পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘‘স্কুল পরিচালনা পর্ষদে সদস্য হতে হলে বিএ এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদে এমএ পাস হতে হবে— এই বিষয়গুলো ডিসিদের সতর্কতার সঙ্গে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ এ সময় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষকদের নিয়ে স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের জন্যও নির্দেশ দেন তিনি। 

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন শিক্ষা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কার্য-অধিবেশন শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রশাসনে অনেক অনেক দুর্নীতি আছে। এগুলোতে একটু নজরদারি করতে বলেছি। শিক্ষকরা ঠিকমত তাদের ভাতা পান না। স্কুল পরিদর্শকদের হেনস্তার শিকার হন। দুই পক্ষেরই দোষ থাকে, এগুলো নজরদারি দরকার।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। এখানে যারা ছিল তারা চলে গেছে। চর দখলের মতো নতুন প্রভাবশালীরা সেটা দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম। ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

‘‘কিন্তু আমরা এটাও বুঝি যে, এতগুলো দায়িত্ব তাদের পক্ষে নেওয়া খুব কঠিন। এ কারণে আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি যে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পরিষদগুলো আবার শুরু করে দিতে।’’

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এটা (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ) করতে গিয়ে তারা এই সময়ে যেন রাজনৈতিক চাপ সহ্য করে প্রতিহত করে, তারা যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় যারা ভালো মানুষ আছেন সৎ মানুষ আছেন, সবার মধ্যে যারা গণ্যমান্য সরকারি চাকরে আছেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন এমন লোকদের যেন পরিচালনা পর্ষদে নেন। শিক্ষকরা যেন চাকরি পাওয়া ও অন্য সুবিধাদি পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার না হন।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটি পরিপত্র দিয়েছি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে বিএ পাস এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি হতে হবে। এটিতে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।’’ 

পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘যেসব বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হবে, সেসব বিষয়ের বই ফেব্রুয়ারির শেষের মধ্যে চলে যাবে বলে আশা করছি। প্রান্তিক স্কুলগুলোতে যেন আগে বই যায় সে বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছিলাম।’’ 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এমপিভুক্ত স্কুলশিক্ষকদের জন্য যতটুকু করার আমি চেষ্টা করবো। তাদের জন্য অনলাইনভিত্তিক বদলির একটি ব্যবস্থা করছি। তারা যে ভাতাগুলো পান তা অপ্রতুল। আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে তাদের ভাতাগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি শিক্ষকদের ৬-৭ বছরের অবসর ভাতা বকেয়া রয়ে গেছে। সেটা যেন আগামী অর্থবছর থেকে একটি স্থায়ী সমাধান হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। একটি বছরের বাজেটের ওপর যেন অত্যধিক চাপ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বন্ড দিচ্ছে। যে বন্ড দিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে বকেয়া আছে সব শোধ করা যাবে।’’

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘কোথাও স্কুল আছে শিক্ষক নাই, কোথাও শিক্ষক আছে দালানকোঠা নাই। অবকাঠামোর কিছু ঘাটতি থাকলেও শিক্ষার যেন মানোন্নয়ন হয়, শিক্ষকরা যেন আরেকটু ভালো সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে চেষ্টা করবো।’’

তিনি বলেন, ‘‘আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্য বছরের চেয়ে আনুপাতিকভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করবো।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে অনেক অসমাপ্ত প্রকল্প রয়েছে। কারণ আগের ঠিকাদাররা পালিয়ে গেছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা পরিকল্পনা করে এগুলো সম্পন্ন করতে পারেন। ডিসিদের ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণসহ অতি প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’

এ ছাড়া, তিনি আগামী বছর থেকে প্রান্তিক জনপদের স্কুলগুলোর জন্য বই দ্রুত পৌঁছানোর বিষয়েও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

ড.

মাহমুদ বলেন, ‘‘আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ডিসিদের এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন উপহার দিতে ডিসিদের সঠিক ভূমিকা পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ল কল জ উপদ ষ ট র জন য বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈশ্বরদীতে পরচুলা তৈরির কারখানা করবে চীনা কোম্পানি

বাংলাদেশে পরচুলা তৈরির কারখানা স্থাপন করবে চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাইজিনটোন হেয়ার প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড। ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) এই কারখানা স্থাপন করা হবে।

এ কারখানা স্থাপনে চীনা প্রতিষ্ঠানটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) বিনিয়োগ করবে। এখানে বছরে ৬৯ লাখ ৮০ হাজার পিস পরচুলা ও চুলসংশ্লিষ্ট পণ্য তৈরি হবে। এখানে কর্মসংস্থান হবে ১ হাজার ৪৭৪ জন বাংলাদেশি নাগরিকের।

আজ সোমবার রাজধানীর গ্রিন রোডে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী দপ্তরে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। বেপজার সদস্য (প্রকৌশল ও বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. ইমতিয়াজ হোসেন এবং বাংলাদেশ হাইজিনটোন হেয়ার প্রোডাক্টস কোম্পানির চেয়ারম্যান গাও টোয়ানজু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

বেপজা জানিয়েছে, এটি হতে যাচ্ছে ঈশ্বরদী ইপিজেডে পরচুলা ও চুলসংশ্লিষ্ট পণ্য প্রস্তুতকারী চতুর্থ কোনো প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে একই ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী আরও তিনটি কারখানা ওই ইপিজেডে উৎপাদনে রয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক মো. তানভীর হোসেন, মো. খুরশিদ আলম, মো. তাজিম-উর-রহমান ও এ এস এম আনোয়ার পারভেজ এবং চীনা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ