অভ্যুত্থানে আহতদের সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ
Published: 16th, February 2025 GMT
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তারুণ্যের অবদানের স্মরণে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় আহত ছাত্রদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে পরিষদের এনেক্স ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলি নোমান, সদস্য দেবপ্রসাদ দেওয়ানসহ পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য মিনহাজ মুরশীদ।
আহতদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন লংগদু উপজেলার মো.
আরো পড়ুন:
সাজেকে ঢল নেমেছে পর্যটকদের, খালি নেই রিসোর্ট
‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা আয়নাঘরে বন্দি’
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থানে আহতদের জন্য কিছু করতে পেরে আমরা সত্যিই খুব গর্বিত। হয়ত খুব বেশি কিছু করতে পারিনি, কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের পক্ষ থেকে আরো কিছু করার চেষ্টা থাকবে।’’
অনুষ্ঠানে মোট আট জন আহত ছাত্রকে সংবর্ধনা ও নগদ অর্থের চেক তুলে দেন অতিথিরা। যার মধ্যে দুইজনকে জনপ্রতি ১ লাখ টাকা, তিনজনকে জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা এবং তিনজনকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
ঢাকা/শংকর/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন আহতদ র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্লাইমেক্সের দিকে যাচ্ছে?
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতোমধ্যে নতুন বাঁক নিয়েছে, নির্দ্বিধায় বলা যায়। একদিকে নির্বাচন ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মূল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মেরূকরণ স্পষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের অনুসারী ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এমনকি ‘নিরপেক্ষ’ অন্তর্বর্তী সরকারও মূল অংশীজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে থাকলে তিনি শক্তি পান। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাতে কান না দিয়ে বরং অভিযোগ করছে– সরকার বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দলের দিকে হেলে পড়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখ ছিল শিক্ষার্থীরা– সন্দেহ নেই। তবে এর মূল শক্তি ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে নানাজন এ নিয়ে লিখেছেন বা বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে পরিষ্কার উঠে এসেছে, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কে কীভাবে ওই আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলনে হতাহতদের মধ্যে তাদের নেতাকর্মীর সংখ্যাও সেটা প্রমাণ করে। আন্দোলন পরিচালনাকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও স্বীকার করেছেন, এটি ছিল মূলত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি ছাতা সংগঠন, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছিল। তাদের ভাষায়, অভ্যুত্থানের পর এর দলীয় সদস্যরা নিজ নিজ সংগঠনে ফেরত গেছেন। যারা রয়ে গেছেন তাদের নিয়েই এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও শাখা কমিটিগুলো গঠিত হচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হলেও এদের প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বতন্ত্র অভিলাষ ও পরিকল্পনা ছিল। অভিন্ন শত্রুর অনুপস্থিতিতে এরা সেগুলো বাস্তবায়নে সক্রিয় হবে– এটিই স্বাভাবিক। এ কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও এর সময়সীমা, এমনকি প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
বিএনপি যেখানে বলছে, কেবল নির্বাচন সংক্রান্ত ‘জরুরি’ সংস্কারগুলো করেই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে; সেখানে জামায়াত নির্বাচনের আগে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। জামায়াত এও বলছে, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য নেতাদের বিচারও নির্বাচনের আগে শেষ করতে হবে। এসব দাবি স্পষ্টত বিএনপির দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ গুরুত্বপূর্ণ বলেই রাষ্ট্র সংস্কার যেমন সময়সাপেক্ষ বিষয়, তেমনি হত্যাকাণ্ডের বিচারও– অন্তত প্রচলিত বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে দীর্ঘ সময় দাবি করে।
আরেক দিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ বলে পরিচিত ছাত্রনেতারা নিজস্ব দল গঠনে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তারা অন্য রাজনৈতিক দলের মতো নিজস্ব ছাত্র সংগঠন গঠনেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। উপরন্তু, খোদ প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, দল গঠনে তিনিই তাদের ভরসা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর সরকারের তিন উপদেষ্টাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ওই দল গঠনে জড়িয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়; এই ছাত্রনেতারা গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব থেকে বিএনপিকে বঞ্চিত করারও একটি প্রচ্ছন্ন চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি তারা ও জামায়াত সমস্বরে দাবি তুলেছেন, নির্বাচন যদি দ্রুত হতেই হয়, তা হতে হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, বিএনপি যার ঘোর বিরোধী। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি হলো সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার সঙ্গে ছাত্রনেতাদের প্রস্তাবিত দলকে ভিত্তি গাড়তে সহযোগিতার কৌশল।
মজার বিষয়, ছাত্রনেতাদের মধ্যে নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে যে অন্তঃবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ছাত্রশিবিরের নামও জড়িয়েছে। এটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত, প্রকাশ্যে কাজ করার পাশাপাশি জামায়াত নানা দলেও গোপনে সক্রিয় থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এ ধারণা বিএনপির মধ্যেও একভাবে চাউর হয়েছে– জামায়াতের ইন্ধনে ছাত্রনেতারা বিএনপিকে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন; যার মধ্যে সরকারেরও হাত থাকা বিচিত্র কিছু নয়।
স্মরণ করা যেতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন হঠাৎ রাষ্ট্রপতির অপসারণের জন্য সরকারকে চাপ দেন, তখন বিএনপি দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। তাদের যুক্তি ছিল, নির্বাচন দেরি করার কৌশল ছাড়া এটা কিছু নয়। এর পর ডিসেম্বরে ছাত্রদের জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান ছুড়ে ফেলার কর্মসূচিও বিএনপির বিরোধিতার মুখে পণ্ড হয়ে যায়। জামায়াত নেতারা ওই দুই ইস্যুতে তাদের চিরাচরিত স্বভাব অনুসারে মাঝামাঝি অবস্থান নিলেও ইদানীং নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে ছাত্রনেতাদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন।
এতদিন নানা ইস্যুতে আপাতনিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও সরকার যেন তা ধরে রাখতে পারছে না। বিশেষত সর্বশেষ জাতীয় ঐক্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটি নানা ভাবনা উস্কে দেয়। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো কে কতটুকু সংস্কার চায়, তা তিনি ওয়েবসাইটে দিয়ে জাতির সামনে সবার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। কথাটির মধ্যে প্রচ্ছন্ন হুমকি আছে এবং এর প্রধান লক্ষ্যবস্তু যে বিএনপি, তা পর্যবেক্ষকদের মতো বিএনপি নেতাদেরও সম্ভবত বুঝতে কষ্ট হয়নি। সম্ভবত এ কারণেই এ প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার যশোরের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি’ (সমকাল)। তিনি এমনও বলেছেন, দল করতে চাইলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।
বলা দরকার, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বাম রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিরাও ছিলেন। এমন মতও আছে, তাদেরই কারণে আন্দোলনে ‘সেক্যুলার ফ্লেভার’ যুক্ত হয়, যা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মাঝে আন্দোলনটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। এটিও বলা দরকার, তাদের বেশির ভাগ নিজস্ব অবস্থান থেকে লড়াই করেছেন; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা আন্দোলনের মূল কাঠামোতে জড়াননি। সম্ভবত সে কারণে সরকারে তাদের প্রভাব তেমন নেই। তবে মাঠে বিশেষ করে নির্বাচনসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত বিষয়ে যেভাবে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি ও অন্যান্য বামশক্তি ধারাবাহিক বক্তব্য ও কর্মসূচি দিয়ে চলেছে, তার একটি রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। অন্তত সরকারের ওপর নির্বাচন বিষয়ে চাপ তৈরিতে তা ভূমিকা রাখছে।
সব কিছু মিলিয়ে যদি বলা হয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্লাইমেক্স বা চরমক্ষণের দিকে দ্রুত এগোচ্ছে, তাহলে হয়তো ভুল হবে না। বিশেষত মঙ্গলবার খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটল, তাতেও এ ধারণা পোক্ত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে যে মেরূকরণ ঘটেছে, মূলত তারই প্রতিফলন কুয়েটের ঘটনা।
আমার ধারণা, জাতীয় নির্বাচনটি এ বছরই হবে কিনা– মার্চ-এপ্রিলেই তা পরিষ্কার হবে। যদিও বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করছে বিএনপি তার বর্তমান অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবে, তার ওপর। যদি অন্যথা হয়, সেটিও নতুন রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাবে, যা দুর্ভাগ্যজনক হলেও চলমান অরাজকতাকে দীর্ঘমেয়াদি করবে।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল