সরকারি খরচ কমানো নিয়ে একটা মজার গল্প বলি। ৩০ বছর সরকারি চাকরি করেছি। আর এই দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছুই দেখেছি। আমাদের অফিসে এমন অনেক সহকর্মী ছিলেন, যাঁরা সারা দিন চিন্তা করতেন কীভাবে সরকারের বাড়তি খরচ কমানো যায়।

সেনাবাহিনীতে তো এটা ছিল রোজকার রুটিন কাজ। পরে যখন সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে বেসরকারি অফিসে কাজ করার সুযোগ পেলাম, সেখানেও দেখলাম খরচের একটা নিজস্ব ট্র্যাকার আছে। এটা ছিল একটা অসাধারণ সিস্টেম, যেখানে প্রতিটি বিভাগের সব রকম খরচ, সেভিং আর ভবিষ্যৎ প্ল্যান একসঙ্গে দেখা যেত।

এখন ইলন মাস্কের ডোজ ট্র্যাকার দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। এটা একটি ডিজিটাল ট্র্যাকার, যার নাম ‘ডোজ ক্লক’। ইলন মাস্কের নেতৃত্বে চলা ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি (ডোজ) নামের সংস্থা কত টাকা বাঁচাতে পারছে, সেটি এই ট্র্যাকার দেখায়।

এ লেখা যখন লিখছি তখনকার হিসাব অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত ৪৬ বিলিয়ন ডলার বাঁচানো গেছে। ডোজের কাজ শেষ করতে এখনো ৫০৫ দিন বাকি। এই কাজে প্রত্যেক ট্যাক্সপেয়ার এখন পর্যন্ত ৩০৪ ডলার বাঁচিয়েছেন। পাশাপাশি, লক্ষ্যের ২.

৫ শতাংশ পূরণ হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তাঁদের টার্গেট হচ্ছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার কমানো।

এই ডোজ ক্লকটা আসলে একটা কমিউনিটি মিম প্রজেক্ট—মানে সরকারি সংস্থার সঙ্গে এর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এর কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডোজ ক্লকের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায়, সরকারের নতুন নিয়মকানুন চালু হওয়ার পর ট্যাক্সপেয়াররা কত টাকা বাঁচাতে পারবেন, সেটা এখানে হিসাব করা হয়।

আমার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সরকারি খরচ কমানো সব সময়ই একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে এই ডোজ ক্লকের মতো টুল থাকায় এই কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন যে কেউ রিয়েল টাইমে দেখতে পারছে কীভাবে সরকারি খরচ কমছে, কোথায় কমছে, আর এর ফলে ট্যাক্সপেয়াররা কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এটা একটা বড় অর্জন।

শুধু তাই নয়, ডোজ কতগুলো নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, মোট কত টাকা বাঁচানো গেছে, আর ট্যাক্সপেয়াররা কত টাকা বাঁচাতে পারবেন—এই সব তথ্যও এখানে পাওয়া যায়।
একটা সহজ উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি একজন ট্যাক্সপেয়ার। আপনি জানতে চান, সরকারের নতুন নিয়মের কারণে আপনার কত টাকা বাঁচবে। এই ট্র্যাকারে গিয়ে আপনি সেটা সহজেই দেখতে পাবেন।

এ ছাড়া ২০২৬ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত কত দিন বাকি আছে সেটাও দেখা যায়। নিউজউইকের খবর অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বাঁচানোর টার্গেট নেওয়া হয়েছে।

সরকারি খরচ কমানো ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটা বড় লক্ষ্য। সে কারণেই প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ অর্ডার দিয়ে ডোজ তৈরি করা হয়েছে। এর দায়িত্বে আছেন ইলন মাস্ক। এই সংস্থার মূল কাজই হলো সরকারি খরচ কমানোর উপায় বের করা।

তবে মনে রাখবেন, এই ডোজ ক্লক সরকারি কোনো জিনিস নয়। এটি শুধু সরকারি খরচের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য তৈরি করা একটা কমিউনিটি প্রজেক্ট।

আমার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সরকারি খরচ কমানো সব সময়ই একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে এই ডোজ ক্লকের মতো টুল থাকায় এই কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন যে কেউ রিয়েল টাইমে দেখতে পারছে কীভাবে সরকারি খরচ কমছে, কোথায় কমছে, আর এর ফলে ট্যাক্সপেয়াররা কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এটা একটা বড় অর্জন।

আমাদের দেশে এটাও হবে একদিন। এই আশা করি।  

রকিবুল হাসান টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক লেখক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক কত ট ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা তরুণদের হাতে বাংলাদেশ তুলে দিতে চাই: জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা তোমার কোরআনের ভিত্তিতে একটা ইনসাফের মানবিক বাংলাদেশ চাই। যেখানে সবাই সবাইকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে। তুমি আমাদের সেই বাংলাদেশ দান করো।’’

তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘হে তরুণেরা তোমরা জেগে ওঠো। যে সমাজে তরুণরা জেগে ওঠে, সেই সমাজ আল্লাহ বদলায়ে দেন।’’

২৪ এর আন্দোলনকারীদের ‘স্যালুট’ জানিয় জামায়াতের আমির বলেন, ‘‘তোমরা জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের কারণে আল্লাহ আমাদের আপাতত মুক্ত করেছেন। এবার চিরমুক্তির জন্য জেগে ওঠো। শপথ নাও, বাংলাদেশকে কোরআনের আলোকে গড়বই ইনশাআল্লাহ। চুল পাকা, দাঁড়ি পাকা আমিও তোমাদের সঙ্গে সামনের কাতারে থাকব।’’

তিনি বলেন, ‘‘তরুণেরা আমাদের স্বপ্ন। আমরা আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই।’’

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, ‘‘অতীতে সোনার বাংলা কায়েম করতে গিয়ে শ্মশান বাংলা কায়েম করা হয়েছে। কোরআনই একমাত্র সোনার বাংলার গ্যারান্টি দিতে পারে, আর কিছু দিতে পারবে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘যারা কোরআন সহ্য করতে পারেন না, তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই। এই দেশের আপামর জনতা বাঁচতে চায় কোরআন বুকে নিয়ে, মরতে চায় কোরান বুকে নিয়ে; আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চায় কোরআন বুকে নিয়ে। আমাদের কোরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘দেশে যতগুলো ইসলামী দল আছে, তাকিয়ে দেখুন- ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো নেতাকর্মী কারো ওপর জুলুম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করেছে? উত্তরা না। এর কারণ তারা কোরআনকে সম্মান করে এবং বুকে ধারণ করে। তারা আল্লাহকে ভয় করেন। যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, তারা জুলুম করতে পারে না। তারা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দেখে।’’

জেলা জামায়াতের আমির মাস্টার রুহুল আমিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও মো. ফারুক হোসাইন নুর নবীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, শাহজাহান চৌধুরী, ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান প্রমুখ।

দীর্ঘ ২৮ বছর পরে লক্ষ্মীপুরে খোলা ময়দানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে, ১৯৯৬ সালে লক্ষ্মীপুরে খোলা ময়দানে জামায়াতের সমাবেশ হয়।

ঢাকা/লিটন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ