লামায় রাবারবাগান থেকে ২৬ শ্রমিককে অপহরণ, মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি
Published: 16th, February 2025 GMT
বান্দরবানে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর দুর্গম মুরুংঝিরি থেকে আজ রোববার সকালে রাবারবাগানের ২৬ জন শ্রমিককে অপহরণ করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের জন্য মুক্তিপণও দাবি করেছে বলে রাবারবাগানের একজন মালিক জানিয়েছেন।
বাগানমালিকের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের অপহরণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম মুরুংঝিরি এলাকার সন্ত্রাসীরা কয়েকটি রবারবাগানে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে সেখানে কর্মরত ২৬ জন শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। প্রকাশ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর মুরুংঝিরি আশপাশের গোয়ালমারমা, মংবিচর ও তীরেরডেবা এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
রাবারবাগানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে অপহৃত ২০ জন শ্রমিকের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (২৬), আয়ুব আলী (২৬), মো. সিদ্দিক (৪০), আবদুল খালেক (২০), আবদুল মাজেদ (১৭), মনিরুল ইসলাম (৩০), জিয়াউর রহমান (৪৫), মো. মোবারক (২৫), মো. হারুন (৩০), রমিজ উদ্দিন (৩২), সৈয়দ নুর (২৮), মো. কায়ছার (৩৮), মনির হোসেন (৩৫), মো. ইমরান (১৭), মো. মঞ্জুরুল (৩০), আবছার আলী (২৫), খায়রুল আমিন (৩০), আবু বক্কর (২৮), আবদুর রাজ্জাক (৩৩) ও মো. মবিন (২৫)। বাকি ৬ জনের নাম জানা যায়নি।
মুরুংঝিরি এলাকার রাবারবাগানের মালিক মো. শাহাজাহান বলেন, আজ সকালে সন্ত্রাসীরা ৬টি বাগান থেকে ২৬ জনকে অপহরণ করেছে। এর মধ্যে তাঁর বাগান থেকে ১২ জনকে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
শাহাজাহান আরও জানান, সন্ত্রাসীরা অপহরণের শিকার এক শ্রমিকের মুঠোফোন থেকে আজ বিকেলে তাঁকে ফোন করে। বাগানের প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয়।
জানতে চাইলে লামা থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন জানিয়েছেন, কয়েকটি রবারবাগান থেকে ২৬ জন শ্রমিককে অপহরণের ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। অপহরণকারীরা পাহাড়ি সন্ত্রাসী হতে পারে। ওই সন্ত্রাসীরা কিছুদিন আগেও সরই ইউনিয়নের বমুখালের আগা থেকে তামাকখেতের শ্রমিকদের অপহরণ করেছে। উদ্ধার অভিযানে যাওয়া দল ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের জন্য কাঁদছিল শিশুটি, অপহরণকারী ভেবে বাবাকে পেটালেন জনতা
কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া সওদাগরপাড়ার সোহেল মিয়ার (৩০) সঙ্গে প্রতিবেশী সাবিনা আক্তারের (২৫) বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে। এই দম্পতির তিন সন্তান। কিছুদিন আগে সোহেলকে তালাক দেন সাবিনা। সন্তান রয়ে যায় বাবার কাছে। তিন বছর বয়সী রাইসা মায়ের কাছে যেতে অস্থির।
রাইসার জন্য স্ত্রীর খোঁজে বের হন সোহেল। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে রাইসাকে নিয়ে সোহেল একই জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করার সময় মায়ের জন্য কান্না করছিল রাইসা।
শিশুটির কান্না দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে অপহরণকারী ভেবে সোহেলকে বেঁধে বেধড়ক পেটান তাঁরা। এ সময় রাইসা আব্বা আব্বা বলে কান্না করলেও জনরোষ থেকে রক্ষা পাননি সোহেল। ‘এই ভাই, এই ভাই আমার কথা হুনুইন’ বলে বারবার ক্ষুব্ধ জনতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান সোহেল। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রমাণ হয় সোহেল অপহরণকারী নন। কোলে থাকা শিশুটি তাঁরই মেয়ে।
শিশুকন্যার সামনে বাবাকে পেটানোর ঘটনাটি ঘটে গতকাল রোববার বিকেলে কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের তাতারকান্দিতে। পুলিশ রাত ১০টার দিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে সোহেলকে তুলে দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, খুবই দুঃখজনক, কষ্টদায়ক। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হতেই পারে। সন্দেহ হলেই প্রমাণ ছাড়া বিচার শুরু করে দেওয়া বড় অন্যায়, বড় ভুল। সোহেলের ক্ষেত্রে তা–ই হয়েছে। রাতেই সোহেলের মা, ভাইসহ আরও অনেকে থানায় এসে দুজনকে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মায়ের সঙ্গ বঞ্চিত রাইসাকে শান্ত রাখার জন্য সোহেল তাকে বেশি বেশি আদর করতেন। তাতেও কাজ হচ্ছিল না। এ কারণে রাইসাকে সঙ্গে নিয়েই সাবেক স্ত্রীর খোঁজে বের হয়েছিলেন সোহেল। ভৈরবে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাইসার মা থাকতে পারেন ভেবে কয়েক দিন আগে রাইসাকে নিয়ে সেখানে যান সোহেল; কিন্তু তাঁকে পাননি। গতকাল ভৈরব থেকে বাড়ি ফেরার সময় আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
সোহেলের মা নিয়া শাহ বেগম থানায় এসে আহত সোহেলকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি হুনছি নাতি আমার আব্বা আব্বা করছিল। আব্বার কাছে যাইতে চাইছিল।’ নিয়া শাহর প্রশ্ন, ‘তাতেও কি মানুষের বুদ্ধিতে কিছু ধরে নাই! নাতির কথা না হুইনা সবাই আমার পুতেরে মাইরা ফালাইতে চাইল?’
ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথমত শিশুটি হাউমাউ করে কান্না করছিল। দ্বিতীয়ত শিশুটির বাবার চেহারা দেখে স্বাভাবিক মনে হয়নি। ধরার পর বিশ্বাস করার মতো করে কিছু বলতে পারেননি। শিশুটিও তখন কেবল কান্না করছিল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। এরই মধ্যে লোকজন ভিডিও করে এবং শিশুর অপহরণকারী ধরা শিরোনাম দিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করতে থাকে। মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন সচেতন কয়েকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত এসে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, বাবাকে মারতে দেখে শিশুটির কান্না করে আব্বা আব্বা বলছিল। তখন বোঝা উচিত ছিল।
মুক্ত হওয়ার পর সোহেল বলেন, ‘তাঁরা (ক্ষুব্ধ জনতা) আমার কোনো কথাই হুনে নাই। রাইসা আমার মাইয়া—এই কথাটা কওয়ার সুযোগ দেয় নাই। যে যেমনে পারছে মারছে আর ভিডিও করছে।’