমান। অভিযুক্ত পরের তিনজন সিআইডিতে চাকরি করলেও তারা এখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, জোবায়দুর রহমান সপরিবারে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলিবাগে থাকেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট সাদা পোশাকে সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় তারা জোবায়দুর রহমানকে তুলে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যায় এবং তাঁর বাসার বিভিন্ন মালামাল লুট করে। তাঁকে ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হলেও তাঁর বিষয়ে পরিবারকে জানায়নি সিআইডি।

মামলার আরজিতে বলা হয়, সিআইডি কার্যালয়ে জোবায়দুরের দুই চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। পরে ওই ছবি তাঁর স্ত্রী ও পরিবারকে পাঠানো হয়। তৎকালীন সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে জোবায়দুরের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দেওয়া না হলে তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ও তাঁর স্ত্রীকে মানিলন্ডারিংয়ে মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।

জোবায়দুরের পরিবার গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে সিআইডির এসআই মেহেদী হাসানের গাড়িচালক সবুজের কাছে দফায় দফায় চার কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এসআই আতিকুর রহমান টাকা দেওয়ার স্থান ও সময় জানিয়ে তা তদারকি করতেন। টাকা নেওয়া–সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড জোবায়দুরের কাছে আছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব ৬ মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

জোবায়দুরকে রিমান্ডে নিয়ে পেটালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে ৪৩ দিন কারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী জোবায়দুর রহমান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ও এজাহারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরপর শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছে।

আজ বুধবার এ ব্যাপারে জানতে সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

মোহাম্মদ আলী মিয়া ২০২২ সালের আগস্টে সিআইডি প্রধান হন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট মোহাম্মদ আলীকে সিআইডি থেকে  পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি হত্যা মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুনসিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের২৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভিনয়কে বিদায় সোহেল রানার, করবেন না সক্রিয় রাজনীতি
  • অভিনয়কে বিদায় জানালেন সোহেল রানা,করবেন না সক্রিয় রাজনীতি
  • অবসরের সময় হয়ে গেছে—আইপিএলে ‘সুপার ফ্লপ’ রোহিতকে নিয়ে শেবাগ
  • বাধ্যতামূলক অবসর এনবিআরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে 
  • অভিনয়-রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি: সোহেল রানা
  • ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা
  • ঘরের মাঠে অবসর নেওয়াই বড় ইচ্ছা: সাকিব
  • অবসরে হলে গিয়ে সিনেমা দেখলেন ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল-মিরাজরা
  • অবসরে সিনেমা হলে ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল-মিরাজরা