লবণের দ্বীপে যেভাবে তরমুজ ফলিয়ে সফল কুলসুমা
Published: 16th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের সাগর দ্বীপ কুতুবদিয়ার সব খানে এখন লবণ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। কিছু জমিতে চলছে বোরো চাষ। এর মধ্যে মাত্র ১৪ হেক্টর জমিতে ঝুঁকি নিয়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ১৭ জন চাষি।
বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপটির একসময় আয়তন ছিল ৯৯ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এখন দ্বীপের আয়তন ২৭ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। পেশা হারিয়ে গত তিন দশকে দ্বীপ ছেড়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। লবণ চাষের মহা ধুমধামের মধ্যে ১৭ জন চাষি ঝুঁকি নিয়ে তরমুজ চাষ করে ভাগ্যবদলের ঘটনা মানুষের নজর কাড়ছে। প্রেরণা জোগাচ্ছে উদ্যোগী কৃষাণী কুলসুমা বেগমের গল্প।
উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের পুতিন্যারপাড়ায় কুলসুমার বাড়ি। সারা উপজেলায় লবণ চাষ হলেও সেখানকার ৫০০-৬০০ একর জমিতে ধানের চাষ হয়। কুলসুমার স্বামী মো.
সম্প্রতি পুতিন্যা পাড়ায় ধান চাষের জমির মাঝে কুলসুমার ২ কানি শীতকালীন তরমুজের জমি। এলাকায় বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কুষকেরা। আর কুলসুমাকে দেখা গেল, নারী শ্রমিকদের নিয়ে খেতের তরমুজ তুলছেন। এই তরমুজ পাইকারের কাছে নিয়ে বিক্রি করেন তাঁর স্বামী মো. শাহাদাত কবির।
তরমুজ খেতে বসে কথা হয় কুলসুমা বেগমের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবারও তিনি ৮০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাছে আরও ৩০ হাজার টাকার মতো তরমুজ আছে। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে খেতের তরমুজ বিক্রি করে এবার লাভ হচ্ছে দুই লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমির তরমুজের ওজন ছিল ২ থেকে ৪ কেজি। এসব তরমুজের প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৩০০-৬০০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতে তিনি ১৭ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি করেন ১ হাজার ৭০০ টাকায়।
কুতুবদিয়ায় এখন লবণ উৎপাদনের ধুম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এলাকায় পানির তীব্র সংকট চলছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে কিছু জমিতে চলছে বোরো চাষ। তবে লবণাক্ততার কারণে বোরো ধানের উৎপাদন কমছে। গ্রামগুলোর পশ্চিম পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ। বাঁধের কিছু অংশ ভাঙাচোরা। শীতকালে বঙ্গোপসাগর শান্ত থাকায় চাষিরা কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকেন। কিন্তু বর্ষাকালে সাগর উত্তাল হলে বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে চাষিদের ধান ও ফসলের জমি সয়লাব হয়। ফসল হারিয়ে তখন চাষিরা পথে বসেন। শাকসবজি-ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বসাতে হয় গভীর নলকূপ। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন আলী আকবরডেইলের ১৭ জন চাষি। তবে তাদের মধ্যে সব চেয়ে সফল বলতে হয় কুলসুমাকে।
কুলসুমার পাশে দুই কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন স্থানীয় চাষি মোহাম্মদ আজম। তবে কুলসুমার মতো এতটা সাফল্য পাননি তিনি। কারণ তার জমিতে লবণাক্ততা কিছুটা বেশি। এ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, লবণাক্ততার কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে তাঁর খেতে এবার তরমুজের উৎপাদন কমে গেছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কুতুবদিয়ার তরমুজ মিষ্টি এবং ভালো। শীতকালে দেশের অন্যান্য এলাকায় যখন কুয়াশা থাকে, কুতুবদিয়ায় তখন ঝলমলে রোদ পাওয়া যায়। রোদের কারণেই তরমুজ ভালো হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তরম জ ব ক র ক লস ম র র তরম জ তরম জ র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধ’ স্লোগান, আটক ৩
স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধ’ স্লোগান দিয়ে ‘পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টার’ অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের ভেতর থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের মহাসচিব সিরাজগঞ্জ জেলার সেলিম রেজা (৪৭), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম (৫০) ও আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজীরচট সোহেল পারভেজ (৪১)।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান কয়েকজন। এ সময় তারা হাতে লাল পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে উপস্থিত জনতা তাদের ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগ সন্দেহে ওই তিনজনকে আটক করে।
ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিনুর কবির বলেন, উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছিল কয়েকজন। এ সময় তিনজনকে আটক করে আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।