‘নির্বাচনের জন্য জনগণ অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করবে না’
Published: 16th, February 2025 GMT
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জনগণ অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করবে না। এখন সময় এসেছে জনগণের অধিকার জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়ার। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।”
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কেরানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ফিরে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারগুলো টেকসই করতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজন। সংসদে বসেই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে। সংস্কারের নামে বছরের পর বছর জনগণ অপেক্ষা করবে না। ১৬ বছর ধরে দেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সবকিছু নিয়ে কাজ করতে চাইলে কোনোটাই সফল হবে না। তাই জনগণের মৌলিক ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী।
কেরানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আগানগর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- দক্ষিণ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মোজাদ্দেদ আলী বাবু, আগানগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, আরশাদ রহমান সপু, ঢাকা জেলা দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি, পাভেল মোল্লা প্রমুখ।
ঢাকা/শিপন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র স জনগণ র
এছাড়াও পড়ুন:
মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমিরকে চাঁদাবাজির মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। সানজানা ম্যানপাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সমির। গত বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারায় প্রতিরোধ আটকাদেশে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আছেন। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। আটকের সময় রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মেঘনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বিদায় নেওয়া সৌদি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনাকে আটক করেছে পুলিশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসার পর এ ব্যাপারে পুলিশ পদক্ষেপ নেয়। এর পর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হলে তাঁকে আটক করা হয়। এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তাঁর বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেওয়ান সমিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, আসামি গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়।
কাশিমপুর-২ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আল মামুন সমকালকে বলেন, প্রতিরোধমূলক আটকাদেশের বন্দিদের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়। অন্যান্য বন্দির মতো তারা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দারা থাকেন।
নিন্দা-প্রতিবাদ
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তিসহ এই আইন বিলোপের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিবৃতিতে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী পক্ষ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দ্রুত এই কালো আইন বাতিল, মেঘনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। যে বা যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় ইস্যু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনোই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।