স্কুল-কলেজ পরিচালনা পর্ষদে সদস্য হতে বিএ-এমএ পাসের নির্দেশ
Published: 16th, February 2025 GMT
পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘‘স্কুল পরিচালনা পর্ষদে সদস্য হতে হলে বিএ এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদে এমএ পাস হতে হবে— এই বিষয়গুলো ডিসিদের সতর্কতার সঙ্গে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ এ সময় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষকদের নিয়ে স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের জন্যও নির্দেশ দেন তিনি।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন শিক্ষা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কার্য-অধিবেশন শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রশাসনে অনেক অনেক দুর্নীতি আছে। এগুলোতে একটু নজরদারি করতে বলেছি। শিক্ষকরা ঠিকমত তাদের ভাতা পান না। স্কুল পরিদর্শকদের হেনস্তার শিকার হন। দুই পক্ষেরই দোষ থাকে, এগুলো নজরদারি দরকার।’’
তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। এখানে যারা ছিল তারা চলে গেছে। চর দখলের মতো নতুন প্রভাবশালীরা সেটা দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম। ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
‘‘কিন্তু আমরা এটাও বুঝি যে, এতগুলো দায়িত্ব তাদের পক্ষে নেওয়া খুব কঠিন। এ কারণে আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি যে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পরিষদগুলো আবার শুরু করে দিতে।’’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এটা (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ) করতে গিয়ে তারা এই সময়ে যেন রাজনৈতিক চাপ সহ্য করে প্রতিহত করে, তারা যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় যারা ভালো মানুষ আছেন সৎ মানুষ আছেন, সবার মধ্যে যারা গণ্যমান্য সরকারি চাকরে আছেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন এমন লোকদের যেন পরিচালনা পর্ষদে নেন। শিক্ষকরা যেন চাকরি পাওয়া ও অন্য সুবিধাদি পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার না হন।’’
তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটি পরিপত্র দিয়েছি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে বিএ পাস এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি হতে হবে। এটিতে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।’’
পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘যেসব বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হবে, সেসব বিষয়ের বই ফেব্রুয়ারির শেষের মধ্যে চলে যাবে বলে আশা করছি। প্রান্তিক স্কুলগুলোতে যেন আগে বই যায় সে বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছিলাম।’’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এমপিভুক্ত স্কুলশিক্ষকদের জন্য যতটুকু করার আমি চেষ্টা করবো। তাদের জন্য অনলাইনভিত্তিক বদলির একটি ব্যবস্থা করছি। তারা যে ভাতাগুলো পান তা অপ্রতুল। আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে তাদের ভাতাগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি শিক্ষকদের ৬-৭ বছরের অবসর ভাতা বকেয়া রয়ে গেছে। সেটা যেন আগামী অর্থবছর থেকে একটি স্থায়ী সমাধান হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। একটি বছরের বাজেটের ওপর যেন অত্যধিক চাপ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বন্ড দিচ্ছে। যে বন্ড দিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে বকেয়া আছে সব শোধ করা যাবে।’’
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘কোথাও স্কুল আছে শিক্ষক নাই, কোথাও শিক্ষক আছে দালানকোঠা নাই। অবকাঠামোর কিছু ঘাটতি থাকলেও শিক্ষার যেন মানোন্নয়ন হয়, শিক্ষকরা যেন আরেকটু ভালো সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে চেষ্টা করবো।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্য বছরের চেয়ে আনুপাতিকভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করবো।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে অনেক অসমাপ্ত প্রকল্প রয়েছে। কারণ আগের ঠিকাদাররা পালিয়ে গেছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা পরিকল্পনা করে এগুলো সম্পন্ন করতে পারেন। ডিসিদের ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণসহ অতি প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’
এ ছাড়া, তিনি আগামী বছর থেকে প্রান্তিক জনপদের স্কুলগুলোর জন্য বই দ্রুত পৌঁছানোর বিষয়েও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
ড.
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ল কল জ উপদ ষ ট র জন য বছর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে: সালাউদ্দিন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, সংবিধান সংস্কার সুপারিশের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং আইন বিভাগ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। বিচার বিভাগ নিয়ে আলাদা আলোচনা করেছি। কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো আবার আমাদের দলীয় ফোরামেও আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, এছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমিশনকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। সেসব বিষয়ে কমিশন পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। নামাজ ও মধ্যহ্নভোজ সময়টুকু ছাড়া বিরতিহীন তা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে শুধু সংবিধান এবং বিচার বিভাগ সংস্কারের আংশিক আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদদ) সংস্কার নিয়ে কথা হয়নি।
সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানের সংস্কারে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানিয়েছি। কমিশন কতটুকু গ্রহণ করবে, তা পরবর্তীতে দেখা যাবে। আস্থা-অনাস্থা ভোট এবং সংবিধানে সংশোধনে যদি ৭০ অনুচ্ছেদ না থাকে, সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি মতামত দিয়েছে, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থাভোট ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতিত এমপিরা স্বাধীন থাকবেন। চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র সমৃদ্ধি হয়। আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারিনি, ভবিষ্যতে যদি সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতায় যদি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি, তাহলে ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তখন উম্মুক্ত করা যেতে পারে।
গণভোট ও সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরও গণভোট লাগবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিযোগের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় স্পিকারসহ ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমবে।
সালাহউদ্দিন আহমদে বলেছেন, এনসিসি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়নি। তবে দফাওয়ারি আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছি, বিএনপি এনসিসি গঠনের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। এনসিসির চর্চা নেই দেশে। হঠাৎ তা করলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী বিভাগ এবং সংসদ দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। যে সময় সংসদ থাকবে না বা সংসদ ভেঙ্গে যাবে, তখন এনসিসি খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্যকিছু করে কিনা, তা দেখতে হবে।
বিএনপি আগেই জানিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকারের করা পঞ্চদশ সংশোধনী আগে সংবিধানের যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনর্বহাল করতে হবে। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের করা চার মূলনীতি পুনর্বহাল তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ফেরত চায়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এখানে একটা ভুল বোঝার কারণ ছিল, কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যান্যগুলো বাতিলে জন্য প্রস্তাব করেছে। বিএনপি চেয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থায় যাওয়া হোক। ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ মূলনীতি হিসেবে থাকবে। সুতরাং বিএনপি বহুত্ববাদের পক্ষেও নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রয়েছে, সেগুলো প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে অর্ন্তভুক্ত করা যায় কিনা কমিশন প্রস্তাব করেছে। এতে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত। তবে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে জানাবে কমিশনকে’।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিচার বিভাগ সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশে ভিন্নমত জানানো বিএনপি বলেছে, এজন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চায়, তবে তা করবে পরবর্তী সংসদ। বিএনপি দলের ৩১ দফা অনুযায়ী, বিচার বিভাগের সংস্কার চায়। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের অন্তর্বর্তী সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, সে জন্যও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে দলটি অভিমত জানিয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য আছে, আবার কিছু বিষয়ে মতপার্থক্যও আছে। কমিশনের কিছু যুক্তি গ্রহণ করেছি। যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবার বিএনপির অধিকাংশ যুক্তিও কমিশন নোট নিয়েছে। এভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যেতে পারবো বলে আশাবাদী।
দিনভর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের সুপারিশের অধিকাংশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত জানানো বিএনপি; আলোচনার টেবিলেও এতে রাজি হয়নি। আগামী রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে দলটি।
আলোচনার আগে গত বুধবার রাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১ সুপারিশের ওপর ৫১ পৃষ্ঠার এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিপরীতে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয় বিএনপি। ‘ফুল রেসপন্স’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে উভয় কমিশনের প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দলীয় অবস্থানের বিস্তারিত জানিয়েছে।