অটোভ্যান চুরির অভিযোগে তরুণকে বেঁধে পিটুনি, ভিডিও ধারণ, উদ্ধার করল পুলিশ
Published: 16th, February 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চুরির অভিযোগে তরুণকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পেটাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। আশপাশ থেকে আরও কয়েকজন এসে মারলেন কিলঘুষি। কাঁদছিলেন ওই তরুণ। এমন দৃশ্য ভিডিও ধারণে ব্যস্ত ছিলেন কয়েকজন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই তরুণকে উদ্ধার করে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার তরুণের নাম ইকবাল হোসেন (২৬)। তাঁর বাড়ি উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে। সরকারের দেওয়া ঘরে তাঁর বসবাস। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ওই তরুণ মাদকসেবী। তিনি লোকজনের কাছ থেকে টাকা চান। তবে এভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।
গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, ইকবাল হোসেন মাদকাসক্ত। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ পেয়েছিলেন। তবে অটোভ্যান চুরি এবং তাঁকে পিটুনির বিষয়টি তিনি জানেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা দেড়টার দিকে ইকবাল হোসেন নামের এক তরুণ হেঁটে উপজেলা ভূমি অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন। উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর হারিয়ে যাওয়া অটোভ্যান চুরির অভিযোগে ইকবালকে আটক করেন। ভবানীগঞ্জ বাজারে নিয়ে তাঁকে একটি মিষ্টির দোকানে আটকে রেখে মারধর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় বাজারের লোকজন সেখানে ভিড় করে তাঁরাও মারধরে অংশ নেন। বাজারে ৩০ মিনিট ধরে পিটুনির পর ভিড় এড়াতে ইকবালকে বাজারের আলুহাটায় উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে আসেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি একটি খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ওই তরুণকে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। কীভাবে অটোভ্যানটি চুরি করা হয়েছে তার স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় ওই তরুণ নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক শামীম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, চোর সন্দেহে মারধর করার দৃশ্য দেখে তিনি মুঠোফোনে থানার ওসিকে জানান। পরে পুলিশের একটি দল এসে বেলা তিনটার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে।
দাসপাড়া গ্রামের ওই ভ্যানচালক বলেন, গত শুক্রবার ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে তাঁর একটি অটোভ্যান চুরি হয়েছে। ওই দিন ভ্যানের খোঁজ করতে গিয়ে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভ্যানের যাত্রী হিসেবে ইকবাল হোসেনকে দেখেছেন। তবে চোখের আড়াল হওয়ায় আর ধরতে পারেননি। আজ ভবানীগঞ্জ বাজারে এলে তাঁকে চিনতে পেরেছেন। এর আগে তাঁর আরেকটি অটোভ্যান চুরি হয়েছে।
মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করা দুই তরুণ জানান, ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার (পোস্ট করা) জন্য ভিডিও করেছেন। বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চেহারায় মিল থাকায় চোর সন্দেহে ধরে ওই তরুণকে মারধর করেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকব ল হ স ন ম রধর ল কজন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গুদাম উন্নত করা দরকার
বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা, তা নিয়ে নানা শঙ্কার খবর আসছে। প্রতি বছর এই শঙ্কা থাকে, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। এর পেছনে কিছু সাধারণ কারণ থাকলেও এলাকাভেদে এর ভিন্নতা আছে। তবে দিনের শেষে ফলাফল– চাষির দীর্ঘশ্বাস।
দেশে বোরো ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, আর ২৬ শতাংশ ভাগচাষি। উৎপাদন খরচ বেশি আর দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। তারা মূলত ঋণ করে ও পারিবারিক অর্থ বিনিয়োগ করে ধান চাষ করেন। এর পর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বেচে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরকার প্রতি বছর যে চাল সংগ্রহ করে, তাতে মূলত চালকল মালিকরা লাভবান হন।
এসব কারণে প্রতি বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তলানিতে থাকে। উপজেলা শহরের খাদ্যগুদামে গিয়ে কৃষকরা ধান বিক্রির ধকল পোহাতে চান না। তাই সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করে দেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যভেদে কৃষিপণ্যের সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে মোট উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। উৎপাদন খরচের ওপর তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা যোগ করে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। যদিও কৃষকদের দাবি থাকে ৫০ শতাংশ মুনাফার।
আমাদের দেশে কৃষিকাজে খরচ বেশি, মুনাফা কম। মূল্যস্ফীতির চাপও গ্রামেই বেশি, এতে নাকাল অবস্থায় কৃষক। তাদের চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব। মাঠে তাদের সাপে ছোবল দেয়, বজ্রপাতেও মারা যায়। কিন্তু তার কোনো প্রতিবিধান সচরাচর হয় না। সরকারি সাহায্য-সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের হিস্যা কম। বাংলাদেশের একজন কৃষক বছরে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি পায় মাত্র ৯০০ টাকা। চীনে এর পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বলিভিয়ায় কৃষকপ্রতি ভর্তুকির পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এ বঞ্চনার কথা সবার অনুধাবন করা দরকার। বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা দরকার আমাদের গরিব ও নিরীহ কৃষকদের।
সরকার যদি খাদ্য সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেয়, তাহলে তা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হবে। সরকারি গুদামগুলোতে কৃষক ধান বিক্রি করতে গেলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ধানের আর্দ্রতা নিয়ে। কৃষকের বড় অংশ সাধারণত ভেজা ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সরকার ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে তা কিনতে চায় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের দাম ঠিক করা যেতে পারে।
সরকার চালকলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ধান সেখানে ভাঙাতে পারে। দেশের বেশির ভাগ বড় চালকলে ধান শুকানোর আধুনিক ব্যবস্থা আছে। ধানের আর্দ্রতা বেশি হলে চালকল মালিক দ্রুত তা সরকারি গুদাম থেকে নিয়ে যাবেন। আর আর্দ্রতা কম থাকলে সরকার তা গুদামে রেখে দিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করবে।
কৃষকের কাছ থেকে ধান সরাসরি কিনতে পারলে সেটা খুবই ভালো কাজ হবে। তাহলে কৃষক দাম পাবেন। কিন্তু তার আগে এত ধান, এত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার মতো অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলেও বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে হবে।
লেখখ : ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, কৃষি অর্থনীতিবিদ