গরুর ধান খাওয়া নিয়ে সকাল থেকে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ৪০
Published: 16th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে গরুর ধান খাওয়া নিয়ে দুদল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার আস্তমা ও কামরুপদলং গ্রামবাসীর মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুরতর আহত দুইজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, এবং অন্যদের সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে শনিবার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জেরে সকাল থেকে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে দুপক্ষের ৪০ জন আহত হয়।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, মারামারির আঘাত নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে এসেছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি আকরাম আলী বললেন, দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ঘর ষ স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে স্থাপনা-বেড়া নির্মাণে যৌথ পরিদর্শন-দলিলের সিদ্ধান্ত
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪ দিনব্যাপী (১৭-২০ ফেব্রুয়ারি) ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, হত্যা, আহত বা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও আগাম গোয়েন্দা তথ্য একে অপরের মধ্যে আদান-প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। অপর দিকে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশসহ হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি জোর আহ্বান জানান। এ ছাড়া আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সীমান্তে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ এবং পূর্বাভাস না দিয়ে বাংলাদেশের উজানে বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়। তাছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ, স্বর্ণসহ অন্যান্য দ্রব্যের চোরাচালান রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ এবং সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক মানুষের জীবন ও মানবাধিকার চেতনার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে সীমান্তে হত্যা নিরসনে বিএসএফ কর্তৃক ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি মাদক পাচার, চোরাচালান রোধসহ সীমান্তে শান্তির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, এমন যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনে যেসব বিষয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ একমত হয়েছে সেগুলো হলো
১. সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো/হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও আগাম গোয়েন্দা তথ্য একে অপরের মধ্যে আদান-প্রদান, সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং সীমান্তে যে কোনো হত্যা সংঘটিত হলে তার যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
২. আলোচনায় সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোন স্থাপনা, কাঁটাতারের বেড়া, প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হয় এমন কোনো স্থাপনা বা বাংকার নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শক দলের পরিদর্শন এবং যৌথ আলোচনার দলিল (জেআরডি) এর ভিত্তিতে নির্মাণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজগুলোর ব্যাপারে যথোপযুক্ত পর্যায়ে জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হয়।
৩. বিভিন্ন ধরনের আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমন বিশেষ করে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও গবাদিপশু পাচার রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধ এবং এসব অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছে।
৪. আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিক ও বাহিনীর সদস্যদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের ফলে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্তে উভয় বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
৫. মানবপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বিশেষ করে মানবপাচারের মত অমানবিক কার্ক্রমের সাথে জড়িত উভয় দেশের অপরাধী বা দালালচক্রের কার্যক্রম প্রতিরোধে পরস্পরকে সহায়তা এবং মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচলিত দেশের আইন অনুযায়ী উদ্ধার ও পুনর্বাসনে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছেন।
৬. এছাড়া আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন; জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সাথে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ; আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
৭. উভয়পক্ষ ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) এর আওতায় পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে উভয় বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। উভয়পক্ষ আগামী দিনে যৌথ খেলাধুলা ও জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনিসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছে।
বিএইচ