মুঠোফোনের সূত্র ধরে বের হয়ে এল রক্তমাখা লাঠির রহস্য
Published: 16th, February 2025 GMT
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একটি ভুট্টাখেত থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনের সূত্র ধরে ভুট্টাখেতে পড়ে থাকা রক্তমাখা লাঠি এবং পাকা সড়কে পড়ে থাকা রক্তমাখা দড়ির রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মুঠোফোনে থাকা সিমের মালিক এক নারীর পরিচয় শনাক্তের পর এ রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাইদুল ইসলাম (৪৮) নামের এক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ রোববার বেলা আড়াইটায় তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানো হয়েছে।
সাইদুলকে দিনাজপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান।
সাইদুল উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দামারপাড়া গ্রামের হেসাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৭ বছর ধরে উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সাইদুল উপজেলার কাটলা বাজারের একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সাইদুল মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত বুলবুল আহমেদ একই উপজেলার জোতবানী গ্রামের মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। আহত বুলবুল ব্যবসায়ী সাইদুলের দুঃসম্পর্কের মামা বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল দুপুরে উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের পলি খিয়ারমামুদপুর গ্রামের একটি পাকা সড়কের পাশে রক্তমাখা দড়ি এবং দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামে জনৈক আনোয়ার হোসেনের ভুট্টাখেত থেকে রক্তমাখা বাঁশের লাঠি ও সিমসহ একটি মুঠোফোন উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একই সময়ে ওই পাকা সড়ক ও ভুট্টাখেতের মাঝামাঝি অংশের একটি আলপথের পাশে পেট্রোলভর্তি এক লিটারের দুটি বোতল জব্দ করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে ভুট্টাখেত থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনে থাকা সিমের মালিকের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়। সিমটি উপজেলার জোতবানী গ্রামের বুলবুলি বেগম নামের একজনের নামে নিবন্ধন করা বলে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই দিন বিকেলে পুলিশ বুলবুলির বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে বুলবুল আহমেদকে ওই বাড়িতে আহত ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় পান। পরে পুলিশ বুলবুলকে আহত হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে গত শুক্রবার রাতে দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামের ওই ভুট্টাখেতে সাইদুলের হাতের বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত ও হাতাহাতির ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছেন বলে জানান।
বুলবুল জানান, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে সাইদুল তাঁর মুঠোফোনে কল দিয়ে তাঁকে কাটলা বাজারে যেতে বলেন। পরে সন্ধ্যায় বুলবুল কাটলা বাজারে গেলে সাইদুল দোকান বন্ধ করে আসছি বলে বুলবুলকে ওই বাজারের পূর্ব পাশে ছোট যমুনা নদীর ব্রিজের ওপরে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে রাত ৮টার দিকে সাইদুল ব্রিজে গিয়ে বুলবুলকে নিয়ে উপজেলার মির্জাপুর মণ্ডব এলাকায় যান। সেখানে সাইদুল মুঠোফোনে একজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বুলবুলকে বলেন, ‘১০ জন ছেলে এই রাস্তা দিয়ে মাল (মাদকদ্রব্য) নিয়ে আসবে, তখন এদিক দিয়ে আমরা চলে যাব।’ সেখান থেকে তাঁকে আবারও কাটলা বাজারে নিয়ে আসেন সাইদুল। এরপর বাজার থেকে বুলবুলকে সাইকেলে তুলে নিয়ে দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত একটি মাহফিলে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বুলবুলকে নিয়ে মাহফিলের অবস্থান থেকে পশ্চিমে প্রায় ৪০০ গজ দূরে একটি ভুট্টাখেতে যান সাইদুল। সেখানে ভুট্টাখেতের আলে বসে থাকা অবস্থায় পেছন দিক দিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে বুলবুলের মাথায় আঘাত করেন সাইদুল। এ সময় বুলবুল নিজেকে রক্ষা করতে সাইদুলের দুই হাতের আঙুলসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড় দেন। দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা ভুট্টাখেতের মধ্যে দুজনের মারামারি হয় বলে বুলবুল জানান। পরে একসময় বুলবুল সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে যান।
এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সাইদুল ও বুলবুলের মধ্যে হয়তো মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই সূত্র ধরে শুক্রবার রাতে বুলবুলকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ভুট্টাখেতে ডেকে নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন সাইদুল। তবে দুজন এখনো পুরোপুরি সত্য কথা বলেননি বলে মনে হচ্ছে। সেই সঙ্গে তদন্তও চলছে। সাইদুলকে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাচেলর পয়েন্টের ‘পলি চেয়ারম্যান’ খ্যাত গুলশান আরা মারা গেছেন
নাটক ও সিনেমার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে মৃত্যু হয়েছে তার।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছন পরিচালক এম রাহিম। তিনি জানান, শ্রদ্ধেয় শুলশান আরা আহমেদ আজ আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। জংলি আপনার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। আপনি আজীবন আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে থাকবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিচালক কাজল আরেফিন অমি। পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমাদের গুলশান আরা আহমেদ আপা আপা আজ সকাল ৬:৪০-এ ইন্তেকাল করেছেন।’
অমি আরও লিখেছেন, ‘ব্যাচেলর পয়েন্টে উনি কাবিলার আম্মা, নোয়াখালীর চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনাকে আমরা মিস করবো আপা। আল্লাহ পাক ওনাকে জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে, জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।’
জানা গেছে, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন অভিনেত্রী। দ্রুতই লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। গুলশান আরা আহমেদের ফেসবুক আইডি থেকে মাঝরাতে লেখা হয়, ‘আমার আম্মু গুলশান আরা আহমেদ আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউরের জন্য। আপনার সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।’
পরে শোনা যায় মৃত্যুর খবর, অর্থাৎ লাইফ সাপোর্ট থেকে আর ফেরানো যায়নি তাকে। ভোরে তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিনেত্রীকে দাফন করা হবে। অভিনেত্রীর বোনের ছেলে অভিনেতা আর এ রাহুল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন অভিনেত্রী। তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
গুলশান আরা ২০০২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করেন। তবে নিজেকে একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা থেকেই গুলশান আরা প্রথম অভিনয় করেন প্রয়াত এনায়েত করিম পরিচালিত ‘কদম আলী মাস্তান’ চলচ্চিত্রে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘চরিত্র’, ‘ডনগিরি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘পোড়ামন’ এর মতো জনপ্রিয় সব ছবি।